শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত তিন কোম্পানির বিনিয়োগকারীদের আস্থার পরিবর্তে শঙ্কা বাড়ছে। কোম্পানি তিনটি আজ প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) দর পতনের শীর্ষ তালিকায় শীর্ষ পর্যায়ে উঠে এসেছে। কোম্পানি তিনটি হলো-সী পার্ল রিসোর্ট, লিগ্যাছি ফুটওয়ার ও রূপালী লাইফ ইন্সুরেন্স।
সী পার্ল রিসোর্ট: সী পার্ল রিসোর্ট এবছর জুড়েই মুনাফায় তেলেসমাতি দেখাচ্ছে। চলতি অর্থবছরের প্রথম তিন প্রান্তিকে (জুলাই’২২-মার্চ’২৩) কোম্পানিটি শেয়ারপ্রতি মুনাফা দেখিয়েছে ৬ টাকা ৬৩ পয়সা। যা আগের বছর একই সময়ে ছিল ১ টাকা ০৭ পয়সা। কোম্পানিটির মুনাফার খবর আসার পর বাজারে গুঞ্জন ছড়ানো হয়, কোম্পানিটির শেয়ার ৪০০ টাকা অতিক্রম করবে। কিন্তু ৩২০ টাকার ঘরে গিয়েই কোম্পানিটির শেয়ার পিছুটান দেয়। গুঞ্জন ছড়ানোর মধ্যেই কোম্পানিটির শেয়ারের প্লেয়াররা চড়া দরে শেয়ারটি সাধারণ বিনিয়োগকারীদের কাঁধে চাপিয়ে চম্পট দিতে থাকে-এমনটাই অভিযোগ করেছেন বাজার সংশ্লিষ্টরা। তবে আর একটি অংশ বলছেন, শেয়ারটি ফের ঊর্ধ্বমুখী হবে। তাদের মতে, শেয়ারটি অন্তত ৩০০ টাকার ঘর অতিক্রম করবে। এখন প্লেয়াররা আতঙ্ক ছড়িয়ে শেয়ারটি হাতিয়ে নিচ্ছেন।
৩০ জুন, ২০২২ সমাপ্ত অর্থবছরে কোম্পানিটি ১৫ শতাংশ ক্যাশ ডিভিডেন্ড দিয়েছে। সমাপ্ত অর্থবছরে কোম্পানিটির শেয়ারপ্রতি আয় (ইপিএস) হয়েছে ১ টাক ৩৪ পয়সা। আগের বছর একই সময়ে ইপিএস ছিল ৬১ পয়সা।
ইতোমধ্যে কোম্পানিটির মালিকরা শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত বিডি ওয়েল্ডিংয়ের মালিকানা কিনে নিয়েছেন। কোম্পানিটি এখন উৎপাদনে ফেরার প্রক্রিয়ায় রয়েছে। এছাড়া, শামীম রিফ্রেজেরটের নামক একটি কোম্পানির মালিকানা অধিগ্রহণ করেছে। সব মিলিয়ে কোম্পানিটির নানা রকম মূল্য সংবেদনশীল তথ্য রয়েছে। তারপরও কোম্পানিটির শেয়ারে নেতিবাচক প্রবণতা অব্যাহত রয়েছে। গত সপ্তাহেও শেয়ারটি ক্রেতাশুন্য ছিল। আজও দিনের মধ্যভাগে শেয়ারটি ক্রেতাশুন্য হয়ে যায়।
লিগ্যাছি ফুটওয়ার: কোম্পানিটি পরিশোধিত মূলধন ৩০ কোটি টাকায় উন্নীত করার ঘোষণা দিয়েছে। এজন্য কোম্পানিটি প্রতিটি শেয়ার ১০ টাকা মূল্যে ৩ কোটি শেয়ার ইস্যু করবে। যা বিদ্যমান শেয়ারহোল্ডার এবং অন্যান্য শেয়ারহোল্ডারদের কাছে ইস্যু করা হবে।
বর্তমানে লিগ্যাসি ফুটওয়্যারের পরিশোধিত মূলধনের পরিমাণ ১৩ কোটি ৮ লাখ টাকা। যা বিএসইসির সম্মতি অনুযায়ি ৩০ কোটি বৃদ্ধি শেষে দাঁড়াবে ৪৩ কোটি ৮ লাখ টাকায়।
কিন্তু বিএসইসির অনুমতির খবর আসার আগেই কোম্পানিটির শেয়ার ৩৯ টাকা থেকে ৯৮ টাকায় উঠে যায়। যেদিন বিএসইসির অনুমোদনের খবর আসে, সেদিন কোম্পানির শেয়ারে বড় পতন দেখা যায়। অর্থাৎ ইনসাইডার ট্রেডিংয়ের মাধ্যমে কোম্পানিটির প্লেয়াররা শেয়ারটির দাম আগেই আকাশচুম্বী করে তোলে। এরপর বিএসইসির অনুমোদনের খবর আসার দিন থেকে বিনিয়োগকারীদের কাঁধে শেয়ারটি চাপাতে থাকে। তারপর থেকেই কোম্পানিটির শেয়ার দরে নেতিবাচক প্রবণতা অব্যাহত থাকে। আজ শেয়ারটির দামে বড় পতন দেখা যায়। এতে শেয়ারটির বিনিয়োগকারীরা শঙ্কিত হয়ে পড়েন।
রূপালী লাইফ ইন্সুরেন্স: জীবন বিমার শেয়ারটিকে অনেক দিন যাবত ডিএসইতে ভলিউম লিডারে স্থান করে নিতে দেখা যায়। শেয়ারবাজারে পতনের ডামাডোলে শেয়ারটির দাম এক পর্যায়ে ৭৫ টাকায় নেমে আসে। তারপর ধীরে ধীরে ফের বাড়তে থাকে। গত মার্চের মাঝামাঝি শেয়ারটি ১২০ টাকায় লেনদেন হয়। তারপর পতনের সংশোধনের ধারায় থাকে। মার্চের শেষ সপ্তাহে শেয়ারটির দাম ৯০ টাকার নিচে নেমে যায়। তারপর আবার ঊর্ধ্বমুখী হয়। এপ্রিলের শেষ সপ্তাহে শেয়ারটি ১০৫ টাকার ওপরে লেনদেন হয়। তখন বাজারে গুঞ্জন ছড়ানো হয়, শেয়ারটির দাম শিগগির ১৫০ টাকা অতিক্রম করবে। কিন্তু শেয়ারটির দাম ঊর্ধ্বমুখী হওয়ার পরিবর্তে নিম্নমুখী প্রবণতায় ধাবিত হয়। আজ শেয়ারটির দামে বড় পতন দেখা যায়। রূপালী লাইফ আজ ডিএসইতে দর পতনের শীর্ষ তালিকায় ৪র্থ নম্বরে উঠে আসে। আজ শেয়ারটির পতনের বড় ধাক্কায় বিনিয়োগকারীরা স্বম্ভিত হয়ে পড়ে।