রমজান মাসে ব্যায়াম করা যাবে কি যাবে না, তা নিয়ে অনেকের মধ্যেই দ্বিধা তৈরি হয়। সেহরি খাওয়ার পর সারাদিন না খেয়ে থাকা হয় বলে অনেকেই ভাবেন– এ সময় যেহেতু ফাস্টিং হচ্ছেই তাহলে আলাদা করে শারীরিক ব্যায়াম করার প্রয়োজন নেই। অথচ চিকিৎসাবিজ্ঞান বলছে ভিন্ন কথা। রোজার সময়েও যদি আপনি ব্যায়াম বা ইয়োগা করেন, তাহলে সুস্থ থাকার পাশাপাশি আপনার এনার্জি লেভেলও বাড়বে, মানসিকভাবে ভালো থাকবেন এবং মেটাবলিজম স্বাভাবিক থাকবে। এবার ভাবতে পারেন, কোন সময়ে কী ধরনের ব্যায়াম করলে ভালো হয়? চলুন তাহলে এ বিষয়ে বিস্তারিত জেনে নেওয়া যাক।
রোজায় কখন ব্যায়াম করবেন?
খালি পেটে ব্যায়াম করলে ব্লাড সুগার কন্ট্রোলে থাকে এবং উচ্চ রক্তচাপ কমে, যা কিনা মাথা ঘোরানো বা অজ্ঞান হয়ে যাওয়া রোধ করতে সাহায্য করে। এ সময় যে ওয়ার্কআউটগুলো করা হবে, সেগুলো নিয়ে আগে অবশ্যই পরিকল্পনা করে নিতে হবে। সারা বছর যদি ভারী ব্যায়াম করে থাকেন, তাহলে এ সময় সেটার পরিমাণ কিছুটা কমিয়ে দিতে হবে। এ সময় ইয়োগা করলেও শরীর বেশ আরাম পাবে। ব্যায়াম কম বা বেশির কথা তো জানা হলো, কিন্তু কোন সময়টা আসলে ব্যায়ামের জন্য উপযুক্ত? রমজানে সাধারণত চার সময়ে ব্যায়াম করা যায়।
সেহরির আগে
সকালে সাধারণত ফজর নামাজ পড়েই সবাই হাঁটতে বের হন বা ব্যায়াম করেন। রমজানে এই সময়টা শুরু হবে একটু আগে। যেমন– আপনি যখন সেহরি খাবেন, তার কিছুটা আগে উঠবেন। খাওয়ার আগে হালকা ব্যায়াম করে নেবেন। কারণ, ইফতার খাওয়ার পর আপনি যা খাবেন, তা থেকেই এনার্জি তৈরি হবে, যা শরীরে সঞ্চিত থাকবে। তবে খাওয়ার আগে ব্যায়াম করার কারণে দ্রুত খাবার হজম হয়ে দিনের শুরুর দিকেই ক্ষুধা লাগতে পারে। এজন্য আপনি আগে থেকেই খাদ্য তালিকায় ফাইবার জাতীয় খাবার রাখতে পারেন।
দুপুরে
দিনের মাঝামাঝি সময়ে ওয়ার্কআউট করলে বাকি সময়টুকুও বেশ ভালো কাটে। তা ছাড়া বেশ এনার্জিও পাওয়া যায়। পানি পান করা যায় না বলে প্রথম তিন-চার দিন অ্যাডজাস্ট হতে একটু সময় লাগতে পারে। ধীরে ধীরে ঠিক হয়ে যাবে।
ইফতারের আগে
এই সময়েও ব্যায়াম করা যায়। কারণ, ওয়ার্কআউট শেষ করার অল্প সময়ের মধ্যেই খাবার ও পানি খাওয়া যায়। যদিও এ সময়ে সারাদিনের সঞ্চিত শক্তি অনেকটাই কমে আসে। যদি বেশি দুর্বল লাগে, তাহলে শরীরে বাড়তি চাপ নিয়ে ব্যায়াম করার প্রয়োজন নেই।
ইফতারের পর
সবচেয়ে ভালো হয় যদি ইফতার করে ব্যায়াম করতে পারেন। পানি ও খাবার খাওয়া হয় বলে এ সময় এনার্জি লেভেল বেশি থাকে। তা ছাড়া ওয়ার্কআউট করার সময়ও পানি পান করতে পারবেন।
কী ধরনের ব্যায়াম করা যায়?
রমজানে কী ধরনের ব্যায়াম করবেন সেটা নির্ভর করবে শরীরের চাহিদা এবং রোজা রেখে আপনার কেমন লাগছে তার ওপর। এ সময় নিয়মিত হাঁটাহাঁটি, হালকা জগিং, ইয়োগা বা ওয়েট লিফটিং করা যায়।
অনেকেই রেগুলার কার্ডিও করেন। ৩০ মিনিটের কার্ডিও আপনি করতে পারেন। তবে মনে রাখতে হবে, এ সময় আপনার শরীর ডিহাইড্রেটেড থাকবে। তাই শরীরে যে ফ্যাট জমা আছে, সেখান থেকেই শরীর এনার্জি গ্রহণ করবে। কার্ডিও শুরুর আগে তাই বডি ওয়ার্মআপ করে নিতে এবং শেষে বিশ্রাম নিতে ভুলবেন না। প্রতিদিন না করে এক দিন পরপর করুন।
রমজানে ব্যায়াম নিয়ে রাজধানীর আনন্দ ইয়োগা ইনস্টিটিউট অ্যান্ড ইয়োগা উইথ দেবের ইনস্ট্রাক্টর বৃতি দেব বলেন, ‘ইয়োগায় কিছু আসন আছে যেগুলো নিয়মিত করলে মন ফ্রেশ থাকে। ভারী এক্সারসাইজ না করে এ সময় ইয়োগা করতে পারেন। ইফতারের কিছুক্ষণ পর, ঘুমানোর আগে, সেহরির কিছুক্ষণ আগে এই আসনগুলো করা যায়। ইয়োগা করলে ক্লান্তিও কমে যাবে, সেই সঙ্গে হরমোনাল ইমব্যালান্সও হবে না।’
সারা বছরের তুলনায় রমজানে ব্যায়ামের ধরন ও সময় কিছুটা ভিন্ন থাকে। তাই শুরুর দিকে সেট হতে কিছুটা সময় লাগতে পারে। ‘পারব না’ এ কথাটি না ভেবে চেষ্টা করুন, দেখবেন কয়েক দিনের মধ্যে শরীরও সুন্দরভাবে অ্যাডজাস্ট হয়ে যাবে।