1. [email protected] : শেয়ার সংবাদ প্রতিবেদক : শেয়ার সংবাদ প্রতিবেদক
  2. [email protected] : শেয়ারসংবাদ.কম : শেয়ারসংবাদ.কম
  3. [email protected] : Zahir Islam : Zahir Islam
  4. [email protected] : muzahid : muzahid
  5. [email protected] : nayan : nayan
  6. [email protected] : khadija : khadija khadija
শুক্রবার, ২৪ জানুয়ারী ২০২৫, ০৩:৪৩ পূর্বাহ্ন

নাভানা-আফতাব থেকে পরিত্রাণ পাচ্ছে পুঁজিবাজারের ১৬ আর্থিক প্রতিষ্ঠান

  • আপডেট সময় : রবিবার, ২১ মে, ২০২৩
Navana-aftab

দেশের অন্যতম শিল্প গ্রুপ নাভানার বিপুল অঙ্কের দুর্দশাগ্রস্ত ঋণ টেকওভার (অধিগ্রহণ) করছে রাষ্ট্রায়ত্ত চার ব্যাংক সোনালী, জনতা, অগ্রণী ও রূপালী। ব্যাংকবহির্ভূত শেয়ারবাজারের ১৬টি আর্থিক প্রতিষ্ঠানের কাছে গ্রুপটির এই ধরনের ঋণ রয়েছে প্রায় ৮৫০ কোটি টাকা। এতে করে এসব আর্থিক প্রতিষ্ঠানের কাছে নাভানা গ্রুপের আর কোনো দায়স্থিতি থাকবে না।

শুধু তাই নয়, নাভানার সব ঋণ নিয়মিতকরণ সাপেক্ষে ব্যাংকগুলো কর্তৃক নতুনভাবে আরও ৮১০ কোটি টাকা ঋণ দেওয়ার সিদ্ধান্তও হয়েছে। অর্থাৎ রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন চার ব্যাংক নাভানার ৮৫০ কোটি টাকা ঋণের দায় এবং ৮১০ কোটি টাকার নতুন ঋণের দায়ভার নিচ্ছে।

নাভানা গ্রুপের আর্থিক সংকটের উত্তরণ (বেইলআউট) নিয়ে সম্প্রতি সংশ্লিষ্ট আর্থিক প্রতিষ্ঠান, রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংক ও বাংলাদেশ ব্যাংকের মধ্যে বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। ওই বৈঠকেই রাষ্ট্রায়ত্ত চার ব্যাংকের মাধ্যমে ঋণ টেকওভার ও নতুন ঋণ প্রদানের চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।

সংশ্লিষ্টরা জানান, বর্তমানে নাভানা গ্রুপের কোম্পানিগুলো যে পরিস্থিতিতে পড়েছে, সেখান থেকে ঘুরে দাঁড়ানো অনেকটাই কঠিন। এর পরও সরকারের শীর্ষপর্যায়ের আগ্রহে গ্রুপটিকে এই বিশেষ সুবিধা দেওয়া হচ্ছে। কিন্তু এসব সুবিধা নিয়েও যদি গ্রুপটি ঘুরে দাঁড়াতে ব্যর্থ হয়, তাহলে ব্যাংকগুলোর বিনিয়োগ পড়বে ঝুঁকিতে।

বিগত সময়ে দেখা গেছে, ব্যাংক খাতে ঋণ অধিগ্রহণের যেসব ঘটনা ঘটেছে, সে সবের বেশির ভাগই পরবর্তীকালে খেলাপিতে পরিণত হয়েছে।

জানা গেছে, আর্থিক অবস্থার অবনতি হলে সংকট উত্তরণের জন্য ২০১৯ সালের শেষের দিকে নাভানা গ্রুপ আর্থিক সহায়তার জন্য সরকারের কাছে আবেদন করে। আবেদনে দেশের বেসরকারি ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো থেকে নেওয়া শিল্প গ্রুপটির সব ঋণ রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলো কর্তৃক অধিগ্রহণের প্রস্তাব দেওয়া হয়।

গ্রুপটির ওই আবেদনের পরই এই বিষয়ে করণীয় নির্ধারণের জন্য অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে বাংলাদেশ ব্যাংকে প্রয়োজনীয় দিকনির্দেশনা দেওয়া হয়। এর আগে ব্যাংগুলোকেও অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে আলাদাভাবে দিকনির্দেশনা দেওয়া হয়।

সূত্র বলছে, আর্থিক প্রতিষ্ঠানের ঋণ অধিগ্রহণের প্রক্রিয়াতে গত বছরের আগস্ট পর্যন্ত অগ্রণী ব্যাংক লিড ব্যাংক হিসেবে কাজ করলেও এখন সেই দায়িত্ব পালন করছে জনতা ব্যাংক। আর শুরু থেকে এই প্রক্রিয়ায় মধ্যস্থতার ভূমিকা পালন করে আসছে বাংলাদেশ ব্যাংক।

জানা যায়, গত ৭ মে আর্থিক প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে নাভানা গ্রুপের ঋণ বেইলআউট নিয়ে চূড়ান্ত বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। এতে সভাপতিত্ব করেন বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নর আহমেদ জামাল।

বৈঠকে উপস্থাপিত তথ্য বলছে, শেয়ারবাজারের ১৬টি আর্থিক প্রতিষ্ঠানের কাছে নাভানা গ্রুপভুক্ত ৫টি প্রতিষ্ঠান আফতাব অটোমোবাইলস, নাভানা লিমিটেড, নাভানা রিয়েল এস্টেট, নাভানা কনস্ট্রাকশন ও নাভানা ব্যাটারিজের ঋণস্থিতি রয়েছে প্রায় ৮৬৫ কোটি টাকা। এর মধ্যে আফতাব অটোমোবাইলসের ১৯১ কোটি ৯১ লাখ, নাভানা লিমিটেডের ২৬৭ কোটি ৬০ লাখ, নাভানা রিয়েল এস্টেটের ১১৪ কোটি ৫৮ লাখ, নাভানা কনস্ট্রাকশনের ৩৭৬ কোটি ও নাভানা ব্যাটারিজের ১৫ কোটি ৪৩ লাখ টাকার ঋণ রয়েছে।

অন্যদিকে রাষ্ট্র মালিকানাধীন ৪টি বাণিজ্যিক ব্যাংকের কাছে এই ১৬টি আর্থিক প্রতিষ্ঠানের দায়স্থিতির (কলমানি ও ফান্ড প্লেসমেন্ট খাতে) পরিমাণ প্রায় ২ হাজার ৫৫০ কোটি টাকা। এর মধ্যে সোনালী ব্যাংকের ৫১২ কোটি টাকা, জনতা ব্যাংকের ৬০৭ কোটি টাকা, অগ্রণী ব্যাংকের ৬৮৭ কোটি টাকা এবং রূপালী ব্যাংকের ৭৪৬ কোটি টাকা। এরমধ্যে শেয়ারবাজারের ১৬ প্রতিষ্ঠানের বাইরে আরও ৪টি আর্থিক প্রতিষ্ঠান রয়েছে ।

এর আগে গত ৩০ মার্চ নাভানা গ্রুপের আর্থিক সংকট উত্তরণ (বেইলআউট) নিয়ে রাষ্ট্রায়ত্ত চার ব্যাংকের সঙ্গে বাংলাদেশ ব্যাংকের আরেকটি বৈঠক হয়। এতে সভাপতিত্ব করেন ডেপুটি গভর্নর আবু ফরাহ মো. নাছের। ওই বৈঠকেই মূলত ব্যাংকগুলো কর্তৃক নাভানা গ্রুপের আর্থিক প্রতিষ্ঠানে থাকা ঋণ অধিগ্রহণ ও গ্রুপটিকে নতুন ঋণ দেওয়ার সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত হয়।

শেয়ারবাজারের ১৬ আর্থিক প্রতিষ্ঠানের ঋণ
নাভানার ৫টি প্রতিষ্ঠানের কাছে ২০ এনবিআইয়ের ৯৬৫ কোটি টাকার ঋণ রয়েছে। এর মধ্যে সর্বোচ্চ ঋণ রয়েছে উত্তরা ফাইন্যান্সের ১৭৩ কোটি ৪৪ লাখ টাকা। এছাড়া জিএসপি ফাইন্যান্সের ১৪৯ কোটি ৬৪ লাখ, ফিনিক্স ফাইন্যান্সের ১৪০ কোটি ৪৯ লাখ, ফারইস্ট ফাইন্যান্সের ৫৫ কোটি ৬৪ লাখ, বাংলাদেশ ফাইন্যান্সের ৪৪ কোটি ৯৯ লাখ, বে লিজিংয়ের ২৫ কোটি ৬১ লাখ, ফার্স্ট ফিন্যান্সের ২৯ কোটি ২১ লাখ, আইডিএলসির ৫৯ কোটি ৬১ লাখ, ইন্টারন্যাশনাল লিজিংয়ের ৯ কোটি ৬৫ লাখ, ইসলামিক ফাইন্যান্সের ২২ কোটি, মাইডাস ফাইন্যান্সের ২৪ কোটি, ন্যাশনাল হাউজিংয়ের ১৩ কোটি ২১ লাখ, পিপলস লিজিংয়ের ৪২ কোটি ২৮ লাখ, প্রিমিয়ার লিজিংয়ের ৩০ কোটি ১৯ লাখ, ইউনিয়ন ক্যাপিটালের ৪৮ কোটি ৬৫ লাখ ও এফএএস ফাইন্যান্সের ৪৫ লাখ টাকার ঋণ রয়েছে।

এরপরও রয়েছে খেলাপি ঋণ
আর্থিক প্রতিষ্ঠানে থাকা নাভানা গ্রুপের যেসব ঋণ ব্যাংকগুলো কর্তৃক অধিগ্রহণের সিদ্ধান্ত হয়েছে, সেগুলো সব নিয়মিত নয়। প্রতিষ্ঠানভেদে ঋণগুলো স্ট্যান্ডার্ড, বিশেষ উল্লেখ হিসাব, সাব-স্ট্যান্ডার্ড ও মন্দমান হিসেবে রয়েছে। ব্যাংক কোম্পানি আইন অনুযায়ী কোনো খেলাপি ঋণ গ্রহীতার অনুকূলে কোনো ব্যাংক কোম্পানি বা আর্থিক প্রতিষ্ঠানের কোনোরূপ ঋণসুবিধা প্রদানের সুযোগ নেই। এই কারণে গত মার্চে বাংলাদেশ ব্যাংকে অনুষ্ঠিত ওই বৈঠকে এই চার ব্যাংক কর্তৃক নাভানা গ্রুপকে নতুন ঋণ মঞ্জুরির শর্ত হিসেবে সর্বপ্রথম স্ব-উদ্যোগে তাদের খেলাপি ঋণগুলো নিয়মিতকরণের উদ্যোগ গ্রহণ করার বিষয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়।

এই বিষয়ে নাভানা গ্রুপের নির্বাহী পরিচালক মাসুদ আহমেদ খাঁন বাংলাদেশ ব্যাংকে জানিয়েছেন, আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোতে থাকা চলমান ঋণগুলোর মধ্য হতে কিছু ঋণ পরিশোধের মাধ্যমে নিয়মিতকরণ করা হয়েছে এবং কিছু ঋণ মহামান্য হাইকোর্টের স্টে অর্ডারের মাধ্যমে অশ্রেণিকৃত রয়েছে, যার মেয়াদ ২০২৩ সালের জুলাই পর্যন্ত বহাল রয়েছে।

সুদের হারেও ছাড়
বর্তমানে আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোতে ঋণের সুদহারের সীমা ১১ শতাংশ। অন্যদিকে ব্যাংকগুলোর জন্য তা ৯ শতাংশ। ফলে আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর সঙ্গে নাভানা গ্রুপভুক্ত ৪টি প্রতিষ্ঠানের ৯৫০ কোটি ১২ লাখ টাকার ঋণ ব্যাংকগুলো কর্তৃক অধিগ্রহণ করা হলে নাভানা গ্রুপের জন্য তা সুদসাশ্রয়ী হবে। অন্যদিকে ঋণ অধিগ্রহণে খরচ বাড়বে ব্যাংকগুলোর।

লাভবান হবে ২০ আর্থিক প্রতিষ্ঠানও
এই ২০টি আর্থিক প্রতিষ্ঠানের মধ্যে অধিকাংশেরই তারল্য সংকট রয়েছে। এ কারণে নাভানা গ্রুপভুক্ত ৪টি প্রতিষ্ঠানের ঋণ অধিগ্রহণ বাবদ ৯৫০ কোটি টাকার মধ্য হতে অর্ধেক (৪৭৫ কোটি) টাকা ২০টি আর্থিক প্রতিষ্ঠানে নগদ প্রবাহ হিসেবে প্রদানের সিদ্ধান্ত হয়েছে। ফল এসব প্রতিষ্ঠানের কিছুটা হলেও তারল্য প্রবাহ সৃষ্টি হবে। বাকি অর্ধেক (৪৭৫ কোটি) টাকা দিয়ে আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোতে থাকা রাষ্ট্রায়ত্ত এই চার ব্যাংকের দায়স্থিতি (টার্ম লোন, কলমানি ও ফান্ড প্লেসমেন্ট খাতে) সমন্বয় করা হবে।

শেয়ার দিয়ে সবাইকে দেখার সুযোগ করে দিন

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ