বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর কবিতার চরণে ক্ষমা চেয়েছেন ক্লান্তির কাছ থেকে। লিখেছেন, ‘ক্লান্তি আমার ক্ষমা করো প্রভু, পথে যদি পিছিয়ে পড়ি কভু…।’ আমরা অনেকেই ক্লান্ত হয়ে লুটিয়ে পড়ি বিছানায়, সোফার কোণে। আরাম করি। অথচ ‘দ্য এনার্জি প্যারাডক্স’ অনুসারে, আপনি যতই আরাম খোঁজেন, ততই ক্লান্ত হয়ে পড়েন। আর যত ব্যস্ত থাকেন, তত ‘এনার্জি’ পান। আর এ কারণেই অনেকে অনেক কাজ করে, আর আপনার সামান্যতেই ক্লান্তি ভর করে। আপনার যদি ক্লান্তি লাগে, হেঁটে আসুন। জোর পায়ে হেঁটে আসুন। ‘এনার্জি’ পাবেন।
আপনি সারা দিন নেটফ্লিক্সের সামনে আধশোয়া হয়ে বসে থাকেন। মোবাইল স্ক্রলিং শেষই হয় না। অফিসে বসে থাকেন। ঘরে শুয়ে থাকেন, তবু আপনার ক্লান্তি যায় না। বাস্তবতা হলো, আপনার এই ক্লান্তিভাব কোনো দিনও যাবে না। কেননা, ক্লান্তি দূর করতে শারীরিকভাবে সক্রিয় থাকার কোনো বিকল্প নেই।
যুক্তরাষ্ট্রের ইউনিভার্সিটি অব জর্জিয়ার একটি গবেষণা জানাচ্ছে, মাত্র ১০ মিনিটের শারীরিক পরিশ্রম আপনাকে কর্মক্ষম করে তুলবে অনেকটাই। আর আপনি যদি সপ্তাহে তিন দিন মাত্র ২০ মিনিট ব্যায়াম করেন, সেটা আপনার কর্মক্ষমতা বাড়াবে ২০ শতাংশ। ব্যায়াম আমাদের কোষের ‘শক্তিকেন্দ্র’ মাইটোকন্ড্রিয়াকে সক্রিয় করে, যা আমাদের পেশিতে শক্তি জোগায়। তাই আপনি সকালটা যদি শুরু করেন সাঁতার কেটে, তাহলে দিনটা কর্মক্ষমভাবে সামাল দেওয়া অনেকটাই সহজ হয়ে যায়।
জীবনীশক্তি খরচ করবেন জীবনীশক্তি উৎপাদন করতে। তাহলে আপনাকে কখনোই ক্লান্তির কাছে পরাজিত হতে হবে না। আপনি যতই কাজ করবেন, ততই কাজের ‘এনার্জি’ পাবেন। তবে অবশ্যই ঘুম, খাওয়া, ব্যায়াম, কাজ—সবকিছুর মধ্যে ভারসাম্য রাখতেই হবে। নিয়ম করে প্রতিদিন আট ঘণ্টা গভীর ঘুমের কোনো বিকল্প নেই। আর একটানা কাজ করলে আপনি ক্লান্ত হবেনই। আপনার যদি মাত্রাতিরিক্ত কাজের চাপ থাকে, তা আপনাকে কেবলই ক্লান্ত করবে। তাই কাজের ফাঁকে ফাঁকে বিরতি নিতেই হবে। যেকোনো কাজ গুছিয়ে, কয়েকটা ভাগে ভাগ করে করুন। তাতে কাজের ঝক্কি অনেকটাই কমে আসবে। সেই কাজ করতে গিয়ে আপনি সহজে ক্লান্ত হবেন না।
এ ছাড়া পরিশ্রম করলে আপনার রাতের ঘুমও ভালো হবে। আর গভীর ঘুম থেকে সকালে ওঠার পর আপনার নিজেকে ঝরঝরে লাগবে। দিনের সব কাজ সহজেই সেরে ফেলতে পারবেন। এটা একটা চক্র।
এ ছাড়া হতাশায় ভুগলে বা বিষণ্নতা চেপে বসলে তখন কোনো কাজে উদ্যম পাওয়া যায় না। কেবলই ক্লান্ত লাগে। আয়রন আর ভিটামিন বি—এই দুইয়ের অভাব হলেও শরীরে ক্লান্তি ভর করে সহজে। আমাদের তিন বেলা খাবার হজম হয়ে গ্লুকোজে পরিণত হয়। সেই গ্লুকোজ রক্তের মাধ্যমে শরীরের সব পেশি, অঙ্গপ্রত্যঙ্গ আর মস্তিষ্কে প্রবাহিত হয়। এ প্রক্রিয়ায় স্বাভাবিকভাবেই রক্তে শর্করা কমে যায়। ফলে আমাদের দুর্বল লাগে। তাই আপনি যদি তিন বেলার খাবারকে ছোট ছোট করে ছয় ভাগে খান, তখন প্রক্রিয়াটা দিনব্যাপী চলমান থাকে। ফলে সব সময়ই আপনার ‘এনার্জেটিক’ লাগে। থাইরয়েডের সমস্যা আর স্লিপ অ্যাপনিয়া থাকলেও আপনার ক্লান্ত লাগতে পারে।