উপজেলা ও জেলা পর্যায়ে ক্যানসার শনাক্তের যথাযথ ব্যবস্থা না থাকায় বেশিরভাগ রোগীর ক্যানসার শনাক্ত হচ্ছে তৃতীয় বা চতুর্থ স্তরে, যখন রোগীর খরচ কয়েক গুণ বেড়ে যায় এবং সুস্থ করে তোলা সম্ভব হয় না। ক্যানসার যত দ্রুত শনাক্ত হবে, সুস্থতার সম্ভাবনা তত বেশি হবে।
রোববার (৪ ফেব্রুয়ারি) জাতীয় প্রেস ক্লাবে ক্যানসার সচেতনতামূলক বিশেষ গোলটেবিল বৈঠকে বক্তারা এসব কথা বলেন। বৈঠকের আয়োজন করে এভারকেয়ার হসপিটালস। গোলটেবিল বৈঠকে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা দেশের ক্যানসার পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা করেন।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক ডা. আহমেদুল কবীর বলেন, ‘সংক্রামক রোগ নিয়ে আমরা যেখানে হিমশিম খাচ্ছি। সেখানে অসংক্রামক রোগ একটা মহামারি আকারে চেপে বসেছে। এজন্য প্রাথমিক প্রতিরোধে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিচ্ছি।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমরা যদি ক্যানসার দ্রুত শনাক্ত করতে পারি তাহলে রোগীর খরচ অনেক কমে যাবে এবং অনেক রোগীকে সুস্থ করে তোলা সম্ভব হবে। এক্ষেত্রে সরকারের পাশাপাশি প্রাইভেট সেক্টরকে এগিয়ে আসতে হবে। কারণ ক্যানসার চিকিৎসা খুবই ব্যয়বহুল।’
বাংলাদেশ সোসাইটি অব রেডিয়েশন অনকোলজিস্টের সভাপতি ডা. কাজী মুশতাক হোসেন বলেন, ‘ক্যানসার প্রতিরোধে সচেতনতার বিকল্প নেই। এতে সুবিধা হলো দ্রুত শনাক্ত হবে। যত আগে শনাক্ত, সুস্থতার সম্ভাবনা তত বেশি। এছাড়া ভ্যাকসিনের ব্যবস্থা করা। ভ্যাকসিন নিলে অনেক ক্যানসার প্রতিরোধ করা সম্ভব।’
এভারকেয়ার হসপিটালস, বাংলাদেশের মেডিকেল সার্ভিসেসের পরিচালক ডা. আরিফ মাহমুদ বলেন, ‘লোকবল ও যন্ত্রপাতি সংকট, পর্যাপ্ত চিকিৎসাব্যবস্থা নেই, অনেক মানুষ চিকিৎসার জন্য বিদেশে চলে যাচ্ছে, কোনো ক্যানসার রেজিস্ট্রি নেই। এ সমস্যাগুলো আমাদের দেশে দীর্ঘ দিনের। তবে আশার কথা হলো, আমাদের আট বিভাগে মেডিকেল কলেজে হচ্ছে, যেখানে ক্যানসার রোগীদের জন্য চিকিৎসার ব্যবস্থা থাকবে। এ ছাড়া রেজিস্ট্রি নিয়ে কাজ চলছে। সবার সহযোগিতা এবং পাবলিক-প্রাইভেট পার্টনারশিপের মাধ্যমে ক্যানসার চিকিৎসা আরও এগিয়ে নিয়ে যাওয়া সম্ভব।’
বায়োমেড মলিকিউলার ডায়াগনস্টিকসের সিইও ডা. তাসনীম আরা বলেন, গবেষণায় দেখা গেছে ক্যানসার একটি কারণে হচ্ছে না। অনেক জিনের মিউটেশনের কারণে হয়ে থাকে। এজন্য সঠিক কারণ জেনে সঠিক সময়ে টার্গেটেড থেরাপি দিতে হয়। তাহলে ক্যানসার রোগীর সুস্থতা সম্ভব।
ডা. মিজানুর রহমান বলেন, ‘ব্লাড ক্যানসারের ক্ষেত্রে আমরা মলিকুলার ল্যাবে চিকিৎসা দিতে পারছি। কিন্তু ক্যানসার আক্রান্ত হয় অনেকগুলো জিনের সমস্যা থেকে যেটি পিসিআর (পলিমারেজ চেইন রিঅ্যাকশন ) পদ্ধতিতে দেখা সম্ভব নয়। এছাড়া পিসিসিআর মেশিনে খুব সীমিত পরীক্ষা করা যায়। অথচ দুই থেকে তিনটি এনজিস্ট মেশিন পুরো দেশকে সার্ভিস দিতে পারে এবং সব ধরনের জিনের সমস্যাগুলো জানা যায়। এ টেস্ট করতে হলে ভারতে যেতে হয় বা অন্য কোথাও যেতে হচ্ছে। অথচ দেশের এ মেশিন রয়েছে।’
ডা. আরমান রেজা চৌধুরী বলেন, আমাদের দেশে ক্যানসার নিয়ে তথ্যের ঘাটতি এখনো বড় সমস্যা। কি করলে ক্যানসার হবে, কি করলে ক্যানসার হবে না শুধু এর মধ্যে সীমাবদ্ধ না। পরীক্ষা-নিরীক্ষা চিকিৎসা ব্যবস্থা এ তথ্যের ঘাটতি সাধারণ মানুষের মধ্যে রয়ে গেছে। এজন্য জেলাভিত্তিক আধুনিক ক্যানসার তথ্যকেন্দ্র গড়ে তোলার পরামর্শ দেন তিনি।