তিন মাসে শেয়ারের দাম ২২ টাকা বা ৫২ শতাংশ বৃদ্ধির পর প্রতিটি ১০ টাকা করে ৬৪ লাখ নতুন শেয়ার ইস্যুর ঘোষণা দিয়েছে শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানি সালভো কেমিক্যাল। কোম্পানিটি গতকাল বৃহস্পতিবার তাদের পরিচালনা পর্ষদের সভায় এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
কোম্পানিটি জানিয়েছে, বিদ্যমান উদ্যোক্তা-পরিচালকদের বিপরীতে কোম্পানিটি নতুন ৬৪ লাখ শেয়ার ইস্যু করে ৬ কোটি ৪০ লাখ টাকা মূলধন জোগান দেবে। উদ্যোক্তা-পরিচালকেরা প্রতিটি শেয়ার পাবেন ১০ টাকা অভিহিত মূল্য বা ফেসভ্যালুতে। ন্যূনতম শেয়ার ধারণের শর্ত পূরণে নতুন এ উদ্যোগ নিয়েছে কোম্পানিটি। প্রাইভেট প্লেসমেন্টের মাধ্যমে এ শেয়ার ইস্যু করা হবে।
কোম্পানিটির এ সিদ্ধান্ত কার্যকর হলে বাজারমূল্যের চেয়ে সাড়ে পাঁচ গুণ কম দামে নতুন করে ৬৪ লাখ শেয়ারের মালিক হবেন উদ্যোক্তা-পরিচালকেরা। এ সিদ্ধান্ত কার্যকর হলে বাজারে কোম্পানিটির শেয়ারসংখ্যা বাড়বে, তাতে শেয়ারের দামও সমন্বয় হবে। এর ফলে সাধারণ বিনিয়োগকারীরা ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে বলে মনে করছেন বাজারসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।
সিকিউরিটিজ আইন অনুযায়ী, শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলোর উদ্যোক্তা-পরিচালকদের সম্মিলিতভাবে সব সময় ওই কোম্পানির পরিশোধিত মূলধনের ন্যূনতম ৩০ শতাংশ শেয়ার ধারণ বাধ্যতামূলক। কিন্তু ২০১১ সালে শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত এ কোম্পানি আইনের এ ধারা লঙ্ঘন করেছে। বর্তমানে কোম্পানিটির উদ্যোক্তা-পরিচালকদের ধারণকৃত সম্মিলিত শেয়ারের পরিমাণ ২৫ দশমিক ১৫ শতাংশ। এখন সেই আইনের শর্তপূরণে শাস্তির বদলে বিশেষ সুবিধা পাচ্ছেন কোম্পানিটির উদ্যোক্তা-পরিচালকেরা।
কোম্পানিটি জানিয়েছে, ন্যূনতম শেয়ার ধারণের শর্ত পূরণে বেশ কিছু পন্থা বেঁধে দেয় পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)। সেখানে বলা হয়, কয়েকটি পন্থায় মূলধন বাড়াতে পারবে ন্যূনতম শেয়ার ধারণে ব্যর্থ কোম্পানিগুলো। তার মধ্যে রয়েছে নতুন করে শেয়ার ইস্যু করে বা বাজার থেকে শেয়ার কিনে। এর বাইরে বিদ্যমান উদ্যোক্তা-পরিচালকদের বাইরে যাঁদের হাতে কোম্পানিটির ২ শতাংশের বেশি শেয়ার রয়েছে, তাঁদের পর্ষদে অন্তর্ভুক্তির মাধ্যমে এ শর্ত পূরণ করতে পারবে কোম্পানিগুলো। বিএসইসির এসব শর্তের মধ্যে সালভো কেমিক্যাল বেছে নিয়েছে নতুন শেয়ার ইস্যুর পথ। কোম্পানিটি জানিয়েছে, বর্তমান উদ্যোক্তা পরিচালকেরা কোম্পানির যে ৬ কোটি ৪০ লাখ টাকা মূলধন জোগান দেবেন, তার মধ্যে ৪ কোটি ২০ লাখ টাকা কোম্পানিটির চলতি মূলধন হিসেবে ব্যবহার করা হবে। বাকি ২ কোটি ২০ লাখ টাকা দিয়ে কেনা হবে নতুন যন্ত্রপাতি।
এদিকে বেশ কিছুদিন ধরে শেয়ারবাজারে প্রচার ছিল, মূলধন বাড়াতে কোম্পানিটি নতুন শেয়ার ইস্যু করবে। এ খবরে এটির শেয়ারের বাজারমূল্যও বেড়েছে। প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) গত ২৫ জানুয়ারি সালভো কেমিক্যালের প্রতিটি শেয়ারের বাজারমূল্য ছিল ৪২ টাকা। ৬ মে তা বেড়ে সর্বোচ্চ ৬৪ টাকায় উঠে যায়। তাতে তিন মাসে কোম্পানিটির শেয়ারের বাজারমূল্য ২২ টাকা বা ৫২ শতাংশ বেড়েছে।
বাজারসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, শেয়ারবাজারে এমন ঘটনাও ঘটছে, উদ্যোক্তা-পরিচালকেরা বেনামে কম দামে শেয়ার কেনার পর মূলধন বাড়াতে নতুন শেয়ার ইস্যুর খবর বাজারে ছড়ানো হয়। তাতে শেয়ারের দাম বাড়ে। তারই একপর্যায়ে বেনামে কেনা কম দামের শেয়ার বিক্রি করে বড় অঙ্কের মুনাফা তুলে নেন। পরে সেই মুনাফার টাকা থেকে মূলধনের নামে নতুন ইস্যু করে কোম্পানিতে বিনিয়োগ করেন বিদ্যমান উদ্যোক্তা-পরিচালকেরা। সালভো কেমিক্যালের ক্ষেত্রেও এমনটি ঘটে থাকতে পারে বলে ধারণা করছেন বাজারসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।