দেশের পুঁজিবাজারে পতন ঠেকাতে আরোপ করা ফ্লোর প্রাইস প্রায় দেড় বছর পর তুলে নেয়া হয়। ২১ জানুয়ারি থেকে স্বাভাবিক লেনদেন শুরুর পর গত ২০ মার্চ পর্যন্ত দুই মাসে মাত্র ৭০টি কোম্পানি শেয়ার ও মিউচুয়াল ফান্ডের দর বেড়েছে। তবে এ সময় ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) ৩২৮টি কোম্পানি ও মিউচুয়াল ফান্ডের দরপতন হয়েছে। ফলে গত দুই মাসে সার্বিকভাবে পুঁজিবাজার মন্দার দিকে ধাবিত হয়েছে।
গত দুই মাসে দরপতনের শীর্ষে ছিল আইপিডিসি ফাইন্যান্স। এ কোম্পানিটির শেয়ারদর কমেছে সর্বোচ্চ ৫২ দশমিক ৭৭ শতাংশ। দরপতনে শীর্ষে থাকা অন্য প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে জিএসপি ফাইন্যান্সের ৫২ দশমিক ৪৭ শতাংশ, রিং সাইন টেক্সটাইলের ৪৮ দশমিক ৯৭ শতাংশ, প্রাইম ইন্স্যুরেন্সের ৪৭ দশমিক ১৬ শতাংশ, বাংলাদেশ ফাইন্যান্সের ৪৭ দশমিক ১৬ শতাংশ, ফনিক্স ইন্স্যুরেন্সের ৪৬ দশমিক ১ শতাংশ।
৪০ থেকে ৪৫ শতাংশ পর্যন্ত দরপতন হয়েছেÑম্যাকসন্স স্পিনিং, বে লিজিং ফাইন্যান্স, রিজেন্ট টেক্সটাইল, ফারইস্ট ইসলামী লাইফ ইন্স্যুরেন্স, এমএল ডায়িং, জেএমআই মেডিকেল ডিভাইস, এসিআই লিমিটেড এবং বাংলাদেশ ল্যাম্পস লিমিটেডের। এছাড়া ৩০ থেকে ৪০ শতাংশ পর্যন্ত দরপতন হয়েছে ২৫টি কোম্পানির, ২০ থেকে ৩০ শতাংশ পর্যন্ত দরপতন হয়েছে ৮৪ কোম্পানির, ১০ থেকে ২০ শতাংশ পর্যন্ত দরপতন হয়েছে ১১০টি কোম্পানির এবং ১০ শতাংশের কম দরপতন হয়েছে ৯৪টি কোম্পানির।
প্রসঙ্গত, পুঁজিবাজারে দরপতন ঠেকাতে ২০২২ সালের ২৮ জুলাই শেয়ারের সর্বনিম্ন মূল্যস্তর বা ফ্লোর প্রাইস আরোপ করে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)। ফ্লোর প্রাইস এমন একটি ব্যবস্থা, যেখানে কোনো শেয়ার ও মিউচুয়াল ফান্ড বিএসইসির বেঁধে দেয়া দামের নিচে নামতে পারে না। তবে এর প্রভাবে পুঁজিবাজারে লেনদেন বড় ধরনের ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় ও শেয়ারদর ওঠানামা বন্ধ হয়ে যায়। তাই ফ্লোর প্রাইস তুলে দেয়ার দাবি উঠে নানা মহল থেকে।
এর পরিপ্রেক্ষিতে গত ১৮ জানুয়ারি ৩৫টি কোম্পানি বাদে বাকি সব সিকিউরিটিজের ওপর থেকে ফ্লোর প্রাইস তুলে নেয় বিএসইসি, যা ২১ জানুয়ারি থেকে কার্যকর হয়। এরপর গত ২২ জানুয়ারি নতুন করে আরও ২৩ কোম্পানির ওপর থেকে ফ্লোর প্রাইস তুলে নেয়া হয়। তৃতীয় দফায় গত ৬ ফেব্রুয়ারি আরও ছয় কোম্পানির ওপর থেকে ফ্লোর প্রাইস তুলে নেয়া হয়। এখন কেবল বেক্সিমকো লিমিটেড, বিএসআরএম লিমিটেড, ইসলামী ব্যাংক, খুলনা পাওয়ার, মেঘনা পেট্রোলিয়াম ও শাহজিবাজার পাওয়ারের ক্ষেত্রে ফ্লোর প্রাইস বহাল আছে।
পুঁজিবাজার সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ফ্লোর প্রাইসের কারণে দীর্ঘদিন আটকে থাকা শেয়ার বিক্রি করে পুঁজি সংগ্রহ করার প্রবণতা ছিল বিনিয়োগকারীদের মধ্যে। এক্ষেত্রে লাভ-ক্ষতির বিবেচনা না করেও শেয়ার বিক্রি করা হয়েছে। ফলে অধিকাংশ কোম্পানির দরপতন হয়েছে। এছাড়া বড় মূলধনি কোম্পানিগুলোর দরপতন বাজারে ছোট কোম্পানিগুলোর দরপতনকে প্রভাবিত করেছে।
বিএসইসির সাবেক চেয়ারম্যান ফারুক আহমেদ সিদ্দিকী এ প্রসঙ্গে শেয়ার বিজকে বলেন, ফ্লোর প্রাইস এমন এক সময় তুলে নেয়া হয়েছে যখন দেশের সার্বিক অর্থনীতিতে নানামুখী সমস্যা বিরাজমান। এর মধ্যে রয়েছে উচ্চ মূল্যস্ফীতি, ডলার বিপরীতে টাকার অবমূল্যায়ন এবং ব্যাংকে তারল্য সংকট। বিনিয়োগকারীরা দীর্ঘদিন ধরে টাকা তুলতে পারেনি। তাই ফ্লোর প্রাইস তুলে দেয়ার পর বিনিয়োগকারীদের মাঝে টাকা তুলে নেয়ার প্রবণতা বৃদ্ধি পায়।
তিনি আরও বলেন, পুঁজিবাজারে গত কয়েকদিন ধরে টানা পতনের ফলে নতুন করে বিনিয়োগের আগ্রহ কমেছে বিনিয়োগকারী। কারণ নতুন বিনিয়োগ করলে পুঁজি আটকে যেতে পারেÑএমন ভীতিতে নতুন করে বিনিয়োগে আগ্রহ হচ্ছেন না বিনিয়োগকারীরা। একই ভীতি বিদেশি বিনিয়োগকারীদের মধ্যেও সমানভাবে কাজ করছে। অন্যদিকে ব্যাংকে সঞ্চয় করলে ঝুঁকিহীনভাবে ভালো মুনাফা পাওয়া যাচ্ছে। এ অবস্থায় পুঁজিবাজার স্থিতিশীলতা তহবিলসহ সংশ্লিষ্টদের সহায়তায় বৃহৎ তহবিল সংগ্রহ করে বাজারের গতি সঞ্চার করতে হবে বলে মনে করছেন তিনি।