পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত ৪২ কোম্পানির উদ্যোক্তা পরিচালকদের সম্মিলিতভাবে ৩০ শতাংশ (পরিশোধিত মূলধনের) শেয়ার ধারণের নির্দেশ দিয়েছে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)। শেয়ার সংগ্রহের জন্য আগামী ১৩ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত সময়সীমাও বেঁধে দিয়েছে প্রতিষ্ঠানটি। এই সময়ের মধ্যে কোম্পানিগুলো যদি ৩০ শতাংশ শেয়ার ধারণের ঘাটতি পূরণে ব্যর্থ হয়, তাহলে আইনগত ব্যবস্থা নেয়ার আল্টিমেটাম দিয়েছে সংস্থাটি।
এর আগে গত ২৯ জুলাই ৩০ শতাংশ শেয়ার ধারণের নির্দেশনা দিয়ে কোম্পানিগুলোর বরাবরে চিঠি দিয়েছে বিএসইসি। চিঠি ইস্যুর ১৫ দিনের মধ্যে শেয়ার কেনার ঘোষণা দেয়ার বাধ্যবাধকতাও জুড়ে দিয়েছে প্রতিষ্ঠানটি।
জানা যায়, সম্মিলিতভাবে ৩০ শতাংশ শেয়ার ধারণ না করার ৪২ কোম্পানির মধ্যে ব্যাংক ও নন-ব্যাংকিং আর্থিক খাতের কোম্পানি রয়েছে ৪টি। এর মধ্যে ব্যাংক খাতে রয়েছে সাউথইস্ট ব্যাংক ও সিটি ব্যাংক এবং নন-ব্যাংকিং খাতে খাতে রয়েছে ফাস (এফএএস) ফাইন্যান্স ও বে-লিজিং।
ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) সূত্রে জানা যায়, বর্তমানে সাউথইস্ট ব্যাংকের সম্মিলিত শেয়ার রয়েছে ২৫.১৩ শতাংশ এবং সিটি ব্যাংকের রয়েছে ২৭.৯২ শতাংশ। অন্যদিকে, ফাস ফাইন্যান্সের সম্মিলিত শেয়ার রয়েছে ১৩.২০ শতাংশ এবং বে-লিজিংয়ের রয়েছে ২৯.৬৪ শতাংশ।
এতে দেখা যায়, সাউথ ইস্ট ব্যাংকের উদ্যেক্তা পরিচালকদের সংগ্রহ করতে হবে ৪.৮৭ শতাংশ শেয়ার বা ৫ কোটি ৬৪ লাখ ৮৯ হাজার ১৭৫টি শেয়ার। যার বাজার মূল্য প্রায় ৬৬ কোটির বেশি। আর সিটি ব্যাংকের উদ্যেক্তা পরিচালকদের সংগ্রহ করতে হবে ২.০৮ শতাংশ শেয়ার বা ২ কোটি ১১ লাখ ৪০ হাজার ৮৪৩টি শেয়ার। যার বাজার মূল্য প্রায় ৩৭ কোটি টাকা
অন্যদিকে, ফাস ফাইন্যান্সকে সংগ্রহ করতে হবে ১৬.৮০ শতাংশ শেয়ার বা ২ কোটি ৫০ লাখ ৪৪ হাজার ৯৯৮টি শেয়ার। যার বাজার মূল্য প্রায় ১২ কোটি ৩০ লাখ টাকা। আর বে-লিজিংকে সংগ্রহ করতে হবে ০.৩৬ শতাংশ শেয়ার বা ৪ লাখ ৯৪ হাজার ৮২৮টি শেয়ার। যার বাজার মূল্য ৫৮ লাখ টাকার বেশি।
আর্থিক খাতের এই চার কোম্পানির ৩০ শতাংশ ধারণ করার জন্য যে পরিমাণ শেয়ার সংগ্রহ করতে হবে, তার বর্তমান বাজার মূল্য প্রায় ১১৬ কোটি টাকা।
এ প্রসংগে ডিএসইর একজন পরিচালক বলেন, খায়রুল কমিশন সব আইনী প্রক্রিয়া সম্পন্ন করার পরও নতজানু নীতির কারণে কোম্পানিগুলোকে ৩০ শতাংশ শেয়ার ধারণে বাধ্য করতে পারেনি। তিনি বলেন, আশার কথা হল পুঁজিবাজারে শৃংখলা ফেরাতে শিবলী রুবাইত ইসলামের নেতৃত্বাধীন বর্তমান কমিশন শুরু থেকেই শক্ত পদক্ষেপে এগুচ্ছেন। কোম্পানিগুলোর মালিকরা যতই শক্তিশালী হোক, এবার তারা ছাড় পাবে না। তিনি বলেন, তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলোর ন্যুনতম শেয়ার ৩০ শতাংশ নিশ্চিত করা গেলে সুশাসন প্রতিষ্ঠায় পুঁজিবাজার এক ধাপ এগিয়ে যাবে।
ডিএসইর ওই পরিচালক জানান, বিএসইসির আলটিমেটাম জানার পর যেসব কোম্পানির সম্মিলিত শেয়ার ৩০ শতাংশ নেই, সেসব কোম্পানির শেয়ার লেনদেনে হঠাৎ উল্লম্ফন দেখা দিয়েছে। কোম্পানিগুলোর শেয়ারের প্রতি বিনিয়োগকারীদের আগ্রহ হঠাৎ বেড়ে গেছে। যে কারণে কোম্পানিগুলোর লেনদেনে হঠাৎ করে বড় ধরণের গতি দেখা দিয়েছে।
মার্কেন্টাইল ব্যাংক সিকিউরিটিজের প্রবীণ ও অভিজ্ঞ বিনিয়োগকারী হেলাল হোসেন বলেন, ২০০৮-১০ সালে মার্কেট যখন তুঙ্গে ছিল, তখন কোম্পানিগুলোর উদ্যোক্তারা চড়া দরে তাদের শেয়ার বিক্রি করে দিয়েছেন। এখন ‘পানির দরে’ সেসব শেয়ার কিনে নিবেন। তাদেরতো কোন লোকসান নেই। বরং তারা অনেক লাভবান। লোকসান আমাদের মতো সাধারণ বিনিয়োগকারীদের। যখন শেয়ার দর চড়া ছিল, আমরা তখন কিনেছি। এখন শেয়ারের দর যখন তলানিতে, এখন আবার বিক্রি করছি।
এ বিষয়ে ডিএসইর এক কর্মকর্তা বলেন, ‘ব্যাংক, লিজিং ও বীমা খাতের যেসব কোম্পানির সম্মিলিত শেয়ার ৩০ শতাংশ নেই, সেসব কোম্পানির পরিচালকরা শেয়ার কেনার প্রক্রিয়া সম্পর্কে খবরা-খবর নিতে শুরু করেছেন। তিনি বলেন, এসব খাতের উদ্যোক্তা পরিচালকদের শেয়ার কেনার ঘোষণা এখন সময়ের ব্যাপার মাত্র। এসব খাতের কোম্পানিগুলোর পরিচালকরা কোনভাবেই পদ হারাতে চাইবেন না। কারণ এসব খাতের কোম্পানিগুলোর পরিচালকের পদতো ‘সোনার হরিণের মতো।’
উল্লেখ্য, তালিকাভুক্ত ৪১ কোম্পানির মধ্যে বীমা খাতের কোম্পানি মেঘনা লাইফের এক পরিচালক এক লাখ শেয়ার কেনার ঘোষণা দিয়েছেন। ব্যাংক ও নন-ব্যাংকিং আর্থিক খাতের কোন কোম্পানির পরিচালকরা এখনো শেয়ার কেনার ঘোষণা দেননি।