ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) ব্যবস্থাপনা পরিচালক ড. এটিএম তারিকুজ্জামান বলেন, পুঁজিবাজারে প্রচুর আইনকানুন হয়েছে। ব্রোকার-ডিলার, ট্রেকহোল্ডার, কোম্পানি থেকে শুরু করে প্রতিটি ক্ষেত্রেই সুশাসন তৈরি করা এবং বিধি-বিধান পরিপালন করা অত্যন্ত জরুরি। আইনকানুন ঠিকমতো পরিপালন না করলে পুঁজিবাজারে সুশাসন নিশ্চিত হবে না। সিকিউরিটিজ হাউজকে পরিচালনা করতে আইনকানুনগুলো কিভাবে প্রতিপালন করা যায় সেসব বিষয়গুলো নিয়ে এমন কর্মশালা অত্যন্ত সময়োপযোগী।
তিনি বলেন, বিনিয়োগকারীদের আস্থা ধরে রাখার মাধ্যমে দেশের পুঁজিবাজারকে বৃহত্তর পরিসরে উপস্থাপন করাই হচ্ছে ডিএসইর লক্ষ্য। তিনি বলেন, দেশের সার্বিক অর্থনীতির উন্নতি হচ্ছে। কিন্তু সার্বিক পুঁজিবাজার নিয়ে গর্ব করার মত উচ্চতায় আমরা যেতে পারিনি। সেখানে পৌঁছতে আরও সময় লাগবে। তাই আমাদের অনেক দূর এগিয়ে যেতে হবে।
সোমবার (৪ মার্চ) ডিএসইর মাল্টিপারপাস হলে অনুষ্ঠিত ‘সিকিউরিটিজ রিলেটেড লজ’ অ্যান্ড ‘এফেক্টিভ কম্প্লাইয়েন্স অব সিকিউরিটিজ রিলেটেড লজ’ শীর্ষক কর্মশালার স্বাগত বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।
গত সোমবার ডিএসইর প্রাতিষ্ঠানিক দক্ষতা বৃদ্ধি, স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা জোরদার করা, সুশাসন সংহতকরণ এবং সম্পদের যথাযথ ব্যবহার নিশ্চিতকরণের মাধ্যমে রূপকল্প ২০৪১ এর যথাযথ বাস্তবায়নে ২০২৩-২৪ অর্থবছরের জন্য বার্ষিক কর্মসম্পাদনের অংশ হিসেবে দুই দিনব্যাপী এ কর্মশালা শুরু হয়। এতে ট্রেকহোল্ডারস কোম্পানির প্রতিনিধি, অনুমোদিত প্রতিনিধি এবং কমপ্লায়েন্স অফিসাররা অংশগ্রহণ করেন।
ট্রেকহোল্ডারদের উদ্দেশে তিনি বলেন, পুঁজিবাজারের ভাবমূর্তি ট্রেকহোল্ডারদের এবং অনুমোদিত প্রতিনিধিদের দক্ষতার উপর নির্ভর করে। আপনারাই হচ্ছেন পুঁজিবাজারের গেটকিপার। সাধারণ বিনিয়োগকারীদের কমিশন এবং এক্সচেঞ্জের সাথে সরাসরি যোগাযোগ খুবই কম হয়, তারা আপনাদের কাছেই আসে। আপনারা যদি বিনিয়োগকারীদের আস্থা বজায় রাখতে পারেন, তবে কমিশন এবং এক্সচেঞ্জ উভয়ই নিশ্চিত থাকতে পারে।
তিনি আরও বলেন, আইনে যে মনিটরিং এবং এনফোর্সমেন্ট করতে বলা হয়েছে সেটা পালন করা সকলের দায়িত্ব এবং সঠিকভাবে পরিপালন করতে হবে। যে রুলস, রেগুলেশনগুলো এসেছে, আমাদের উদ্দেশ্য হল কর্মশালার মাধ্যমে আপনাদের এই রুলস এবং রেগুলেশনগুলো জানানো, যাতে আপনারা ভুলগুলো সংশোধন করে এই সমস্যাগুলো থেকে উত্তরণের মাধ্যমে পুঁজিবাজারে সক্রিয় অংশগ্রহণ করতে পারেন এবং অবদান রাখতে পারেন।
ট্রেকহোল্ডারদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাবে ডিএসই এমডি বলেন, বেশ কিছু রুলস রেগুলেশন বিষয়ে ইতোমধ্যেই বিএসইসিতে মতামত পাঠানো হয়েছে এবং বেশ কিছু প্রস্তাবনা আমাদের হাতে আছে যা আমরা সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন স্টকহোল্ডারদের সাথে আলোচনা করছি। আগামীতে পর্যালোচনা শেষে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনে বিবেচনার জন্য পাঠানো হবে।
তিনি জানান, পুঁজিবাজারকে সামনের দিকে এগিয়ে দিতে এবং পুঁজিবাজার উন্নয়নের জন্য যা যা করা দরকার আমরা তা করবো। আমরা সকলে একসঙ্গে মিলিত হয়ে কাজ করবো।
ডিএসইর জেনারেল ম্যানেজার মোঃ ছামিউল ইসলামের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে পেপার উপস্থাপন করেন ডিএসইর প্রধান রেগুলটরি কর্মকর্তা খায়রুল বাসার আবু তাহের মোহাম্মদ। সিকিউরিটিজ আইন প্রতিপালনের প্রয়োজনীয়তা এবং লঙ্ঘনের বিস্তারিত বিবরণ তুলে ধরে তিনি বলেন, এই অধিবেশনের প্রধান উদ্দেশ্য হলো- বিনিয়োগকারীদের তহবিলের নিরাপত্তা ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করা, বিনিয়োগকারীদের সিকিউরিটিজের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা, সিকিউরিটিজ সংক্রান্ত নিয়ম মেনে চলা নিশ্চিত করা, ট্রেকহোল্ডার কোম্পানিগুলির এমডি, সিইও এবং কমপ্লায়েন্স কর্তৃপক্ষের সচেতনতা বৃদ্ধি করা।
পেপার উপস্থাপনায় বেশ কিছু অসম্মতিও তুলে ধরেন তিনি। এর মধ্যে, কনসোলেটেড কাস্টমার অ্যাকাউন্টে ঘাটতি, ক্লায়েন্টদের সিকিউরিটিজে ঘাটতি, একাধিক ব্যাকঅফিস সফটওয়্যারের ব্যবহার, শাখা, ডিজিটাল বুথ, এক্সটেনশন অফিসের অননুমোদিত কার্যক্রম, কমিশন বা ডিএসইকে না জানিয়ে শাখা, ডিজিটাল বুথ, এক্সটেনশন অফিস বন্ধ-স্থানান্তর, ডিএসইতে রিপোর্ট না করে ইন-চার্জ বা কমপ্লায়েন্স অফিসার অনুমোদিত প্রতিনিধিদের পরিবর্তন, টিডব্লিউএসের অননুমোদিত ব্যবহার ইত্যাদি।