জাতীয় সংসদে চলতি বাজেট অধিবেশনে ‘আয়কর আইন ২০২৩’ পাস হতে যাচ্ছে। নতুন আয়কর আইনে আবাসন ও শেয়ারবাজারসহ বেশ কয়েকটি শিল্প খাতে অপ্রদর্শিত অর্থ বা ‘কালো টাকা’ বিনিয়োগের সুযোগ থাকছে। যদিও অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল ২০২৩-২৪ অর্থবছরের বাজেটোত্তর সংবাদ সম্মেলনে বলেছিলেন, আগামী অর্থবছর কালো টাকা বৈধ করার সুযোগ থাকছে না। চলতি অর্থবছরে এ সুযোগ থাকলেও আশানুরূপ সাড়া না পাওয়ায় এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
আয়কর সংশ্লিষ্টরা বলছেন, অপ্রদর্শিত অর্থ বৈধ করার সুযোগ এটি একটি চলমান প্রক্রিয়া। তাই বাজেটে এ বিষয়ে কিছু না থাকলেও আয়কর আইনে এর সুযোগ সব সময়ই থাকে।
নতুন আয়কর আইনে অপ্রদর্শিত অর্থ দিয়ে স্টক এক্সচেঞ্জে শেয়ার, জমি, পট, ফ্ল্যাট কেনার বিধান বহাল রাখা হয়েছে। আগের নিয়মেই কর দিয়ে অপ্রদর্শিত সম্পদ বৈধ করা যাবে। তবে একাধিক জমি-ফ্ল্যাটের জন্য ২০ শতাংশ বাড়তি হারে কর দিতে হবে। অর্থনৈতিক অঞ্চল ও হাইটেক পার্কে ১০ শতাংশ কর দিয়ে কালো টাকা বিনিয়োগ করে শিল্প স্থাপনের সুযোগ থাকছে। নির্ধারিত করের অতিরিক্ত ১০ শতাংশ কর দিয়ে কালো টাকা সাদা করা যাবে। নতুন আয়কর আইনে করদাতার ছয় বছর আগের যে কোনো সময়ের সম্পদ উদঘাটন হলে তার ওপর আয়কর ধার্য করার বিধান রাখা হয়েছে। ফলে সম্পদ লুকিয়ে কর ফাঁকি দেওয়ার সুযোগ কমে যাবে।
গত বছরের শেষের দিকে আয়কর আইনের খসড়া চূড়ান্ত করে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। এবারের আয়কর আইনটি বাংলা ভাষায় প্রণীত। গত ৮ জুন অর্থমন্ত্রী ‘আয়কর বিল ২০২৩’ জাতীয় সংসদে উত্থাপন করেন। এরপর বিলটি পাঁচ দিনের মধ্যে পরীক্ষা করে প্রতিবেদন দেওয়ার জন্য অর্থ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটিতে পাঠানো হয়। চলতি অধিবেশনেই এটি সংসদে পাস হতে পারে। করদাতা চাইলে তার ট্যাক্স আইডেন্টিফিকেশন নম্বর (টিআইএন) বাতিল করতে পারবেন। করদাতার যদি রিটার্ন দাখিলের বাধ্যবাধকতা না থাকে বা পরপর তিন বছর করযোগ্য আয় না থাকে বা শারীরিক অক্ষমতার কারণে ভবিষ্যতে করযোগ্য আয় শূন্য
থাকে তাহলে তিনি টিআইএন বাতিলের আবেদন করতে পারবেন। কেউ মারা গেলে, স্থায়ীভাবে দেশ ত্যাগ করলে, একাধিক টিআইএন থাকলে, আইনি মর্যাদা পরিবর্তন করলে, অন্য কোনো আইনানুগ কারণ থাকলে নিবন্ধন বাতিল করা যাবে। করদাতার আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে কর বকেয়া না থাকলে বা আয়কর সংক্রান্ত কোনো বিরোধ না থাকলে রাজস্ব বোর্ড টিআইএন বাতিল করে দেবে।
উপযুক্ত কারণ ছাড়া আয়কর রিটার্ন দাখিলে ব্যর্থ হলে উপ-কর কমিশনার সংশিষ্ট ব্যক্তির নিরূপণ করা আয়ের ওপর ধার্য করের ১০ শতাংশ হারে জরিমানা আরোপ করতে পারবেন। রিটার্নের ভিত্তিতে কর পরিশোধে ব্যর্থ হলে ২৫ শতাংশ হারে জরিমানা আরোপ করা হবে। আয় গোপন করার ক্ষেত্রেও জরিমানার বিধান রাখা হয়েছে। ব্যবসা কেন্দ্রের রিটার্ন জমার প্রমাণপত্র না থাকলে সর্বনিম্ন পাঁচ হাজার টাকা থেকে সর্বোচ্চ ২০ হাজার টাকা জরিমানার বিধান রাখা হয়েছে নতুন আইনে। জাল টিআইএন সার্টিফিকেট ব্যবহারে ২০ হাজার টাকা, জাল নিরীক্ষা প্রতিবেদন দিলে হিসাববিদদের সর্বনিম্ন ৫০ হাজার টাকা থেকে সর্বোচ্চ দুই লাখ টাকা জরিমানা করা যাবে। কোনো প্রতিষ্ঠান যদি জাল নিরীক্ষা প্রতিবেদন জমা দেয় তাহলে এক লাখ টাকা জরিমানা করতে পারবেন দায়িত্বরত কর্মকর্তা।
আয়কর রিটার্নে মিথ্যা তথ্য দিলে এবং তা প্রমাণ হলে অর্থদন্ডসহ সর্বনিম্ন ছয় মাস থেকে সর্বোচ্চ পাঁচ বছর কারাদন্ডে দন্ডিত হবেন। কেউ যদি মিথ্যা সনদপত্র দেন তাহলে সর্বনিম্ন তিন মাস থেকে সর্বোচ্চ এক বছর কারাদন্ডে দন্ডিত হবেন। অন্যের টিআইএন সার্টিফিকেট ব্যবহার করলে সর্বোচ্চ এক বছর কারাদন্ড বা এক লাখ টাকা পর্যন্ত অর্থদন্ড বা উভয় দন্ডে দন্ডিত হবেন। কর বকেয়া থাকলে বা খেলাপি হলে বকেয়া করের সমপরিমাণ অর্থ জরিমানা করতে পারবেন উপ-কর কমিশনার। আয়কর কর্তৃপক্ষের কাজে বাধা দিলে নূ্যনতম এক বছর কারাদন্ড বা অর্থদন্ড বা উভয় দন্ডের বিধান রাখা হয়েছে।
এদিকে শেয়ারবাজার ও আবাসন খাতে অপ্রদর্শিত অর্থ বিনিয়োগের সুযোগ থাকায় মিশ্র প্রতিক্রিয়া রয়েছে। আবাসন খাতের উদ্যোক্তারা এই সুযোগটি আসন্ন অর্থবছরে চেয়েছিলেন। তবে শেয়ারবাজার সংশ্লিষ্টরা এ নিয়ে খুব এক উচ্ছ্বসিত না। তারা বলছেন, কালো টাকা বিনিয়োগের সুযোগ খুব বেশি মানুষ নেয়নি।