বিদেশ থেকে আসা যাত্রীদের কাছ থেকে ডলারসহ বৈদেশিক মুদ্রা কিনে ব্যাংকিং চ্যানেলে না দেখিয়ে ব্যাংকাররা সেগুলো বাইরে বিক্রি করে দেন। এ অর্থপাচারে সাত ব্যাংক ও দুই মানি এক্সচেঞ্জারের কর্মকর্তারা জড়িত বলে জানিয়েছেন দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) সচিব মো.মাহবুব হোসেন।
গতকাল মঙ্গলবার বিকালে কমিশনের প্রধান কার্যালয়ের সামনে এক ব্রিফিংয়ে সাংবাদিকদের তিনি এসব কথা বলেন।
দুদক সচিব বলেন, দুদকের অভিযানে বিমানবন্দরে অবৈধভাবে বিদেশি মুদ্রায় ক্রয়-বিক্রয়ে ও মানি লন্ডারিংয়ে জনতা ব্যাংক, সোনালী ব্যাংক, অগ্রণী ব্যাংক, মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংক, পূবালী ব্যাংক, প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক, যমুনা ব্যাংক এবং এভিয়া মানি এক্সচেঞ্জার ও মিলেনিয়াস মানি এক্সচেঞ্জারসহ কিছু মানি এক্সচেঞ্জার প্রতিষ্ঠানের জড়িত থাকার বিষয়ে প্রাথমিক সত্যতা পাওয়া যায়। এক্ষেত্রে প্রাপ্ত তথ্যমতে, প্রতিদিন আনুমানিক শত কোটি টাকা সমমূল্যের বৈদেশিক মুদ্রা থেকে ব্যাংক খাত বঞ্চিত হচ্ছে।
দুদক সচিব মো. মাহবুব হোসেন বলেন, প্রবাসী ওয়েজ আর্নার্স ও বিমানের যাত্রীরা ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে মূল্যবান যে রেমিট্যান্স নগদ ও বৈদেশিক মুদ্রা নিয়ে আসেন, তা ব্যাংকিং চ্যানেলে রাষ্ট্রীয় রিজার্ভে জমা হওয়ার কথা। কিন্তু অসাধু ব্যাংকাররা ব্যাংকের টাকা ব্যবহার
করে তা ব্যাংকিং চ্যানেলে সংগৃহীত না দেখিয়ে নিজেরাই ক্রয় করে মার্কেটে বিক্রি করে দেন, যা পরে মানি লন্ডারিংয়ের মাধ্যমে আবার বিদেশে পাচার হয়ে যায়। এভাবে দেশের মূল্যবান বৈদেশিক মুদ্রা পাচার করে দেশের অর্থনৈতিক কাঠামোকে ক্ষতিগ্রস্ত করা হচ্ছে।
মাহবুব হোসেন বলেন, গোয়েন্দা সূত্র এবং সুনির্দিষ্ট লিখিত অভিযোগ পেয়ে সোমবার দিনব্যাপী কমিশনের উপ-পরিচালক সৈয়দ নজরুল ইসলামের নেতৃত্বে একটি এনফোর্সমেন্ট অভিযান পরিচালনা করা হয়। অভিযান শেষে বিদেশি মুদ্রার কালোবাজারিদের সঙ্গে জড়িত ব্যাংক ও মানি এক্সচেঞ্জারদের একটি সংঘটিত চক্রের সন্ধান পাওয়া যায়।
তিনি বলেন, সাধারণত প্রতিদিন হাজার হাজার প্রবাসী কর্মজীবী ও বিদেশ থেকে বাংলাদেশে ভ্রমণকারীরা বিমানবন্দর হয়ে দেশে আসেন। তারা বিদেশি মুদ্রা বিমানবন্দরে থাকা ব্যাংকের বুথ ও মানি এক্সচেঞ্জারে দেশীয় মুদ্রা বা বাংলাদেশি টাকায় এনকেশমেন্ট করে থাকেন। আইন, বিধি ও নিয়ম অনুযায়ী ফরেন কারেন্সি এনকেশমেন্ট ভাউচার এনকেশমেন্টকারীকে দিতে হয়। কিন্তু ব্যাংক ও মানি এক্সচেঞ্জাররা ভাউচার না দিয়ে বা জাল ভাউচারে সরাসরি ফরেন কারেন্সি গ্রহণ করে বিনিময়ে টাকা দিয়ে দেয়। এছাড়া তারা সইবিহীন, ভুয়া ভাউচার বা এনকেশমেন্ট সিøপ দেয়। এই বিদেশি মুদ্রার ক্রয়কারী ব্যাংক ও মানি এক্সচেঞ্জার প্রতিষ্ঠানগুলো তাদের মূল হিসাবে প্রতিষ্ঠানের অনুমোদিত অ্যাকাউন্টে অন্তর্ভুক্ত করে না। ফলে কেন্দ্রীয় রিজার্ভে এসব বিদেশি মুদ্রা যুক্ত হয় না। এতে দেশে বিদেশি মুদ্রার ঘাটতি বা সংকটের সৃষ্টি হয়।
মাহবুব হোসেন বলেন, এ অপরাধে জড়িতরা অবৈধভাবে ক্রয় করা ডলার, ইউরো, রিয়াল, রিঙ্গিত, পাউন্ড, দিনার ও অন্যান্য ফরেন কারেন্সি সংগ্রহ করে বিদেশি মুদ্রাপাচারকারী, বিদেশি মুদ্রার কালোবাজারি ও বাংলাদেশ থেকে বিদেশে মানি লন্ডারিংয়ের মাধ্যমে অর্থপাচারকারী দুর্নীতিবাজদের অবৈধভাবে সরবরাহ করে মর্মে দুদকের অভিযানে সুস্পষ্ট তথ্য পাওয়া যায়।
তিনি বলেন, দুদকের এনফোর্সমেন্ট টিম অভিযানকালে ব্যাংক ও মানি এক্সচেঞ্জারের এনকেশমেন্ট সিøপ ছাড়া ফরেন করেন্সি ক্রয়-বিক্রয়-সংক্রান্ত প্রাথমিক তথ্য প্রমাণ, একাধিক ভুয়া ভাউচার ও সইবিহীন ভাউচার সংগ্রহ করেছে। এছাড়া অবৈধভাবে ফরেন কারেন্সি ক্রয়-বিক্রয়, পাচার ও কালোবাজারির সঙ্গে জড়িত প্রতিষ্ঠান ও সংশ্লিষ্ট অন্য ব্যক্তিদের বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য-প্রমাণ অভিযান পরিচালনাকারী টিম সংগ্রহ করেছে। সন্দেহভাজন ও জড়িত ব্যাংক কর্মকর্তারা কমিশনের কর্মকর্তাদের নজরদারিতে রয়েছেন। তাদের মদতদাতা ও সহযোগীদের বিষয়েও কমিশনের নির্দেশে তথ্য সংগ্রহ করা হচ্ছে। এ বিষয়ে কমিশন আইন ও বিধি অনুযায়ী পরবর্তী ব্যবস্থা নেয়া হবে