ফ্লোর প্রাইস প্রত্যাহারের ধাক্বা সামলিয়ে শেয়ারবাজার যখন ঘুরে দাঁড়াচ্ছিল, তখন জেড ক্যাটাগরির শেয়ার নিয়ে নিয়ন্ত্রক সংস্থার দুই সিদ্ধান্ত শেয়ারবাজারে দুর্যোগ নেমে আসে। এরপর যুক্ত হয় বিএসইসি ও ডিএসই’র কর্তাব্যক্তিদের পারস্পরিক বিরোধ। চলতি সপ্তাহে যুক্ত হয়েছে পেনিক সেল ও ফোর্স সেল। সব মিলিয়ে শেয়ারবাজার এখন বিপর্যস্ত।
বাজার সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বাজার যখন আপট্রেন্ডে থাকে, তখন তথাকথিত মার্কেট মেকার ও নিয়ন্ত্রক সংস্থার কর্মব্যক্তিদের নানা হাঁকাডাক শোনা যায়। কিন্তু বাজারে যখন সংকট ঘনীভূত হয়, তখন যেন সবাই অদৃশ্য হয়ে যায়। বাজারের দুর্যোগ মূহুর্তে তখন আর কাউকে কোনো উদ্যোগ নিতে দেখা যায় না। এটা খুবই দুঃখজনক।
তাঁরা বলছেন, শেয়ারবাজারে এখন এভাবে দুর্যোগ নামার কোনো কারণ নেই। কারণ দেশে এখন রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা বিরাজমান। অর্থনৈতিক অবস্থা ধীরে ধীরে ভালো হচ্ছে। আমদানি-রপ্তানিতেও সুখবর আসছে। তাহলে শেয়ারাজারে এমন দুর্যোগ অবস্থা দেখা যাবে কেন?
তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, গত ১৮ জানুয়ারি ফ্লোর প্রাইস প্রত্যাহারের দিন প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) প্রধান সূচক ছিল ৬ হাজার ৩৩৬ পয়েন্ট। ফ্লোর প্রাইস প্রত্যাহারের পর ধারাবাহিক পতনে ৬ কর্মদিবসের মাথায় ২৮ জানুয়ারি ডিএসইর সূচক নেমে দাঁড়ায় ৬ হাজার ৭৯ পয়েন্টে।
পরের দিন ২৯ জানুয়ারি থেকে বাজার ঘুরে দাঁড়াতে থাকে। ১০ কর্মদিবসের মাথায় ১১ ফেব্রয়ারি ডিএসইর সূচক বেড়ে দাঁড়ায় ৬ হাজার ৪৪৭ পয়েন্টে। তারপর জেড ক্যাটাগরির শেয়ার নিয়ে নিয়ন্ত্রক সংস্থার সিদ্ধান্ত বাজারে আবারও নেতিবাচক চাপ দেখা যায়। শুরু হয় ধারবাহিক পতন। এরপর পতন আরও গভীর হয় যখন শীর্ষ মূলধনী কোম্পানি গ্রামীণফোন ও বৃটিশ অ্যামেরিকান ট্যোবাকোর ফ্লোর প্রাইস তুলে দেওয়া হয়। যারফলে বাজারে থেমে থেমে পতনের বড় ঝাপটা দেখা যায়। যা চলতি সপ্তাহের আরও তীব্র হয়েছে।
চলতি সপ্তাহে যুক্ত হয়েছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসি ও ডিএসর মধ্যে মতবিরোধ। সাথে যোগ হয়েছে পেনিক সেল-ফোর্স সেল। যার ফলে সপ্তাহের চার কর্মদিবসে সূচক ১০১ পয়েন্ট কমে আজ দাঁড়িয়েছে ৫ হাজার ৯৭৪ পয়েন্টে।
বিনিয়োগকারী ও ব্রোকারেজ হাউজের কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বাজারের ধারাবাহিক পতনে বিনিয়োগকারীদের পোর্টফোলিও-তে থাকা শেয়ারের দাম ২০ থেকে ৩০ শতাংশ কমে গেছে। ফলে যারা মার্জিন নিয়ে শেয়ার কিনেছিলেন, তারা এখন ফোর্স সেলে পড়েছেন। অন্যদিকে, বাজারে ধারাবাহিক পতনে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে অজানা আতঙ্ক দেখা দিয়েছে। যে কারণে তাদের মধ্যে লোকসানে থাকার পর শেয়ার বিক্রির প্রবণতা বেড়েছে।
তবে বাজার বিশ্লেষকরা বলছেন, আগামী দুই-এক দিনের মধ্যেই বাজার ঘুরে দাঁড়াবে। কারণ কারণ বাজার এখন পতনের শেষ ধাপে এসে দাঁড়িয়েছে। যেখান থেকে আর পেছনে আসার সুযোগ নেই। আজ লেনদেনের এক পর্যায়ে ডিএসইর সূচক ৫৫ পয়েন্ট উধাও হয়ে গিয়েছিল। পরে তা ৩ পয়েন্টে এসে দাঁড়ায়। কিন্তু এই সময়ে পেনিক সেল ও ফোর্স সেল বেড়ে গেলে সূচকে আবারও অবনতি হয়। শেষ বেলায় সূচকের পতন এসে দাঁড়ায় ৩২ পয়েন্টের ওপরে। তাঁরা বলছেন, যদি পেনিক সেল ও ফোর্স সেল না হতো, তাহলে আজকেই বাজার ঘুরে দাঁড়াতো।
বুধবারের বাজার পর্যালোচনা
আজ বুধবার (১৩ মার্চ) ডিএসইর প্রধান প্রধান সূচক ডিএসইএক্স ৩২.৭৬ পয়েন্ট কমে অবস্থান করছে ৫ হাজার ৯৭৪ পয়েন্টে। অন্য দুই সূচকের মধ্যে ডিএসই শরীয়াহ সূচক ৯.০৮ পয়েন্ট কমে অবস্থান করছে ১ হাজার ৩০০ পয়েন্টে এবং ডিএসই-৩০ সূচক ৭.২৬ পয়েন্ট কমে দাঁড়িয়েছে ২ হাজার ৫৬ পয়েন্টে।
আজ ডিএসইতে ৪৮৩ কোটি ৩০ লাখ টাকার শেয়ার ও ইউনিট লেনদেন হয়েছে। আগের কর্মদিবসে লেনদেন হয়েছিল ৫৬৩ কোটি ৫৩ লাখ টাকার।
আজ ডিএসইতে লেনদেন হওয়া ৩৯৪টি প্রতিষ্ঠানের ও ইউনিট লেনদেন হয়েছে। এর মধ্যে দর বেড়েছে ১১২টির, কমেছে ২২২টির এবং অপরিবর্তিত রয়েছে ৬০টির।
অপর শেয়ারবাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে (সিএসই) আজ ১১ কোটি ৭২ লাখ ৫০ হাজার টাকার শেয়ার ও ইউনিট লেনদেন হয়েছে। আগের দিন লেনদেন হয়েছিল ১৬ কোটি ৯৪ লাখ ২১ হাজার টাকার শেয়ার ও ইউনিট।
আজ সিএসইতে ২১৭টি প্রতিষ্ঠান লেনদেনে অংশ নিয়েছে। এর মধ্যে দর বেড়েছে ৬০টির, কমেছে ১৩১টির এবং অপরিবর্তিত রয়েছে ২৬টি প্রতিষ্ঠানের।
আগের দিন সিএসইতে ২৩৩টি প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিট লেনদেন হয়েছে। যার মধ্যে দর বেড়েছিল ৬০টির, কমেছিল ১৪৫টির এবং অপরিবর্তিত ছিল ২৮টি প্রতিষ্ঠানের।