পুরুষের শার্টে বোতাম থাকে ডানে, নারীর শার্টে বাঁয়ে। এই ধারা প্রাচীনকালের। কিন্তু ঠিক কী কারণে নারী–পুরুষের শার্টের বোতামের অবস্থান আলাদা? কারণ খোঁজার চেষ্টা করেছেন ফ্যাশন ইতিহাসবিদেরা—
এনসাইক্লোপিডিয়া ব্রিটানিকার মতে, বোতামের উদ্ভব ১৩ শতকে। ১৪ শতক থেকে বোতাম হয়ে ওঠে সামাজিক অবস্থানের পরিচয়বাহক অলংকার। যুক্তরাষ্ট্রের ইলিনয় অঙ্গরাজ্যভিত্তিক পোশাক প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠান আওয়ার ভিশনের অন্যতম ডিজাইনার নাটালি হিকস বলেন, শুরুর দিকে সাজ ও নকশার উপাদান হিসেবে বোতাম শুধু সম্পদশালী নারীরাই ব্যবহার করতেন।
তবে ঠিক কী কারণে নারী ও পুরুষদের শার্টের ভিন্ন দুই পাশে বোতাম বসানো হলো, তা ব্যাখ্যা করতে গিয়ে যুক্তরাজ্যভিত্তিক ফ্যাশন ব্র্যান্ড টেপার্ড মেন্সওয়্যারের সিইও স্কট লিবেনবার্গ একটি তত্ত্ব দাঁড় করেছেন। সেই তত্ত্বে তিনি বলেন, ‘আগেকার দিনে ধনীদের জন্য পরিধেয় পোশাক ছিল একটা বড় বিষয়। ধনী নারীদের পোশাক পরিয়ে দেওয়ার জন্য একজন সহকারী থাকত। তাই নারীদের পোশাকের বোতাম বাঁ পাশে বসানো থাকলে ডানহাতি সহকারীর জন্য তা পরিয়ে দেওয়া বেশ সুবিধাজনক হতো। অন্যদিকে পুরুষেরা বেশির ভাগ ক্ষেত্রে নিজেরাই নিজেদের পোশাক পরতেন। তাই সুবিধা বিবেচনায় পুরুষদের শার্টে বোতাম লাগানো হতো ডান পাশে।’
ডিজাইনার নাটালি হিকসও লিবেনবার্গের এই তত্ত্ব সমর্থন করেছেন।
এর উত্তরে হিকস বলেন, ‘১৯ শতকে এসে সেলাই–প্রযুক্তির অগ্রগতি হলে পুরুষদের পাশাপাশি নারীদের পোশাকেও বোতামের উপস্থিতি বাড়তে শুরু করে। সেই পুরোনো দিন থেকে যা প্রচলিত ছিল, তা কেউ আর সংশোধন করার প্রয়োজন বোধ করেনি। বরং এই ভিন্নতাকে অবলম্বন করে নতুন নতুন ফ্যাশন চালু হয়েছে।’
হিকসের সঙ্গে সুর মিলিয়েছেন লিবেনবার্গও। তিনি বলেন, ‘এই ধারা কেন বদলায়নি, তার সুনির্দিষ্ট কোনো প্রমাণ নেই। তবে ঐতিহ্য ধরে রাখা এর একটি কারণ হতে পারে। একবার একটি স্টাইল চালু হয়ে গেলে তা দিনের পর দিন ধরে চলতেই থাকে। কালক্রমে স্টাইল বিকশিত হলেও সাধারণ কিছু বিষয় একই রকম থেকে যায়।’
পোশাক কারখানার সুবিধাকেও একটি কারণ হিসেবে মানেন লিবেনবার্গ। তিনি বলেন, ‘দুটি ভিন্ন পাশে বোতাম বসানো পোশাক অ্যাসেমব্লি লাইনে এলে বোঝা সহজ হয় কোনটি পুরুষদের জন্য আর কোনটি নারীদের জন্য তৈরি। এতে কারখানায় কাজটা সহজ হয়ে যায়।’
হিকস বলেন, বেশির ভাগ লোকই কিন্তু জানে না যে লিঙ্গভেদে বোতাম দুই পাশে বসানো হয়। অর্থাৎ অনেকেই একে স্বাভাবিক বলে ধরে নেয়।