ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. হাফিজ মুহম্মদ হাসান বাবুর সাথে সিইও ফোরামের ৩০ সদস্যের এক প্রতিনিধিদল ১৩ মে ডিএসই’র কার্যালয়ে বৈঠক করেন। প্রতিনিধি দলে নেতৃত্ব দেন ফোরামের প্রেসিডেন্ট মোঃ ছায়েদুর রহমান। এ সময় উপস্থিত ছিলেন ডিএসই’র প্রধান আর্থিক কর্মকর্তা সাত্বিক আহমেদ শাহ, প্রধান রেগুলেটরি কর্মকর্তা খায়রুল বাসার আবু তাহের মোহাম্মদসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা৷
বৈঠকের শুরুতেই ডিএসই’র চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. হাফিজ মুহম্মদ হাসান বাবু সিইও ফোরামের সবাইকে স্বাগত জানিয়ে বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পুঁজিবাজারের মাধ্যমে অর্থনীতিকে গতিশীল করতে সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো তালিকাভুক্তির জন্য নির্দেশনা প্রদান করেছেন৷ প্রধানমন্ত্রীর এই দুরদশী নির্দেশনা পুঁজিবাজারের জন্য অত্যন্ত ইতিবাচক ও সময়োপযোগী৷ প্রধানমন্ত্রীর এই পদক্ষেপ স্টক এক্সচেঞ্জের দীর্ঘদিনের লক্ষ্য ছিল৷ প্রধা্নমন্ত্রী পুঁজিবাজারের প্রতি অত্যন্ত আন্তরিক বিধায় তার দীর্ঘদিনের পরিকল্পনার অংশ হিসেবে সরকারী লাভজনক কোম্পানিগুলোকে তালিকাভুক্ত করার জন্য উদ্যোগ গ্রহণ করতে বলেন। প্রধানমন্ত্রী যে নির্দেশনা দিয়েছেন সে বিষয়ে আমরা সম্মিলিতভাবে কিভাবে কাজে লাগাতে পারি সে বিষয়ে আজকে সিইও ফোরামের সাথে বৈঠক। পর্যায়ক্রমে আমরা মার্কেট ব্যাংকার্স এসোসিয়েশন, ডিএসই ব্রোকার্স এসোসিয়েশনসহ অন্যান্য কর্তৃপক্ষের সাথে আলোচনায় বসবো। যা পুঁজিবাজারের টেকসই উন্নয়ন নিশ্চিত করবে৷ ওই নির্দেশনা বাস্তবায়ন করতে হলে আমাদের যার যার অবস্থান থেকে কাজ করতে হবে৷ আমাদের সকলের উদ্দেশ্য হলো পুঁজিবাজারকে একটি ভালো অবস্থানে নিয়ে যাওয়া। আমরা সকলে এক সাথে কাজ করবো। যা বাংলাদেশের পুঁজিবাজারের উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। উন্নত বিশ্বে বড় বড় প্রজেক্টগুলো পুঁজিবাজারের মাধ্যমে বাস্তবায়ন করা হয়৷ কিন্তু বাংলাদেশে তা ব্যাংকের মাধ্যমে করা হয়ে থাকে। যা অর্থনীতির জন্য মঙ্গলজনক নয়।
ট্যাক্স বিষয়ে ড. হাসান বাবু বলেন, এ বিষয়ে আমরা শক্তভাবে ডিএসই’র পক্ষ থেকে কাজ করছি। তালিকাভুক্ত ও অ-তালিকাভুক্ত কোম্পানির মধ্যে অবশ্যই ট্যাক্স-এর একটা উল্লেখযোগ্য পার্থক্য থাকতে হবে। এবিষয়ে আমরা ইতোমধ্যে এনবিআর-কে চিঠি দিয়েছি। এ বিষয়ে যদি আমরা যদি এনবিআর এবং বাংলাদেশ ব্যাংক-এর সাথে আলোচনার মাধ্যমে এগিয়ে নিয়ে যেতে পারি, তাহলে আমরা কিছুটা সমাধান পাব বলে আশা করি। আর একটা বিষয় হলো দ্বৈতকর। দ্বৈতকর একজন বিনিয়োগকারীকে পুঁজিবাজারে আসতে নিরুত্সাহিত করে। আর একটি বিষয় হলো পলিসি সম্পর্কিত বিষয়। তাই রেগুলেটর-এর সাথে আমরা এই বিষয় নিয়ে আলোচনা করবো।
তিনি আরও বলেন, বিনিয়োগকারীদের স্বার্থ সংরক্ষিত করে যে কোন পলিসি তৈরি করতে হবে। স্বার্থ সংরক্ষণ মানে এই না যে, মার্কেটকে উন্মুক্ত করে দেয়া। এটা হলো মার্কেটকে সিকিউর করা। আবার সিকিউর করতে গিয়ে যেন ভালো বিনিয়োগকারীরা নিরুত্সাহিত না হয়, সে বিষয়ে খেয়াল রাখতে হবে। বহুজাতিক কোম্পানি, ভালো ফার্মাসিউটিক্যালস কোম্পানি, আরএমজি সেক্টরের গ্রীন ফ্যাক্টরি কোম্পানিগুলো ও ইন্সুরেন্স খাতসহ অনেক ভালো খাত রয়েছে যাদের বাজার আনার জন্য সুযোগ রয়েছে। শুধু ভালো কোম্পানিকে বাজারে আনতে একটি রিসার্স সেল তৈরি করে কাজ করতে হবে। পুঁজিবাজারকে ক্রান্তিকাল পেরিয়ে সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে ।সেজন্য বাজার সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে মিলে একটি পরিকল্পনা তৈরি করা হচ্ছে।
ড. হাসান আরও বলেন, আমরা কয়েকমাস আগে বিজিএমই’র প্রেসিডেন্টের সাথে বৈঠক করি৷ সেখানে গ্রীণফ্যাক্টরীগুলো তালিকাভুক্তির জন্য আলোচনা হয়। এছাড়াও আমরা বিকেএমই’র সাথে একই বিষয়ে আলোচনা করেছি। তারাও আগ্রহ প্রকাশ করেছেন। আমরা একই উদ্দেশ্যে ইন্সুরেন্স সেক্টরের সাথে বসব। এজন্য আমরা সকল পক্ষের সাথে আলোচনা করে একটি গঠনমূলক কর্মপরিকল্পনা নিয়ে সংশ্লিষ্ট পক্ষের সাথে বসবো৷ আমরা আশাবাদী গঠনমূলক কর্ম পরিকল্পনাই বয়ে আনবে আগামীদিনের সফলতা৷
পরিশেষে ড. হাসান বাবু আরও বলেন, বিএসইসি’র চেয়ারম্যান আইপিও’র ক্ষেত্রে যে ইতিবাচক মন্তব্য করেছে তা আমাদের কাজে অনুপ্রেরণা দিবে। আমরা নিয়ন্ত্রক সংস্থার পরামর্শের ভিত্তিতে কাজ করবো। পুঁজিবাজারে দীর্ঘমেয়াদি বিনিয়োগ বৃদ্ধিতে আমাদের কাজ করতে হবে। একইসাথে আমাদের ফিনান্সিয়াল লিটারেসি বৃদ্ধি করতে হবে। এছাড়াও পুঁজিবাজারের সাবসিডিয়ারি কোম্পানিগুলোকে মূল কোম্পানিগুলোর সাথে সুসম্পর্ক বজায় রেখে বিনিয়োগে এগিয়ে আসতে হবে।
সিইও ফোরামের প্রেসিডেন্টসহ অন্য প্রতিনিধিরা বলেন, বাজারের উন্নয়নে এর আগে আমরা অনেক উদ্যোগ নিয়েছি। এরআগে আমরা যেসব প্রস্তাব দিয়েছি সেগুলো নিয়ে আপনারও কাজ করেছেন। কিন্তু আমরা আমাদের লক্ষ্যে পৌঁছাতে পারিনি। আমার মনে হয় সবার কাছে আমরা পৌঁছাতে পারিনি আমাদের বিষয়গুলো। অনেক আগে থেকে আমরা তালিকাভুক্ত ও অতালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলোর মধ্যে করের ব্যাবধান বৃদ্ধি করতে বলে আসছি। কিন্তু এর কোনো প্রতিফলন আমরা দেখতে পায়নি। যদি করের ব্যবধান বাড়ানো না হয়, তাহলে আমরা আমাদের কাঙ্খিত কোম্পানিগুলোকে বাজারে আনতে পারব না। এছাড়া দীর্ঘদিন ধরে আমাদের বিনিয়োগকারীরা শেয়ার বাজারের লভ্যাংশের উপর আকৃষ্ট হচ্ছেন না এর অন্যতম কারণ হল দ্বৈত কর। লভ্যাংশে একবার কর্পোরেট ট্যাক্স দেওয়া হচ্ছে এরপর আবার বিনিয়োগকারীদেরকে পুনরায় কর দিতে হয়। বাংলাদেশে ব্যাংক ঋণ অত্যন্ত সহজলভ্য হবার কারণে ভালোভালো কোম্পানিগুলো পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হচ্ছে না। এছাড়া আমাদের বাজার ইকুইটি কেন্দ্রিক হওয়ায় এখানে উত্থান-পতন বেশি দেখা যায়। তাই বাজারে কিভাবে পণ্য বৈচিত্র্যতা বাড়ানো যায় সে বিষয়ে আলোচনা হয়। এছাড়া বাজারে ভালো কোম্পানি তালিকাভুক্ত করতে ডিএসইর সঙ্গে এক সাথে কাজ করার কথা জানান। ভালো কোম্পানি তালিকাভুক্তি করতে সব ধরনের সহযোগিতা করারও অঙ্গিকার ব্যাক্ত করা হয়। এছাড়াও বক্তারা পুঁজিবাজারে কর্পোরেট গভর্নেন্সের অভাব, আর্থিক প্রতিবেদনের জবাবদিহিতার অভাব এবং বাজারে ঘনঘন নিয়ম নীতির পরিবর্তন ইত্যাদি বিষয় তুলে ধরেন৷ সিইও ফোরামের প্রতিনিধিবৃন্দ আরও বলেন, প্রতিটি খারাপ সময়ের পর ভালো সময় আসে। বর্তমানে ডলারের দাম বৃদ্ধি, অর্থনৈতিক খারাপ সময়, মূল্যস্ফীতি সমস্যা এসব থাকলেও খুব তাড়াতাড়ি এগুলো কাটিয়ে আমরা একটি ভালো পুঁজিবাজার পাব। শুধু যেসব সমস্যা আছে সেগুলো সমাধান করতে হবে।