কোরবানি ঈদের দেরি নেই। একেবারে হাতেগোনা ক’টা দিন। এর মধ্যেই বাড়ির মা-খালাদের নিশ্চয়ই কোরবানির মাংস কতটা রান্না হবে, আর কতটা সংরক্ষণ হবে সেসব নিয়ে চিন্তা শুরু হয়ে গেছে। সবাইকে কোরবানির মাংস বিলিয়ে দেওয়ার পরও নিজেদের ভাগে যা থাকে, নেহাত একেবারে কম তো নয়! আবার সবার বাসায় আলাদা করে ডিপ ফ্রিজও থাকে না।
এজন্যই মাংসগুলো ঠিকঠাক সংরক্ষণ করতে পারাটা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
এখানে কোরবানির মাংস সংরক্ষণের কিছু দারুণ উপায় আলোচনা করা হলো।
১. ফ্রিজিং
মাংস সংরক্ষণের সবচেয়ে সহজ ও জনপ্রিয় উপায় হলো ফ্রিজিং।
পদ্ধতি: প্রথমে মাংস ভালোভাবে ধুয়ে নিন। পানি ঝরিয়ে মাংসের ছোট ছোট টুকরো করুন। পলিথিন ব্যাগ বা এয়ারটাইট কনটেইনারে রেখে ফ্রিজে রাখুন। মাংস -১৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস বা তার নিচে রাখুন। এভাবে সংরক্ষণ করলে মাংস ছয় মাস থেকে এক বছর পর্যন্ত ভালো থাকে।
২. আচারের মাধ্যমে সংরক্ষণ
মাংসের আচার বানানো হলে মাংস দীর্ঘ সময় পর্যন্ত খাওয়া যায় এবং এর স্বাদও অন্যরকম হয়।
পদ্ধতি: প্রথমে মাংসের টুকরোগুলো ভালো করে ধুয়ে পানি ঝরিয়ে নিন। পছন্দমতো মসলা দিয়ে মাংস মাখিয়ে নিন। তেল গরম করে মাংসের টুকরোগুলো ভেজে নিন। ভাজা মাংস ঠান্ডা হলে কাচের জারে রেখে তাতে সরিষার তেল ঢেলে দিন, যাতে মাংস ডুবে থাকে। আচার প্রস্তুত হয়ে গেলে এটি ঠান্ডা স্থানে রেখে সংরক্ষণ করুন। এভাবে আচার ছয় মাস পর্যন্ত ভালো থাকে।
৩. শুঁটকি করে সংরক্ষণ
মাংস শুকিয়ে শুঁটকি বানিয়ে সংরক্ষণ করা যায়। এটি এক ধরনের প্রাচীন পদ্ধতি, যা এখনও প্রচলিত আছে।
পদ্ধতি: প্রথমে মাংস পাতলা ও লম্বা করে কেটে নিন। মাংসের টুকরোগুলো মসলা দিয়ে মাখিয়ে রোদে শুকিয়ে নিন। মাংস পুরোপুরি শুকিয়ে গেলে এয়ারটাইট কনটেইনারে সংরক্ষণ করুন। শুঁটকি মাংস সাধারণত ছয় মাস পর্যন্ত ভালো থাকে।
৪. ক্যানিং
ক্যানিং পদ্ধতিতে মাংস সংরক্ষণ করলে দীর্ঘ সময় পর্যন্ত তা ভালো থাকে।
পদ্ধতি: প্রথমে মাংস ছোট ছোট টুকরো করে নিন। কাচের ক্যান বা জারে মাংস রেখে প্রিজারভেটিভ মিশ্রিত পানি বা তেল দিয়ে ভরে দিন। ক্যানের ঢাকনা ভালো করে বন্ধ করে দিন এবং একটি বড় পাত্রে ফুটন্ত পানিতে ৩০-৪০ মিনিট সেদ্ধ করুন। ঠান্ডা হলে ক্যান বা জার ঠান্ডা স্থানে সংরক্ষণ করুন।
৫. সসেজ তৈরি করে সংরক্ষণ
মাংসের সসেজ বিভিন্ন রান্নায় ব্যবহার করা যায় এবং এটি সংরক্ষণ করাও সহজ।
পদ্ধতি: প্রথমে মাংস কিমা করে নিন। মসলা ও প্রিজারভেটিভ মিশিয়ে মাংস মেখে নিন। সসেজের খোল তৈরি করে তাতে মিশ্রণটি ভরে দিন। সসেজগুলো ফ্রিজে রাখুন অথবা কড়া রোদে টানা কয়েক দিন শুকিয়ে বাইরে ঝুলিয়ে রাখুন। এভাবে সসেজ তিন-চার মাস পর্যন্ত ভালো থাকে।
৬. স্মোকিং
এই প্রাচীন পদ্ধতিতে মাংসের ভেতরে থাকা আর্দ্রতা কমিয়ে দেওয়া হয় এবং মাংসে ধোঁয়ার সুবাস মিশ্রিত করা হয়।
পদ্ধতি: মাংসের টুকরোগুলো ধুয়ে পানি ঝরিয়ে নিন। মাংসের টুকরোগুলোকে লবণ এবং পছন্দের মসলা দিয়ে মেখে কিছু সময় রেখে দিন; যাতে মসলা মাংসের ভেতরে ঢুকে যায়।
এর পর স্মোকার মেশিনে মাংস রেখে কম তাপে ধীরে ধীরে ধোঁয়ায় শুকিয়ে নিন। এ প্রক্রিয়া কয়েক ঘণ্টা থেকে কয়েক দিন পর্যন্ত সময় নিতে পারে। স্মোক করা মাংস এয়ারটাইট কনটেইনারে রেখে ঠান্ডা স্থানে সংরক্ষণ করুন। এভাবে স্মোক করা মাংস তিন থেকে ছয় মাস পর্যন্ত ভালো থাকে।
আরও কিছু উপায় রয়েছে, যেগুলোর মাধ্যমে আপনি কোরবানির মাংস পাঁচ থেকে সাত দিন পর্যন্ত ভালো রাখতে পারবেন। যেমন– ভিনেগারে ডুবিয়ে রেখে, বেশি লবণ মাখিয়ে, বিশেষ কিছু ভেষজ ও স্পাইস মাখিয়ে, মাংস ভালো করে ভেজে ইত্যাদি। সঠিকভাবে সংরক্ষণ করা হলে মাংসের পুষ্টিগুণ এবং স্বাদ দুটিই অক্ষুণ্ন থাকে। এ সঠিক উপায়গুলো যেহেতু আজ পেয়েই গেছেন, এবার কোরবানির মাংস কীভাবে সংরক্ষণ করবেন সেই টেনশন বাদ দিন। ঈদের আমেজে নিজেকে পুরোটাই মাতিয়ে রাখুন।