ঈদের পর গত সপ্তাহে শেয়ারবাজারের লেনদেনে চার কার্যদিবসেই ঊর্ধ্বমুখীতার প্রবণতা লক্ষ্য করা গেছে। সবকটি মূল্যসূচকের সঙ্গে দাম বেড়েছে বেশি সংখ্যক প্রতিষ্ঠানের শেয়ারের। বেড়েছে টাকার অংকে লেনদেন এবং বাজার মূলধন। ভালো লভ্যাংশ দেওয়া ও মুনাফা বৃদ্ধি পাওয়া কোম্পানিতে বিনিয়োগকারীদের ঝোঁক লক্ষ্য করা গেছে।
গত সপ্তাহে প্রধান ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) বাজার মূলধন ২ হাজার কোটি টাকার ওপরে বেড়েছে। প্রধান মূল্যসূচক বেড়েছে দশমিক ৭৩ শতাংশ। আর দৈনিক গড় লেনদেন বেড়েছে ৫২ শতাংশের বেশি।
তবে অর্ধেকের বেশি প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ক্রেতা সংকট ছিল গত সপ্তাহজুড়েই। ফলে দুইশ এর বেশি প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিটের দাম ফ্লোর প্রাইসে আটকা রয়েছে। ক্রেতা না থাকায় ফ্লোর প্রাইসে আটকে থাকা এসব প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিট বিক্রি করতে পারছেন না বিনিয়োগকারীরা।
বরাবরের মতো লেনদেনে গুটিকয় কোম্পানির আধিপত্য ছিল। টাকার অঙ্কে গত বৃহস্পতিবার প্রায় ৬২ শতাংশ লেনদেন হয়েছে লেনদেনের শীর্ষে থাকা ২০ শেয়ারের। ব্লক মার্কেটের লেনদেনসহ একক কোম্পানি হিসেবে লেনদেনের শীর্ষে ছিল ইসলামী ব্যাংক। এ ব্যাংকটির গত বৃহস্পতিবার ১১১ কোটি ৬৪ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেনের মধ্যে পাবলিক মার্কেটের লেনদেনের পরিমাণ ছিল মাত্র ৪ লাখ টাকা। এর পরের অবস্থানে থাকা জেনেক্স ইনফোসিসের ৪৫ কোটি ৩১ লাখ টাকার এবং ইউনিক হোটেলের ৪৪ কোটি ৬৬ লাখ টাকার শেয়ার কেনাবেচা হয়েছে। একক খাত হিসেবে খাদ্য ও আনুষঙ্গিক খাতের ১৫৭ কোটি টাকার লেনদেন ছিল সর্বোচ্চ, যা মোট লেনদেনের সোয়া ১৬ শতাংশ।
শেয়ারবাজার সংশ্লিষ্টরা জানান, কিছুদিন ধরে শেয়ারবাজার ঊর্ধ্বমুখী ধারায় আছে। বেশ কিছু শেয়ারের দাম ক্রমান্বয়ে বাড়ছে। নিষ্ক্রিয় বিনিয়োগকারীদের কেউ কেউ নতুন করে শেয়ার বিষয়ে খোঁজখবর নিচ্ছেন। অনেকে আগামী দিনের বাজার পরিস্থিতি নিয়ে আশাবাদী। ফলে নতুন করে বিনিয়োগে আগ্রহ বাড়ছে।
একটি ব্রোকারেজ হাউসের সিইও বলেন, মার্চ প্রান্তিক শেষে কিছু কোম্পানি মুনাফা বাড়ার তথ্য দিয়েছে। কিছু ব্যাংক ভালো লভ্যাংশও ঘোষণা করেছে। এসব দিকও বিনিয়োগকারীদের নতুন করে বিনিয়োগে আকৃষ্ট করছে। তা ছাড়া দীর্ঘদিন মন্দায় থাকার পর কিছু শেয়ারের দরও অনেকে বিনিয়োগের জন্য আকর্ষণীয় বলে বিবেচনা করছেন। সার্বিকভাবে সবকিছু ইতিবাচক অবস্থায় আছে।
গত সপ্তাহের শেষ কার্যদিবসের লেনদেন শেষে ডিএসইর বাজার মূলধন দাঁড়িয়েছে ৭ লাখ ৬৬ হাজার ৫৭ কোটি টাকা। যা তার আগের সপ্তাহের শেষ কার্যদিবসে ছিল ৭ লাখ ৬৩ হাজার ৮৮৮ কোটি টাকা। অর্থাৎ গত সপ্তাহে ডিএসইর বাজার মূলধন বেড়েছে ২ হাজার ১৬৯ কোটি টাকা। বাজার মূলধন বাড়ার অর্থ তালিকাভুক্ত প্রতিষ্ঠানগুলোর শেয়ার ও ইউনিটের দাম সম্মেলিতভাবে ওই পরিমাণ বেড়েছে।
এদিকে গত সপ্তাহজুড়ে ডিএসইতে মোট ৩৮৪টি প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিট লেননেদ হয়েছে। লেনদেনে অংশ নেওয়া এ প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে ১১৩টির শেয়ার ও ইউনিট দাম বাড়ার তালিকায় নাম লিখিয়েছে। বিপরীতে দাম কমেছে ৩৩টির। আর ২৩৮টির দাম অপরিবর্তিত রয়েছে।
এতে ডিএসইর প্রধান মূল্যসূচক ডিএসইএক্স বেড়েছে ৪৫ দশমিক ৪১ পয়েন্ট বা দশমিক ৭৩ শতাংশ। আগের সপ্তাহে সূচকটি বাড়ে ১৩ দশমিক ৪৭ পয়েন্ট বা দশমিক ২২ শতাংশ। এর মাধ্যমে টানা চার সপ্তাহ ডিএসইর প্রধান সূচক বাড়লো।
প্রধান মূল্যসূচকের সঙ্গে বেড়েছে বাছাই করা ভালো কোম্পানি নিয়ে গঠিত ডিএসই-৩০ সূচক। সপ্তাহজুড়ে সূচকটি বেড়েছে ৫ দশমিক ৭২ পয়েন্ট বা দশমিক ২৬ শতাংশ। আগের সপ্তাহে সূচকটি বাড়ে দশমিক ৯২ পয়েন্ট বা দশমিক শূন্য ৪ শতাংশ।
ইসলামী শরিয়াহ ভিত্তিতে পরিচালিত কোম্পানি নিয়ে গঠিত ডিএসই শরিয়াহ্ সূচকও বেড়েছে। সপ্তাহজুড়ে সূচকটি বেড়েছে ১৩ দশমিক ৫০ পয়েন্ট বা ১ শতাংশ। আগের সপ্তাহে সূচকটি বাড়ে ১ দশমিক ৮৯ পয়েন্ট বা দশমিক ১৪ শতাংশ।
সপ্তাহের প্রতি কার্যদিবসে ডিএসইতে গড়ে লেনদেন হয়েছে ৭৪৯ কোটি ৬৭ লাখ টাকা। আগের সপ্তাহে প্রতিদিন গড়ে লেনদেন হয় ৪৯১ কোটি ৬৭ লাখ টাকা। অর্থাৎ প্রতি কার্যদিবসে গড় লেনদেন বেড়েছে ২৫৮ কোটি টাকা বা ৫২ দশমিক ৪৭ শতাংশ।
আর গত সপ্তাহজুড়ে ডিএসইতে মোট লেনদেন হয়েছে ২ হাজার ৯৯৮ কোটি ৭০ লাখ টাকা। আগের সপ্তাহে মোট লেনদেন হয় ১ হাজার ৪৭৫ কোটি ৩ লাখ টাকা। সে হিসেবে মোট লেনদেন বেড়েছে ১ হাজার ৫২৩ কোটি ৬৭ লাখ টাকা বা ১০৩ দশমিক ৩০ শতাংশ। মোট লেনদেন বেশি হারে বাড়ার কারণ ঈদের আগের শেষ সপ্তাহে শেয়ারবাজারে তিন কার্যদিবস লেনদেন হয়।
ডিএসইতে গত সপ্তাহে টাকার অঙ্কে সব থেকে বেশি লেনদেন হয়েছে ইউনিক হোটেলের শেয়ার। সপ্তাহজুড়ে কোম্পানিটির শেয়ার লেনদেন হয়েছে ২০৮ কোটি ৬২ লাখ ৫৬ হাজার টাকা, যা মোট লেনদেনের ৬ দশমিক ৯৬ শতাংশ। দ্বিতীয় স্থানে থাকা ইস্টার্ন হাউজিংয়ের শেয়ার লেনদেন হয়েছে ১৪৮ কোটি ৫১ লাখ ৬২ হাজার টাকা। ১৩৪ কোটি ৩৫ লাখ ১২ হাজার টাকা লেনাদেনের মাধ্যমে তৃতীয় স্থানে রয়েছে জেনেক্স ইনফোসিস।
এছাড়া লেনদেনের শীর্ষ দশ প্রতিষ্ঠানের তালিকায় রয়েছে-সি পার্ল বিচ রিসোর্ট, অলেম্পিক ইন্ডাস্ট্রিজ, অ্যাপেক্স ফুটওয়্যার, আমরা নেটওয়ার্ক, জেমিনি সি ফুড, বাংলাদেশ শিপিং করপোরেশন এবং ওরিয়ন ইনফিউশন।