বিগত ২০১৬-১৭ অর্থবছরে মুনাফা করেও লভ্যাংশ দেয়নি পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত বাংলাদেশ ওয়েল্ডিং ইলেকট্রোডস (বিডিওয়েল্ডিং)। কিন্তু এরপরের ২ অর্থবছরে লোকসান সত্ত্বেও ২০১৮-১৯ অর্থবছরের জন্য নামমাত্র বোনাস শেয়ার ঘোষণা করেছে উৎপাদন বন্ধ থাকা এ কোম্পানির পর্ষদ। আর এই লভ্যাংশকে ঘিরে শেয়ারটি ১ মাসের ব্যবধানে দ্বিগুণ হয়ে গেছে। যে লভ্যাংশ ঘোষণা করতে লোকসান কমিয়ে সংরক্ষিত আয় (রিটেইন আর্নিংস) পজিটিভ দেখানো হয়েছে। অথচ এই কোম্পানিটি আর্থিক সংকটে চট্টগ্রাম থেকে ঢাকায় স্থানান্তরিত কারখানা চালু করতে পারছে না।
দেখা গেছে,অতিতের ন্যায় এখনো গেম্বলারদের সঙ্গে হাত মিলিয়ে অনেক কোম্পানির পর্ষদ পিএসই এবং লভ্যাংশ ঘোষণা করার মৌখিক চুক্তি করে থাকে। যার উপর ভিত্তি করে গেম্বলাররা পিএসই বা লভ্যাংশ ঘোষণার আগে থেকেই শেয়ার দর বাড়াতে থাকে। সাধারন বিনিয়োগকারীরা যুক্ত হওয়ার পরে তারা মুনাফা নিয়ে কেটে পড়ে। অনেকটা সেরকমই হয়েছে বিডি ওয়েল্ডিংয়ে।
বিগত কয়েক বছর ধরে লভ্যাংশ দেওয়া বন্ধ বিডিওয়েল্ডিংয়ের। একইসঙ্গে রয়েছে লোকসানে। কিন্তু এই কোম্পানির শেয়ারটি ২০১৭-১৮ ও ২০১৮-১৯ অর্থবছরের লভ্যাংশ সংক্রান্ত সভা অনুষ্ঠিত হওয়ার কয়েকদিন আগে থেকে অস্বাভাবিক হারে বাড়তে থাকে। কোম্পানিটির লভ্যাংশ সংক্রান্ত সভা ৯ আগস্ট অনুষ্ঠিত হলেও ২৭ জুলাই থেকে অস্বাভাবিক হারে বাড়তে শুরু করে। লোকসানের কোম্পানিতে পর্ষদ সভার আগে এই অস্বাভাবিক উত্থান স্বাভাবিক না বলে মনে করেন বাজার সংশ্লিষ্টরা। তাদের মতে, এক্ষেত্রে কোম্পানি কর্তৃপক্ষ জড়িত না থাকলে এমনটি হওয়ার সুযোগ নেই। গত ২৬ জুলাই বিডিওয়েল্ডিংয়ের শেয়ার দর ছিল ১৫.৫০ টাকা। যে শেয়ারটি ১৭ আগস্ট বেড়ে দাড়িঁয়েছে ২৮ টাকায়। অর্থাৎ ২২ দিনের ব্যবধানে শেয়ারটির দর বেড়েছে ১২.৫০ টাকা বা ৮১ শতাংশ।
বিডিওয়েল্ডিংয়ের পর্ষদ এর আগে সর্বশেষ ২০১৪ সালের ব্যবসায় লভ্যাংশ ঘোষণা করে। এরপরে ২০১৫-১৬, ২০১৬-১৭ ও ২০১৭-১৮ অর্থবছরের ব্যবসায় লভ্যাংশ দেয়নি। এমনকি ২০১৬-১৭ অর্থবছরে মুনাফা সত্ত্বেও কোন লভ্যাংশ দেয়নি। কিন্তু ২০১৭-১৮ অর্থবছরে শেয়ারপ্রতি ৩৬ পয়সা ও ২০১৮-১৯ অর্থবছরে শেয়ারপ্রতি ৮ পয়সা লোকসান সত্ত্বেও ২০১৮-১৯ এর জন্য ১ শতাংশ বোনাস শেয়ার ঘোষণা করেছে। যে লভ্যাংশ ঘোষণা করা হয়েছে আবার ওই ২০১৬-১৭ অর্থবছরের মুনাফার উপর। ওই অর্থবছরে কোম্পানিটি ৮ কোটি ৩৮ লাখ ৬০ হাজার টাকা মুনাফা করায় রিটেইন আর্নিংস পজিটিভ ছিল।
বোনাস শেয়ার ঘোষণার কারন হিসেবে বিডিওয়েল্ডিং কর্তৃপক্ষ কারখানা স্থানান্তরকে উল্লেখ করেছে। কিন্তু এই কারখানা স্থানান্তরে বোনাস শেয়ার দেওয়ার কোন দরকার ছিল না। স্বাভাবিকভাবেই স্থানান্তর করা সম্ভব। এমন না যে ২০১৮-১৯ অর্থবছরে মুনাফা থেকে বোনাস শেয়ার দেওয়া হবে। যাতে করে ২০১৮-১৯ অর্থবছরের মুনাফা বিতরন করতে হবে না। সেই মুনাফা দিয়ে কারখানা স্থানান্তর করা হবে। কোম্পানিটি লোকসান করায় বোনাস শেয়ার না দিয়েও স্থানান্তর করা সম্ভব। বরং বোনাস শেয়ার দেওয়ার মাধ্যমে কোম্পানিটির উপর ভবিষ্যতে লভ্যাংশ দেওয়া কঠিন হলো।
অযৌক্তিকভাবে বোনাস শেয়ার দিয়ে মুনাফা কোম্পানিতে রেখে দেওয়া রোধ করার জন্য ২০১৯ সালের ১৫ জুলাই বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) এক নির্দেশনা জারি করে। ওই নির্দেশনার ১ ধারায় বলা হয়েছে, কোন কোম্পানি বিএমআরই ছাড়া বোনাস শেয়ার দিতে পারবে না। বোনাস শেয়ার প্রদানের মাধ্যমে রেখে দেওয়া মুনাফার যথার্থ ব্যবহারের জন্য এই নির্দেশনা দেওয়া হয়েছিল। আর এই বাধ্যবাধকতার কারনেই কারখানা স্থানান্তরের মতো অযৌক্তিক ব্যাখ্যা দিয়েছে বিডি ওয়েল্ডিং কর্তৃপক্ষ।