২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেট সংসদে পেশ করছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। বৃহস্পতিবার (১ জুন) দুপুরে জাতীয় সংসদ অধিবেশনে অর্থমন্ত্রী বাজেট পেশ করেন। প্রতি বছরের মতো এবারও বেশকিছু জিনিসের দাম বেড়েছে নতুন অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে।
প্ল্যাস্টিকের গৃহস্থালি সামগ্রী: বাসাবাড়িতে ব্যবহৃত প্লাস্টিকের তৈরি টেবিলওয়্যার, কিচেনওয়্যারে মতো গৃহস্থালি সামগ্রী উৎপাদনে ভ্যাট বাড়িয়ে ৭ দশমিক ৫০ শতাংশ করা প্রস্তাব করা হয়েছে। বর্তমানে এ খাতে ভ্যাট দিতে হয় ৫ শতাংশ। নতুন করে ভ্যাট বাড়ানোর প্রস্তাব করায় ধারণা করা যায় এসব পণ্যের দাম বাড়বে।
অ্যালুমিনিয়ামের গৃহস্থালি সামগ্রী: অ্যালুমিনিয়ামের তৈরি হাঁড়িপাতিল, থালাবাসনসহ সব ধরনের তৈজসপত্রের ভ্যাট বাড়ছে। বর্তমানে এসব পণ্য উৎপাদনের ৫ শতাংশ হারে ভ্যাট নেয়া হয়। এবারের বাজেটে তা সাড়ে ৭ শতাংশ করার প্রস্তাব করা হয়েছে। ফলে এসব পণ্যের দাম বাড়তে পারে।
সব ধরনের টিস্যু: কিচেন টাওয়েল, টয়লেট ও ন্যাপকিন টিস্যু, ফেসিয়াল টিস্যু, পকেট টিস্যু ও পেপার টাওয়েল উৎপাদনে বর্তমানে ভ্যাট নেয়া হয় ৫ শতাংশ হারে। অর্থমন্ত্রী তার ভাষণে তা বাড়িয়ে ৭ দশমিক ৫০ শতাংশ করার প্রস্তাব করেছেন। ফলে বাড়তে পারে টিস্যু পেপারের দামও।
মাইক্রোওয়েভ ওভেন: ঠাণ্ডা খাবার গরম করে খেতে মাইক্রোওয়েভ ওভনের জুড়ি মেলা ভার। উচ্চবিত্ত তো বটেই, এখন মধ্যবিত্তের ঘরেও অপরিহার্য এ পণ্যটি। কিন্তু এবার খাবার গরম করতে বাড়াতে হবে পকেটের গরমও। কেননা সব ধরনের ওভেন আমদানির শুল্ক হার ৩০ শতাংশ বাড়ানোর প্রস্তাব করা হয়েছে। এটি বাস্তবায়ন হলে পণ্যটির মোট করহার হবে ৮৯ দশমিক ৩২ শতাংশ। এতে আমদানি করা ওভেনের দাম যে বাড়বে, তা অনুমান করাই যায়।
এলপি গ্যাস সিলিন্ডার: রান্নার কাজে এলপি গ্যাসের ব্যবহার শহরের গণ্ডি পেরিয়ে এখন গ্রামেও। জ্বালানি হিসেবে কাঠের ব্যবহার কমাতে এর বিকল্প মেলা ভার। কিন্তু বাজেটে এলপি গ্যাসের সিলিন্ডার উৎপাদনে ব্যবহৃত স্টিল ও ওয়েল্ডিং ওয়্যার আমদানিতে শুল্ক আরোপের প্রস্তাব করা হয়েছে। ভ্যাট বাড়ানো হচ্ছে উৎপাদন পর্যায়ে। আশঙ্কা করা হচ্ছে সিলিন্ডারের দাম বাড়বে।
বাসমতি চাল: ভোজন রসিকদের জিভে এবার লাগাম টানতে হবে। যেকোনো উৎসব-পার্বণে যারা কবজি ডুবিয়ে পোলাও-বিরিয়ানি খেতে পছন্দ করেন তাদের জন্য দুঃসবাদ দিলেন অর্থমন্ত্রী। কেননা এসব খাবার তৈরিতে জনপ্রিয় উপকরণ বাসমতি চাল আমদানিতে ভ্যাট বসানো হচ্ছে। ফলে বাড়তে পারে পোলাও বিরিয়ানি তৈরির খরচ।
কাজু বাদাম: স্বাস্থ্যকর খাবার হিসেবে কাজু বাদামের জনপ্রিয়তা দিন দিন বাড়ছে। সম্প্রতি দেশেও এর আবাদ হচ্ছে। দেশীয় উৎপাদনকে উৎসাহ দিতে কাজু বাদাম আমদানিতে শুল্ক ১৫ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ৪৩ শতাংশ করা হচ্ছে। তাই আমদানি করা কাজু বাদামের দাম বাড়তে পারে।
খেজুর: বিদেশি খেজুর এখন কেবল আর ইফতার সামগ্রীতে সীমাবদ্ধ নেই, সারা বছরই সুস্বাদু এ ফলটি খেয়ে থাকেন অনেকে। বাজেটে সব ধরনের খেজুর আমদানিতে ২৫ শতাংশ শুল্ক ছাড়াও ১৫ শতাংশ ভ্যাট আরোপ করা হচ্ছে। শুল্ক ফাঁকি রোধে এ পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে বলা হলেও, খেজুর খেতে যে গুনতে হবে বাড়তি অর্থ সে কথা বলাই যায়।
বিদেশি ফল: সব ধরনের বিদেশি ফল ও বাদামের আমদানি শুল্ক বাড়ানো হচ্ছে বিধায় ফল ও বাদামের দাম বাড়তে পারে।
সিগারেট: বাজেটে সব ধরনের সিগারেটের দাম বাড়ানোর প্রস্তাব করা হয়েছে। নিম্নস্তরের এক প্যাকেট (২০ শলাকার) সিগারেটের দাম ৯০ টাকা, মধ্যম স্তরের ১৩৪, উচ্চস্তরের ২২৬ এবং অতি উচ্চস্তরের সিগারেটের দাম ৩০০ টাকা করা হচ্ছে। তবে নিম্ন আয়ের মানুষের বিড়ির দাম অপরিবর্তিত থাকবে।
মোবাইল ফোন: ঘন ঘন মোবাইল সেট পরিবর্তন যাদের ফ্যাশনের অংশ তাদের জন্য দুঃসংবাদ। বাজেটে ভ্যাট আরোপের প্রস্তাব করায় বাড়তে এ পণ্যটির দাম। বর্তমানে মোবাইল ফোন সেট উৎপাদনে ভ্যাট অব্যাহতি রয়েছে। তবে প্রস্তাবিত বাজেটে ২ শতাংশ ভ্যাট বসানোর কথা বলা হয়েছে। আর সংযোজন পর্যায়ে ৩ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ৫ শতাংশ ভ্যাট আরোপ করা হচ্ছে। ফলে খুচরা পর্যায়ে বাড়তে পারে মোবাইল ফোনের দাম।