পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত মিরাকল ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডের মজুত পণ্যের সত্যতা নির্ণয় করতে পারেনি কোম্পানিটিতে নিয়োগকৃত নিরীক্ষক। একই সঙ্গে নিরীক্ষক কোম্পানির স্থায়ী সম্পদের পরিমাণ নিশ্চিত হতে পারেনি। এ ছাড়া কোম্পানি কর্তৃপক্ষ ১৪ বছরেরও বেশি সময় ধরে অবন্টিত লভ্যাংশ নিজেদের কাছে ফেলে রেখেছে।
নিরীক্ষক জানিয়েছে, বিবিধ খাতের এ কোম্পানিটির আর্থিক প্রতিবেদনে ২০২৩ সালের ৩০ জুন শেষে যে পরিমান মজুত পণ্য দেখানো হয়েছে তার সত্যতা তারা নিশ্চিত করতে পারেনি। কেননা তাদের এ কোম্পানির নিরীক্ষার জন্য দেরিতে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। পরবর্তীতে চলতি বছরের ২৪ ফেব্রুয়ারি তারা (নিরীক্ষক) কারখানা পরিদর্শনে গিয়েও মজুত পণ্যের সত্যতা যাচাইয়ে বিকল্প নিরীক্ষা পদ্ধতি প্রয়োগ করতে পারেনি। নিরীক্ষক আরো জানিয়েছে, কোম্পানি কর্তৃপক্ষ স্থায়ী সম্পদ কেনার তারিখ, ব্যয়, অবচয় হার, অবচয় শেষে মূল্য ইত্যাদি বিষয়ের ফিক্সড অ্যাসেট রেজিস্টার তাদেরকে দিতে পারেনি। ফলে নিরীক্ষক স্থায়ী সম্পদের মূল্যেও নিশ্চিত হতে পারেননি।
মিরাকল ইন্ডাস্ট্রিজ কর্তৃপক্ষ পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) নির্দেশনা অনুযায়ি ক্যাপিটাল মার্কেট স্ট্যাবিলাইজেশন ফান্ডে (সিএমএসএফ) অবন্টিত লভ্যাংশ হস্তান্তর করেনি। কোম্পানির কাছে ২৪ লাখ টাকার বেশি অবন্টিত লভ্যাংশ রয়েছে বলে জানিয়েছেন নিরীক্ষক। যা ১৪ বছরের বেশি সময় ধরে অপ্রদানকৃত অবস্থায় থাকার পরেও বিএসইসির নির্দেশনা অনুযায়ি সিএমএসএফে স্থানান্তর করেনি কোম্পানি কর্তৃপক্ষ।
সম্প্রতি কোম্পানিটির পর্ষদে পরিবর্তন এসেছে। স্টক এক্সচেঞ্জকে দেওয়া তথ্যানুসারে, কোম্পানিটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক রফিকুল মুর্শেদ, প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) লতিফা বিনতে লুৎফর এবং পরিচালক ওয়াহিদুজ্জামান চৌধুরী ও আসাদুর রহমান মির্জা তাদের পদ থেকে পদত্যাগ করেন এবং তাদের কাছে থাকা কোম্পানিটির শেয়ার মেহমুদ ইকুইটিস লিমিটেডের কাছে হস্তান্তরের সিদ্ধান্ত নেন। তাদের পরিবর্তে মেহমুদ ইকুইটিসের মনোনীত হিসেবে ড. এ কে এম সাহাবুব আলম পরিচালক/ব্যবস্থাপনা পরিচালক, শওকত মেহমুদ ও নয়ন মাহমুদ পরিচালক হিসেবে যোগ দেন।
মিরাকল ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডের পরিচালনা পর্ষদ সর্বশেষ তিন হিসাব বছরের জন্য (২০২০-২১, ২০২১-২২ ও ২০২২-২৩) শেয়ারহোল্ডারদের কোন লভ্যাংশ না দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। আলোচ্য তিন হিসাব বছরই কোম্পানিটি তাদের দুর্বল ব্যবস্থাপনার জন্য লোকসান করেছে। লোকসানে জর্জরিত হওয়ায় কোম্পানি কর্তৃপক্ষ টানা কয়েক বছর তাদের আর্থিক প্রতিবেদনও প্রকাশি করেনি। সর্বশেষ গত বছরের সেপ্টেম্বরের শেষের দিকে ঝুলে থাকা ওইসব আর্থিক প্রতিবেদন প্রকাশ করলেও শেয়ারহোল্ডারদের লভ্যাংশ বঞ্চিত করেছে।
নিরীক্ষিত আর্থিক প্রতিবেদন অনুসারে, সর্বশেষ সমাপ্ত ২০২২-২৩ হিসাব বছরে কোম্পানির শেয়ারপ্রতি লোকসান হয়েছে ২ টাকা ৪৯ পয়সা, আগের হিসাব বছরে এ লোকসান হয়েছিল ৩ টাকা ৭৮ পয়সা এবং ২০২০-২১ হিসাব বছরে ১ টাকা ৮৫ পয়সা লোকসান হয়। গত বছরের ৩০ জুন শেষে কোম্পানিটির শেয়ারপ্রতি নিট সম্পদমূল্য (এনএভিপিএস) দাঁড়িয়েছে ১৭ টাকা ৪৯ পয়সায়, আগের বছর শেষে যা ছিল ১৯ টাকা ৯৯ পয়সায় এবং তারও আগে বছর শেষে ছিল ৩০ টাকা ৪২ পয়সায়। এর আগে ৩০ জুন সমাপ্ত ২০১৯-২০ হিসাব বছরের জন্য শেয়ারহোল্ডারদের ১ শতাংশ নগদ লভ্যাংশ দিয়েছে মিরাকল ইন্ডাস্ট্রিজ। ২০১৮-১৯ হিসাব বছরের জন্য ৪ শতাংশ স্টক লভ্যাংশ পায় শেয়ারহোল্ডাররা। তার আগের হিসাব বছরে ৮ শতাংশ স্টক লভ্যাংশ দিয়েছিল কোম্পানি।
২০০০ সালে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানিটির অনুমোদিত মূলধন ৫০ কোটি ও পরিশোধিত মূলধন ৩৫ কোটি ২১ লাখ ৮০ হাজার টাকা। রিজার্ভে রয়েছে ৭৭ কোটি ২২ লাখ টাকা। কোম্পানিটির মোট শেয়ার সংখ্যা ৩ কোটি ৫২ লাখ ১৮ হাজার ৫৭। এর ৩০ শতাংশ উদ্যোক্তা পরিচালক ও বাকি ৭০ শতাংশ সাধারণ বিনিয়োগকারীদের হাতে রয়েছে। গত এক বছরে মিরাকল ইন্ডাস্ট্রিজ শেয়ার সর্বনিম্ন ২৪ টাকা ৪০ পয়সা থেকে ৬১ টাকা ৪০ পয়সার মধ্যে ওঠানামা করেছে।