1. [email protected] : শেয়ার সংবাদ প্রতিবেদক : শেয়ার সংবাদ প্রতিবেদক
  2. [email protected] : শেয়ারসংবাদ.কম : শেয়ারসংবাদ.কম
  3. [email protected] : Zahir Islam : Zahir Islam
  4. [email protected] : muzahid : muzahid
  5. [email protected] : nayan : nayan
  6. [email protected] : khadija : khadija khadija
শুক্রবার, ২৫ অক্টোবর ২০২৪, ১২:২২ পূর্বাহ্ন

সোনা কি রিজার্ভ মুদ্রা হয়ে উঠছে?

  • আপডেট সময় : রবিবার, ১৯ মে, ২০২৪

বিশ্বজুড়ে দ্রুত বাড়ছে সোনার দাম। কয়েক বছর ধরে মূল্যবান এই ধাতুর দাম অব্যাহতভাবে বাড়লেও এ বছর যেন লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে। শুধু জানুয়ারি থেকে এ পর্যন্ত আন্তর্জাতিক বাজারে সোনার দাম ৩৫০ ডলারের ওপরে বেড়েছে। গত শুক্রবার বিশ্ববাজারে সোনার দাম বেড়ে হয়েছে প্রতি আউন্স দুই হাজার ৪১৪ ডলার।

বিশ্লেষকরা বলছেন, সোনার দামের এ উত্থানকে ত্বরান্বিত করেছে বিশ্বজুড়ে যুদ্ধ, ভূরাজনৈতিক উত্তেজনা, যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতি নিয়ে শঙ্কা এবং কেন্দ্রীয় ব্যাংকগুলোর ব্যাপক ক্রয়। বিশেষত অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তায় ডলার ছেড়ে সোনায় ভরসা রাখতে চাইছে দেশগুলো। তাই কেন্দ্রীয় ব্যাংকগুলো সোনা ক্রয় বাড়িয়েছে ব্যাপকভাবে। টানা ১৪ বছর সোনা ক্রয় অব্যাহত রেখেছে বিশ্বের কেন্দ্রীয় ব্যাংকগুলো।

ফলে প্রশ্ন উঠেছে বৈশ্বিক রিজার্ভ মুদ্রা হিসেবে সোনা কি ডলারের বিকল্প হয়ে উঠেছে?
মার্কিন অর্থনীতি নিয়ে উদ্বেগ : বিশ্বজুড়ে অর্থনৈতিক সংকট, পাশাপাশি আমেরিকার অর্থনৈতিক ভঙ্গুরতা, যুদ্ধ ও ভূরাজনৈতিক উত্তেজনার জেরে মার্কিন ডলারে আস্থা কমেছে বিনিয়োগকারীদের। তাঁরা নিরাপদ সঞ্চয় খুঁজছেন, সেই স্থানটি দখল করে নিয়েছে সোনা। বিশেষত বিশ্বের কেন্দ্রীয় ব্যাংকগুলো যেখানে বাণিজ্যের জন্য ডলারের বিপুল মজুদ রাখত, তারাই এখন ডলার ছেড়ে সোনা কিনছে। ফিন্যানশিয়াল টাইমসের বিশ্লেষক হ্যারি ডেম্পসির মতে, বিশ্বের আর্থিক পরিস্থিতি এখন যেদিকে যাচ্ছে, তাতে দীর্ঘমেয়াদি নিরাপদ বিনিয়োগের মাধ্যম হিসেবে সোনাকেই বেছে নেওয়ার প্রবণতা দেখা যাচ্ছে।

যুক্তরাষ্ট্রের ট্রাজারি ডিপার্টমেন্টের তথ্য অনুযায়ী, দেশটির সরকারি ঋণ এরই মধ্যে ৩৪ ট্রিলিয়ন ডলার অতিক্রম করেছে। এমনকি এখন প্রতি ১০০ দিনে এক লাখ কোটি (এক ট্রিলিয়ন) ডলার সরকারি ঋণ বাড়ছে। বিপুল এই ঋণের কারণে আমেরিকার অর্থনীতি যেকোনো সময় অচল হয়ে পড়ার শঙ্কা রয়েছে। ফার্স্ট ইগল ইনভেস্টমেন্টের ম্যাক্স বেলমন্ট বলছেন, মার্কিন সরকারের আর্থিক পরিস্থিতি টেকসই হচ্ছে না বলে উদ্বেগ আছে। আর সে কারণে সোনার বাজার বেশ রমরমা।

ডলারে আস্থা কমছে : বিশ্বের সবচেয়ে বেশি রিজার্ভ ডলারে হলেও উন্নয়নশীল দেশগুলোতে ডলারের ওপর থেকে আস্থা কমছে। বিশ্ব রাজনীতির টালমাটাল অবস্থা, রাশিয়া-চীনের ওপর পশ্চিমা বিশ্বের নিষেধাজ্ঞার কারণে এসব দেশের সঙ্গে বাণিজ্যে জড়িয়ে থাকা দেশগুলোও লেনদেনের ক্ষেত্রে বিকল্প খুঁজছে। পরিস্থিতি আরো জটিল হয়েছে যুক্তরাষ্ট্র দেশটিতে থাকা রাশিয়ার রিজার্ভ বাজেয়াপ্ত করায়। এই অবস্থায় অন্যান্য দেশও ভাবছে, তারাও রাশিয়ার মতো ঝামেলায় পড়তে পারে যেকোনো সময়। এ কারণে এসব দেশ দ্বিমুখী প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। প্রথমত, এসব দেশ স্থানীয় বা নিজস্ব মুদ্রায় লেনদেনের পরিমাণ বাড়াচ্ছে এবং দ্বিতীয়ত সোনার মজুদ বাড়াচ্ছে।

যেমন—এপ্রিলের প্রথম সপ্তাহে ভারতের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ছিল ৬৪৮.৬ বিলিয়ন ডলার। একই সময় ৫৫.৮ বিলিয়ন ডলারের সমান পরিমাণ দেশটির সোনার মজুদ বেড়েছে। এ সময় মাত্র এক সপ্তাহের মধ্যে ভারত ১২৪ কোটি ডলারের সোনা কিনেছে। সব মিলিয়ে ভারতের সোনার মজুদ গত বছরের তুলনায় ১৩ টন বেড়েছে।

ওয়ার্ল্ড গোল্ড কাউন্সিলের তথ্য অনুযায়ী, ২০২১ সালে বিভিন্ন দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংক ও অন্যান্য প্রতিষ্ঠান মিলে ৪৫০.১ টন সোনা কিনেছিল। ২০২২ সালে তা বেড়ে দাঁড়ায় ১১৩৫.৭ টনে এবং ২০২৩ সালে দেশগুলোর সোনা কেনার পরিমাণ ছিল ১০৩৭ টন। সব মিলিয়ে বিগত বছরগুলোতে কেন্দ্রীয় ব্যাংকগুলোর সোনা কেনার নজিরবিহীন আকাঙ্ক্ষা ডলারের প্রতি আস্থাহীনতাই স্পষ্ট করছে।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকগুলো মজুদ বাড়াচ্ছে : ওয়ার্ল্ড গোল্ড কাউন্সিল বলছে, কেন্দ্রীয় ব্যাংকগুলো সোনার বিক্রেতা থেকে এখন ক্রেতা হয়ে উঠেছে। টানা ১৪ বছর সোনা ক্রয় অব্যাহত রেখেছে বিশ্বের কেন্দ্রীয় ব্যাংকগুলো। ২০২৩ সাল শেষে কেন্দ্রীয় ব্যাংকগুলোর কাছে সোনার মোট মজুদ দাঁড়িয়েছে ৩৬ হাজার ৭০০ টন। সংস্থার মতে, দুই কারণে কেন্দ্রীয় ব্যাংকগুলো সোনা কিনছে। সংকট সময়ের রক্ষাকবচ এবং দীর্ঘ সময় সোনার মূল্য ধরে রাখার সক্ষমতা।

২০২৪ সালের প্রথম প্রান্তিকে বিশ্বের কেন্দ্রীয় ব্যাংকগুলো মোট সোনা কিনেছে ২৯০ টন। সোনার মজুদ সবচেয়ে বেশি বাড়িয়েছে তুরস্কের কেন্দ্রীয় ব্যাংক ৩০.১২ টন, দ্বিতীয় সর্বোচ্চ বাড়িয়েছে চীনের কেন্দ্রীয় ব্যাংক ২৭.০৬ টন, তৃতীয় সর্বোচ্চ ভারত বাড়িয়েছে ১৮.৫১ টন, কাজাখস্তান বাড়িয়েছে ১৬.৩৯ টন, সিঙ্গাপুর বাড়িয়েছে ৬.৫৭ টন।

চাহিদার কারণে দামও বাড়ছে : বিগত কয়েক বছরে সোনার চাহিদা বাড়ার কারণে দামও বেড়েছে সমানতালে। ১৯৮৮ সালে প্রতি আউন্স সোনার দাম ছিল ৪৩৭ ডলার, ২০১৮ সালে তা বেড়ে দাঁড়ায় এক হাজার ২৬৮.৯৩ ডলারে অর্থাৎ এই সময় প্রতিবছর গড়ে সোনার দাম বেড়েছে ৩.৬১ শতাংশ হারে। কিন্তু ২০২৪ সালে এসে সোনার দাম বেড়ে হয় প্রতি আউন্স দুই হাজার ৪১৪ ডলার। এতে দেখা যায়, গত ছয় বছরে সোনার বার্ষিক দাম বেড়েছে গড়ে ৯.৭ শতাংশ করে।

সোনার রিজার্ভে শীর্ষ দেশগুলো : ওয়ার্ল্ড গোল্ড কাউন্সিলের ২০২৪ সালের প্রথম প্রান্তিকের হিসাব অনুযায়ী, সোনার রিজার্ভের দিক থেকে বর্তমান বিশ্বের শীর্ষ পাঁচ দেশের মধ্যে প্রথম স্থানে রয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। দেশটির সোনার রিজার্ভ আট হাজার ১৩৩.৪৬ টন, যা মোট রিজার্ভের ৭১.৩৩ শতাংশ। দ্বিতীয় অবস্থানে জার্মানি, দেশটির সোনার রিজার্ভ তিন হাজার ৩৫২.৩১ টন, যা মোট রিজার্ভের ৭০.৫৬ শতাংশ। তৃতীয় অবস্থানে ইতালি, দেশটির সোনার রিজার্ভ দুই হাজার ৪৫১.৮৪ টন, যা মোট রিজার্ভের ৬৭.৫৫ শতাংশ। চতুর্থ অবস্থানে ফ্রান্সের সোনার রিজার্ভ দুই হাজার ৪৩৬.৯১ টন, যা মোট রিজার্ভের ৬৮.৬১ শতাংশ। পঞ্চম অবস্থানে রয়েছে রাশিয়া। দেশটির সোনার রিজার্ভ দুই হাজার ৩৩২.৭৪ টন, যা মোট রিজার্ভের ২৮.১৪ শতাংশ।

শেয়ার দিয়ে সবাইকে দেখার সুযোগ করে দিন

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ