২০১০ সালে ধসের পর সবচেয়ে খারাপ অবস্থায় ফিরেছে পুঁজিবাজার। এতে ঋণগ্রস্ত বেশির ভাগ বিনিয়োগকারীর পত্রকোষ বা পোর্টফোলিও জোরপূর্বক বিক্রি বা ফোর্সড সেলের আওতায় পড়ে নি:স্ব হয়েছেন। ফলে পুঁজিবাজারে স্মরণকালের সবচেয়ে বড় ধসের ১৪ বছর অতিক্রম করলেও এখনও একটি স্থিতিশীল পুঁজিবাজার ফিরে পায়নি বিনিয়োগকারীরা।
কিন্তু এখনও এ ধসের রেশ কাটিয়ে উঠতে পারেননি ক্ষতিগ্রস্ত বিনিয়োগকারীরা। ফলে এক যুগের বেশি আগের ধসের ক্ষত এখনও বয়ে নিয়ে বেড়াচ্ছেন তারা। বরং দিনের পর দিন আশার বানী শুনাচ্ছেন পুঁজিবাজারের নীতি নির্ধারকরা। তবে কোন আশায় বিনিয়োগকারীদের পুঁজি ফিরে পাচ্ছে না। এতে অনেকটা নীরবে পুঁজি হারিয়েছেন সাধারণ বিনিয়োগকারীরা।
ফলে উচ্চ প্রবৃদ্ধির দেশে পুঁজিবাজার হাঁটছে উল্টো পথে। সরকার ও নিয়ন্ত্রক সংস্থার কার্যকর পদক্ষেপের অভাবে সৃষ্টি হয়েছে বিনিয়োগকারীদের আস্থাহীনতা। টানা দরপতনে পুঁজি হারিয়ে লাখ লাখ বিনিয়োগকারী ছেড়েছেন এই বাজার। লেনদেন কমায় বাজার মধ্যস্থতাকারী প্রতিষ্ঠানগুলো পড়েছে লোকসানে। নতুন কোম্পানির পুঁজি সংগ্রহের পথও সংকুচিত হয়ে গেছে। ফলে ১৯৯৬ ও ২০১০ সালের ধসে সৃষ্ট সংকটকালের পর গত ১৪ বছরের মধ্যে এখন সবচেয়ে নাজুক দশা পুঁজিবাজারের।
বাজার সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বাজারের বর্তমান দুরবস্থার প্রধান কারণ বিনিয়োগকারীদের আস্থাহীনতা। আর এই অবস্থা সৃষ্টি হয়েছে সুশাসন, প্রয়োজনীয় নজরদারি ও অপরাধীর যথাযথ শাস্তির অভাবে। সরকার ও নিয়ন্ত্রক সংস্থা প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিলে এমনটি হতো না বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা। এক যুগ ধরে বারবার সময় নির্ধারণ করেও রাষ্ট্রায়ত্ত কোনো কোম্পানি তালিকাভুক্ত করতে ব্যর্থ হয়েছে সরকার।
বিনিয়োগকারীদের আস্থা ফেরাতে ভালো কোম্পানি পুঁজিবাজারে আনতেও কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি। অথচ বাজারে গতি আনতে এসব ছিল সবচেয়ে কার্যকর উপায়। তবে উল্টো মানহীন কোম্পানির আইপিও (প্রাথমিক গণপ্রস্তাব) এনে বাজারকে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত করা হয়েছে। বাংলাদেশে এ অবস্থা থাকলেও প্রতিবেশী দেশগুলোর পুঁজিবাজার কিন্তু ঘুরে দাঁড়িয়েছে।
কিছু কিছু বিনিয়োগকারী পুঁজিবাজারের বর্তমান পরিস্থিতিকে ২০১০ সালের থেকেও ভয়াবহ বলে মনে করছেন। তারা বলছেন, পুঁজিবাজারে ২০১০ সালে যে মহাধস নামে তা সবাই স্পষ্ট বুঝতে পেরেছিলেন। সে সময় একের পর এক প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিটের দরপতনের সঙ্গে সূচকের বড় পতন হয়েছিল। এতে নিঃস্ব হন লাখ লাখ বিনিয়োগকারী। সাম্প্রতিক সময়েও তালিকাভুক্ত প্রায় সব প্রতিষ্ঠানের শেয়ারের দাম কমেছে। এতে একটু একটু করে পুঁজি হারিয়েছেন বিনিয়োগকারীরা। এ সংখ্যাও কম নয়, লাখের অধিক। কিন্তু সূচকের বড় পতন হয়নি।
মজিবুর রহমান নামের এক বিনিয়োগকারী বলেন, সবাই ২০১০ সালের ধসকে মহাধস বলেন। কিন্তু এখন যে নীরব ধস চলছে তা মনে হচ্ছে কেউ দেখছেন না। গত দুই মাসে আমার পুঁজি অর্ধেকে নেমে এসেছে। ২০১০ সালের থেকে এটা কোনো অংশেই কম নয়। শুধু আমার নয়, অল্প অল্প করে বাজারের সিংহভাগ বিনিয়োগকারীর পুঁজি শেষ হয়ে যাচ্ছে। কিন্তু কেউ কোনো পদক্ষেপ নিচ্ছে না। বরং নিয়ন্ত্রক সংস্থা ‘জেড ক্যাটাগরি’ ইস্যুতে একের পর এক সিদ্ধান্ত নিয়ে পুঁজিবাজারকে ধ্বংস করে দিচ্ছে।
এদিকে সপ্তাহের দ্বিতীয় কার্যদিবসে দেশের প্রধান পুঁজিবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) সূচকের দরপতনে লেনদেন শেষ হয়েছে। এদিন ডিএসইর সূচকের সাথে লেনদেন কমেছে ১৮৭ কোটি টাকা। অপর পুঁজিবাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে (সিএসই) সূচকের পতনে কমেছে লেনদেন। ডিএসই ও সিএসই সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
বাজার বিশ্লেষণে দেখা যায়, ডিএসই প্রধান বা ডিএসইএক্স সূচক ৩৯.৯৪ পয়েন্ট বা ০.৬৪ শতাংশ কমে অবস্থান করছে ৬ হাজার ১৭৫.২৪ পয়েন্টে। অন্য সূচকগুলোর মধ্যে ডিএসইএস বা শরীয়াহ সূচক ৫.২৫ পয়েন্ট ০.৩৮ শতাংশ কমে অবস্থান করছে ১ হাজার ৩৪৪.৬৩ পয়েন্টে এবং ডিএস৩০ সূচক ৫.৪২ পয়েন্ট ০.২৫ শতাংশ কমে দাঁড়িয়েছে ২ হাজার ১০৮.৩২ পয়েন্টে। ডিএসইতে মোট ৩৯৬টি কোম্পানির শেয়ার ও ইউনিট লেনদেন হয়েছে। এর মধ্যে দাম বেড়েছে ১১৫টির, কমেছে ২১৪টির ও অপরিবর্তিত রয়েছে ৬৮টির।
ডিএসইর সূত্র মতে, সপ্তাহের দ্বিতীয় কার্যদিবসে ডিএসইতে ৭৯৩ কোটি ৬৭ লাখ ৯৫ হাজার টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছে। গত রোববার থেকে ডিএসইে ১৮৭ কোটি ৮৭ লাখ ৩১ হাজার টাকা কম শেয়ার লেনদেন হয়েছে। গত রোববার ডিএসইতে ৯৮১ কোটি ৫৫ লাখ ২৬ হাজার টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছিল।
অপর পুঁজিবাজার সিএসইর প্রধান সূচক সিএসসিএক্স ৫১.৪৪ পয়েন্ট বা ০.৪৮ শতাংশ কমে দাঁড়িয়েছে ১০ হাজার ৬৪০.৪৩ পয়েন্টে। সার্বিক সূচক সিএএসপিআই ১০০.৯৯ পয়েন্ট বা ০.৫৬ শতাংশ কমে দাঁড়িয়েছে ১৭ হাজার ৭৪০.২৬ পয়েন্টে, শরিয়াহ সূচক ৬.১৯ পয়েন্ট বা ০.৫৪ শতাংশ কমে ১ হাজার ১৩৮.৮৬ পয়েন্টে এবং সিএসই৩০ সূচক ১৪১.০৭ পয়েন্ট বা ১.০৬ শতাংশ কমে ১৩ হাজার ১৬৭.৫৮ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে।
সপ্তাহের দ্বিতীয় কার্যদিবসে সিএসইতে ২৫১টি কোম্পানির শেয়ার ও ইউনিট লেনদেন হয়েছে। এর মধ্যে দাম বেড়েছে ৭৭টির, কমেছে ১৪৬টির ও অপরিবর্তিত রয়েছে ২৮টির। দিন শেষে সিএসইতে ১৬ কোটি ৩৪ লাখ ৭ হাজার টাকার শেয়ার ও ইউনিট লেনদেন হয়েছে। এর আগের দিন লেনদেন হয়েছিল ১৮ কোটি ১৭ লাখ ৫৩ হাজার টাকার শেয়ার।