ভ্যালেন্টাইন উইক প্রায় শেষের দিকে। আর মাত্র একদিন পরেই ভ্যালেন্টাইন ডে। আজ হাগ ডে। এটি ভালোবাসা সপ্তাহের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ একটি দিন। প্রতি বছর ১২ ফেব্রুয়ারি বিশ্বজুড়ে পালিত হয় হাগ ডে বা আলিঙ্গনের দিন। ভ্যালেন্টাইন ডে বা ভালোবাসা সপ্তাহের ষষ্ঠ দিন পালন করা হয় দিনটি।
এদিন প্রিয়জনকে জড়িয়ে ধরার কায়দাই বুঝিয়ে দেবে আপনি তাকে কতটা ভালোবাসেন। শুধু প্রেম নিবেদনের জন্যই নয় বরং প্রিয়জনকে আলিঙ্গনের পদ্ধতির একটি বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যাও আছে।
প্রিয়জনকে আলতো করে স্পর্শ করা কিংবা জড়িয়ে ধরার মাধ্যমে মনে ভিন্ন এক সুখ ও শান্তি হয়। যখন কেউ সঙ্গীকে জড়িয়ে ধরেন তখন অক্সিটসিন হরমোন নিঃসরণ হয়। এই হরমোন আমাদের মানসিকভাবে সুখের অনুভূতি দেয়।
ভালোবাসার বহির্প্রকাশ হিসেবে আলিঙ্গন করা বা জড়িয়ে ধরা হয়। শুধু যে প্রেমিক-প্রেমিকা কিংবা স্বামী-স্ত্রীই একে অন্যকে জড়িয়ে ধরবেন, তা কিন্তু নয়। মা-বাবা, ভাই-বোন কিংবা বন্ধু-বান্ধব আপনি যাকেই জড়িয়ে ধরুন না কেন এরই মাধ্যমে আপনার স্বাস্থ্যের উন্নতি ঘটতে পারে।
কারণ ইতিবাচক শারীরিক স্পর্শের মাধ্যমে সবারই মানসিক ও শারীরিক স্বাস্থ্য ভালো থাকে। আলিঙ্গনের অনেক স্বাস্থ্য উপকারিতা আছে। যেমন- আলিঙ্গন মানুষের ভয়ভীতি দূর করে আত্মবিশ্বাস বাড়ায়, অসুস্থ হওয়ার ঝুঁকি কমায়, হৃদযন্ত্রের স্বাস্থ্য ভালো রাখে এমনকি শারীরিক ব্যথাও কমায়। বিভিন্ন গবেষণায় এমনটিই জানিয়েছেন বিজ্ঞানীরা।
৪০ হাজার অংশগ্রহণকারীর ওপর করা এক সমীক্ষা থেকে জানা যায়, আলিঙ্গনের মাধ্যমে মেলে স্বস্তি, উষ্ণতা ও ভালোবাসা। বিশেষজ্ঞদের মতে, জড়িয়ে ধরার মাধ্যমে শুধু মনকেই নয় বরং শরীরকেও ভালো রাখতে পারেন। কীভাবে জানেন?
হৃদযন্ত্র ভালো রাখে
প্রিয়জনকে জড়িয়ে ধরলে ত্বকের মধ্যে থাকা পাসিনিয়ান কর্পাসেলস নামক প্রেশার রিসেপটর মস্তিষ্কে সংকেত পাঠিয়ে রক্তচাপ কমিয়ে দেয়, যা হৃদযন্ত্রের স্বাস্থ্য ভালো রাখে।
বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গেছে, হৃদযন্ত্র ভালো রাখতে আলিঙ্গনের চেয়ে ভালো ওষুধ আর হয় না। কারণ প্রিয়জনের সামান্য স্পর্শ প্রতি মিনিটে হার্টের গতিবেগ বাড়িয়ে তোলে অন্তত ১০ বিট।
আত্মবিশ্বাস বাড়ে ও ভয় কমে
কোনো কাজ করার আগে প্রিয়জনকে জড়িয়ে ধরলে আত্মবিশ্বাস বাড়ে ও ভয় কমে যায়। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ওহিও বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণায় প্রকাশ বয়সের সঙ্গে একাকিত্ব বাড়তে থাকে, যা স্ট্রেস বাড়িয়ে তোলে। যা প্রিয়জনকে আলিঙ্গন করার মাধ্যমে কাটানো যায়।
আমরা যখন কাউকে জড়িয়ে ধরি তখন স্ট্রেস হরমোন কর্টিসোল নিঃসারিত হয়। এই কর্টিসোল হরমোন আমাদের জীবনে স্ট্রেস ও মানসিক অস্থিরতা বাড়িয়ে তোলে। প্রিয়জনকে যত বেশি জড়িয়ে ধরবেন, ততই কমবে কর্টিসোল হরমোনের পরিমাণ। মানসিকভাবে শান্ত রাখতে পারে একটি ছোট্ট হাগ বা আলিঙ্গন।
কতক্ষণ প্রিয়জনকে জড়িয়ে ধরলে এসব উপকার মিলবে?
এক গবেষণায় এ বিষয় পরীক্ষা করতে অংশগ্রহণকারীদের ১, ৫ ও ১০ সেকেন্ডের জন্য আলিঙ্গন করেন। ফলাফলে দেখা যায়, ১ সেকেন্ডের আলিঙ্গন সবচেয়ে কম আনন্দদায়ক বলে মনে হয়েছিল। যেখানে ১০ সেকেন্ডের আলিঙ্গন সবচেয়ে বেশি আনন্দ দেয় বলে জানা যায়।
বিশেষজ্ঞদের মতে, আলিঙ্গনের সময়কাল শরীরকে ইতিবাচকভাবে প্রভাবিত করে। প্রিয়জনকে আলিঙ্গনের মাধ্যমে ‘সুখী হরমোন’ বা ‘অক্সিটোসিন হরমোন’ উৎপন্ন হয়। যাকে ‘আলিঙ্গন’ বা ‘প্রেম’ হরমোনও বলা হয়। তাই যত বেশি সময় ধরে আলিঙ্গন করা হয়, তত বেশিই এই হরমোন উৎপন্ন হয়। ফলে আমরা ততটাই আনন্দবোধ করি।
পারিবারিক থেরাপিস্ট ভার্জিনিয়া সাতিরের মতে, প্রতিদিন চারটি আলিঙ্গন করুন বেঁচে থাকার জন্য। চারটি আলিঙ্গন রক্ষণাবেক্ষণের জন্য। দিনে ১২টি আলিঙ্গন করুন বৃদ্ধির জন্য। আলিঙ্গনে যেহেতু কোনো অসুবিধা নেই তাই এটি উপেক্ষা করবেন না। বরং প্রিয়জনকে জড়িয়ে ধরার মাধ্যমে স্বাস্থ্য ভালো রাখুন।
সূত্র: হেলথলাইন/ ব্রাইটসাইড