শেয়ারমার্কেটে চলছে লাগামহীন পতন। দুই-একদিন বা দুই-এক সপ্তাহ নয়; টানা এক মাসের বেশি সময় যাবত এই লাগামহীন পতন। এখন রীতিমতো তান্ডবে পরিণত হয়েছে। কিন্তু পতনের এই তান্ডবে কারা জড়িত, তা খুঁজে দেখার যেন কেউ নেই।
বিনিয়োগকারীরা বলছেন, দেশে যখন চরম রাজনৈতিক অস্থিরতা ছিল, অজানা অর্থনৈতিক শঙ্কা ছিল; তখনও শেয়ারমার্কেটে এই রকম পতনের তান্ডব দেখা যায়নি। এখন রাজনৈতিক অস্থিরতা নেই, অর্থনৈতিক ক্ষেত্রেও শঙ্কা নেই, তারপরও শেয়ারাজারে নেমে এসেছে অশনি সংকেত; কিন্তু কেন?
বিনিয়োগকারীদের অভিযোগ, একটি স্বার্থান্বেষী পক্ষ উদ্দেশ্যমূলকভাবে শেয়ারবাজারে পতনের তান্ডব চালাচ্ছে। সরকারের উচিত একটি নিরপেক্ষ তদন্তের মাধ্যমে এর রহস্য উদঘাটন করা।
তাদের অভিযোগ, যারা এতোদিন তাদেরকে শেয়ারবাজারে নিরাপত্তা দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়ে আসছিলেন, তারাও এখন নিশ্চুপ। বাজারকে অশনি সংকেত মুক্ত করার কোনো উদ্যোগ তাদের নেই। এটা খুবই দুঃখজনক। তাদের মতে, এভাবে একটি দেশের শেয়ারমার্কেট চলতে পারে না।
বাজার বিশ্লেষণে দেখা যায়, গত এক মাসের বেশি ধরে চলা পতনকে আজ ছাড়িয়ে গেছে। আজ শেয়ারাবাজারে সর্বোচ্চ দরপতন হয়েছে। প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) প্রধান সূচক আজ একদিনে কমেছে ৮৪ পয়েন্টের বেশি। এর আগে গতকাল (১৮ মার্চ) সূচক কমেছিল এই যাবত কালের মধ্যে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ, প্রায় ৭০ পয়েন্ট। আজকের পতন বাজারজুড়ে মহা-আতঙ্ক বিরাজ করছে।
তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, গত ১১ ফেব্রুয়ারি ডিএসইর প্রধান সূচক ছিল ৬ হাজার ৪৪৭ পয়েন্ট। আজ মঙ্গলবার (১৯ মার্চ) সূচক কমে দাঁড়িয়েছে ৫ হাজার ৮১৪ পয়েন্টে। এই সময়ে সূচক কমেছে ৬৩৩ পয়েন্ট।
এতে দেখা যায়, গত ১১ ফেব্রুয়ারির পর প্রতি সপ্তাহেই শেয়ারবাজারে ধারাবাহিকভাবে সূচক কমেছে। ১১ ফেব্রুয়ারির পর প্রথম সপ্তাহে (১১-১৫ ফেব্রুয়ারি) ডিএসইর সূচক ১১১ পয়েন্ট কমে দাঁড়িয়েছে ৬ হাজার ৩৩৬ পয়েন্টে।
এর পরের সপ্তাহে (১৮-২২ ফেব্রুয়ারি) সূচক ৬৩ পয়েন্ট কমে দাঁড়িয়েছে ৬ হাজার ২৭৩ পয়েন্টে। পরের সপ্তাহে (২৫-২৯ ফেব্রুয়ারি) ১৯ পয়েন্ট ৬ হাজার ২৫৪ পয়েন্টে, চলতি মাসের প্রথম সপ্তাহে (০৩-০৭ মার্চ) ১৪২ পয়েন্ট কমে ৬ হাজার ২৫৪ পয়েন্টে এবং বিদায়ী সপ্তাহে (১০-১৪ মার্চ) আরও ১৪৪ পয়েন্ট দাঁড়িয়েছে ৫ হাজার ৯৬৮ পয়েন্টে। চলতি সপ্তাহের তিন দিনে ডিএসইর সূচক ১৫৪ পয়েন্ট কমে দাঁড়িয়েছে ৫ হাজার ৮১৪ পয়েন্টে।
মঙ্গলবারের বাজার পর্যালোচনা
আজ মঙ্গলবার (১৯ মার্চ) ডিএসইর প্রধান সূচক ডিএসইএক্স ৮৪.১৩ পয়েন্ট কমে অবস্থান করছে ৫ হাজার ৮১৪ পয়েন্টে। অন্য দুই সূচকের মধ্যে ডিএসই শরীয়াহ সূচক ১৭.৮৬ পয়েন্ট কমে অবস্থান করছে ১ হাজার ২৬৮ পয়েন্টে এবং ডিএসই-৩০ সূচক ২২.৫০ পয়েন্ট কমে দাঁড়িয়েছে ২ হাজার ২০ পয়েন্টে।
আজ ডিএসইতে ৪৬৫ কোটি ৫৪ লাখ টাকার শেয়ার ও ইউনিট লেনদেন হয়েছে। আগের কর্মদিবসে লেনদেন হয়েছিল ৪৮৬ কোটি ৬৭ লাখ টাকার।
আজ ডিএসইতে লেনদেন হওয়া ৩৯৬টি প্রতিষ্ঠানের ও ইউনিট লেনদেন হয়েছে। এর মধ্যে দর বেড়েছে ৪১টির, কমেছে ৩১৯টির এবং অপরিবর্তিত রয়েছে ৩৬টির।
অপর শেয়ারবাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে (সিএসই) আজ ১৬ কোটি ৮৩ লাখ ৫ হাজার টাকার শেয়ার ও ইউনিট লেনদেন হয়েছে। আগের দিন লেনদেন হয়েছিল ১২ কোটি ৯৬ লাখ ৬০ হাজার টাকার শেয়ার ও ইউনিট।
আজ সিএসইতে ২১৮টি প্রতিষ্ঠান লেনদেনে অংশ নিয়েছে। এর মধ্যে দর বেড়েছে ৩৬টির, কমেছে ১৭০টির এবং অপরিবর্তিত রয়েছে ১২টি প্রতিষ্ঠানের।
আগের দিন সিএসইতে ২২৭টি প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিট লেনদেন হয়েছে। যার মধ্যে দর বেড়েছিল ৪৬টির, কমেছিল ১৫৭টির এবং অপরিবর্তিত ছিল ২৪টি প্রতিষ্ঠানের।