ব্যক্তি বিনিয়োগকারীদের ৫০ লাখ টাকার বেশি মূলধনি মুনাফার ওপর করের বোঝা পুঁজিবাজারে নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে বলে শঙ্কা প্রকাশ করেছে তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলোর সংগঠন বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব পাবলিকলি লিস্টেড কোম্পানিজ (বিএপিএলসি)। প্রস্তাবিত ২০২৪-২৫ অর্থবছরে বাজেটে এ করারোপের প্রস্তাব প্রত্যাহারের দাবি জানিয়েছে সংগঠনটি। এছাড়া সংগঠনটি অর্থনৈতিক অঞ্চল ও হাই-টেক পার্কে কর সুবিধা, ঠিকাদারি ব্যবসায় উৎসে কর কর্তন, প্রাইভেট প্রভিডেন্ট ফান্ড, গ্র্যাচুইটি ফান্ড, সুপার অ্যানুয়েশন ফান্ড, পেনশন ফান্ডের ওপর কর ও করদাতাদের জন্য রেট্রোস্পেকটিভ কর ইস্যুতেও গতকাল প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে।
সংগঠনটি জানিয়েছে, ২০১০ সাল থেকে উদ্যোক্তা শেয়ারহোল্ডার/ব্যাংকের পরিচালক, আর্থিক প্রতিষ্ঠান, মার্চেন্ট ব্যাংক, ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি, লিজিং কোম্পানি, পোর্টফোলিও ম্যানেজমেন্ট কোম্পানি, স্টক ডিলার বা স্টক ব্রোকার কোম্পানি, পরিশোধিত মূলধনের ১০ শতাংশ ও তার বেশি শেয়ারধারী ব্যতীত সব ধরনের বিনিয়োগকারী করের আওতামুক্ত ছিল। বর্তমানে পুঁজিবাজারে মন্দা অবস্থা বিরাজ করছে। করারোপের এ সিদ্ধান্ত বিনিয়োগ করতে বিনিয়োগকারীদের আরো নিরুৎসাহিত করতে পারে। যদিও সরকার তার রাজস্ব বৃদ্ধির লক্ষ্যে এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে। বাজারের পরিস্থিতি ও বিনিয়োগ কার্যক্রমের সম্ভাব্য নেতিবাচক প্রভাবগুলো সতর্কতার সঙ্গে বিবেচনা করতে হবে।
বিএপিএলসি জানায়, ৫০ লাখ টাকার অধিক মূলধনি মুনাফার ওপর করারোপের প্রধান চ্যালেঞ্জ হলো ব্যক্তি বিনিয়োগকারীদের এখন নিয়মিত হারে কর দিতে হবে, যা কোম্পানি করদাতাদের ১০ শতাংশ মূলধনি মুনাফার করের চেয়ে বেশি। এমনকি প্রস্তাবে বিনিয়োগকারীরা কীভাবে কর ও বিনিয়োগ কৌশলের পরিকল্পনার চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করবেন তা স্পষ্ট করা হয়নি। একটি সুন্দর ও আকর্ষণীয় বিনিয়োগ পরিবেশের জন্য ব্যক্তি করদাতাদের ৫০ লাখ টাকার বেশি মূলধনি আয়ের ওপর করারোপের প্রস্তাব প্রত্যাহারের সুপারিশ করছে বিএপিএলসি। এছাড়া ব্যক্তি বিনিয়োগকারীদের মধ্যে নিশ্চয়তা ও আস্থা নিশ্চিত করার জন্য মূলধনি ক্ষতির বিষয়ে স্পষ্ট নির্দেশিকা থাকা উচিত।
বাজেট প্রস্তাব অনুযায়ী, বেসরকারি অর্থনৈতিক অঞ্চল ও হাই-টেক পার্কের ১০ বছরের কর অবকাশ সুবিধা আর থাকছে না। নতুন অর্থবছরের বাজেটে সরকারি অর্থনৈতিক অঞ্চলে ১০ বছরের কর অবকাশ সুবিধা থাকবে। এ বিষয়ে সংগঠনটি জানিয়েছে, অর্থনৈতিক অঞ্চল ও হাই-টেক পার্ক থেকে কর সুবিধা প্রত্যাহার খাতভিত্তিক প্রবৃদ্ধিতে নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে। এতে অর্থনৈতিক অঞ্চলগুলো অভ্যন্তরীণ ও প্রত্যক্ষ বিদেশী বিনিয়োগ (এফডিআই) আকর্ষণে ব্যর্থ হবে। নেতিবাচক প্রভাব কমাতে ক্রমান্বয়ে কর পরিকল্পনা বাস্তবায়ন, বিকল্প প্রণোদনা ও অংশীজনদের সম্পৃক্ত করে পরিকল্পিত পদ্ধতি গ্রহণ করতে হবে। দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ও উন্নয়ন টেকসই করার লক্ষ্যে বিনিয়োগের অনুকূল পরিবেশ বজায় রাখার জন্য যা অপরিহার্য।
২০২৪-২৫ অর্থবছরে ঠিকাদারি ব্যবসায় ৭ শতাংশ হারে উৎসে কর কর্তনের প্রস্তাব দেয়া হয়েছে। বর্তমানে ঠিকাদারের আয়ের ওপর এ হার ৩-৭ শতাংশ। বিএপিএলসি জানায়, প্রস্তাবিত বাজেটে উৎসে কর কর্তন নিম্ন আয় স্তরের ঠিকাদারদের প্রভাবিত করতে পারে। এতে আর্থিক ভার বাড়তে পারে এবং ছোট আকারের ঠিকাদারদের এ ব্যবসায় আসতে নিরুৎসাহিত করতে পারে। তাই ন্যায্যতা বজায় রাখতে এবং ছোট ঠিকাদারদের সমর্থনে বর্তমানে যে হার আছে, তা বজায় রাখার সুপারিশ করা হচ্ছে।
সরকারি চাকরিজীবীদের জন্য প্রভিডেন্ট ফান্ড থেকে অর্জিত আয়ে কর না থাকলেও বেসরকারি খাতের চাকরিজীবীদের জন্য এ করহার ১৫ শতাংশ। তালিকাভুক্ত কোম্পানিটির সংগঠনটি জানিয়েছে, প্রভিডেন্ট ফান্ডের ওপর এ কর করনীতিতে বৈষম্য তৈরি করেছে এবং একই দেশে দুই নীতি গ্রহণ করা হচ্ছে। সরকারি ও বেসরকারি দুই খাতের চাকরিজীবীদের জন্য করারোপ পদ্ধতির ক্ষেত্রে সমতা, স্বচ্ছতা ও আস্থা প্রয়োজন। এসব বিবেচনায় সরকার অবসরকালীন সঞ্চয় ও আয়করের ক্ষেত্রে ভারসাম্যপূর্ণ ও ন্যায়সংগত পদ্ধতি গ্রহণ করতে পারে।