এ বছরের ১২ জুন; পুঁজিবাজারে বিনিয়োগকারীদের জন্য ব্লু-সিপ নামে নতুন একটি প্রডাক্ট- বাজারে নিয়ে আসে বাংলাদেশ ফাইন্যান্স ক্যাপিটাল। প্রডাক্টটির উদ্বোধন করেন বাংলাদেশ ফাইন্যান্সের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ কায়সার হামিদ। এ বিষয়ে জনপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল সানবিডির সাথে কথা বলেছেন, বাংলাদেশ ফাইন্যান্স ক্যাপিটাল লিমিটেড এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা বরুন প্রসাদ পাল।
বাংলাদেশ ফাইন্যান্স ক্যাপিটালের নতুন একটি প্রডাক্ট শেয়ার বাজারে এসেছে বলে আমরা জানতে পেরেছি। এ বিষয়ে বিনিয়োগকারীদের উদ্দেশ্যে কিছু বলেন।
বরুন প্রসাদ: সঞ্চয় এবং বিনিয়োগের মধ্যে একটা বড় ধরনের পার্থক্য আছে। বাংলাদেশে সঞ্চয়ের সুবিধাগুলো খুব ব্যাপকভাবে প্রচলিত এবং কাস্টমারদের কাছে সুপরিচিত। যেমন- সঞ্চয়পত্র, ব্যাংক ডিপোজিট, পোস্টাল সেভিংস সার্টিফিকেট। কিন্তু বিনিয়োগের জায়গাতে খুব সীমিত সুযোগ আছে। বিনিয়োগ বলতে আমরা সাধারণত বুঝি যেটা মূল্যস্ফিতি শুধু সমন্বয় করে না; ভবিষ্যতে একটা গ্রাহকের বা একজন সঞ্চয়কারীর একটা বড় ধরনের সম্পদ পুঞ্জিভূত করার সুযোগ দেয়; সম্পদ তৈরি করার ক্ষেত্রে সুযোগ করে দেয়। এই সঞ্চয়কে বিনিয়োগে রুপান্তর করার জন্যই ক্ষুদ্র যারা সঞ্চয়কারী আছেন তাদের জন্য বাংলাদেশ ফাইন্যান্স ক্যাপিটাল নিয়ে এসেছে ‘‘সিস্টেমেটিক ইনভেস্টমেন্ট প্লান’’ যার নাম দেয়া হয়েছে ব্লু-সিপ। বিষয়টাকে যদি আমরা এভাবে ব্যাখ্যা করি তাহলে দাঁড়াবে যে- পুঁজিবাজার হচ্ছে ঝুঁকিপূর্ণ এবং যারা সাধারণ ও ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারী তাদের পুঁজিবাজার বিষয়ক সম্যক জ্ঞানের সুযোগ একেবারেই সীমিত; তাদের ক্ষেত্রে খুব বেশী একটা প্রফেশনাল সার্ভিস পর্যাপ্ত নয় বল্লেই চলে। সাধরণত বড় বড় শেয়ার হোল্ডার বা বিনিয়োগকারীর ক্ষেত্রে বিভিন্ন ধরনের সেবা বাজারে কিছুটা হলেও প্রচলিত আছে। ঠিক ক্ষুদ্র সঞ্চয়কারীদের জন্য ক্যাপিটাল মাকের্টের বিনিয়োগের ক্ষেত্রে তার নিজস্ব সম্পৃক্ততা না এনে পুরো ঝুঁকিটাকে তলানীতে রেখে পদ্ধতিগতভাবে একটি সুচারু বিনিয়োগের মাধ্যমে একটা ক্ষুদ্র সঞ্চয়কে বৃহৎ অংকে পরিণত করার প্রডাক্টটা হচ্ছে সিস্টেমেটিক ইনভেস্টমেন্ট প্লান এবং সেটাই বাংলাদেশ ফাইন্যান্স ক্যাপিটাল নিয়ে এসেছে সাধারণ গ্রাহকদের জন্য- নাম হয়েছে ব্লু-সিপ।
ক্ষুদ্র বিনিয়োগ বলতে কত টাকা? নিরাপদ বিনিয়োগের বিষয়টিই বা কী?
বরুন প্রসাদ: সর্বনিম্ম প্রতিমাসে মাত্র ৩ হাজার টাকা জমা করে বিনিয়োগকারী আমাদের স্কিম নিতে পারবেন। ওই স্কিমের এক বা একাধীক বিনিয়োগ দিয়ে প্রতিমাসেই কেনা হবে মৌলভিত্তিক শেয়ার এবং ধারাবাহিক ক্রয়ের মাধ্যমে সেরা গড় মূল্য তৈরি হবে যা পরবর্তীতে মেয়াদান্তে ভালো মুনাফা দিবে। এই পুরো প্রক্রিয়াটি দেখভাল করার জন্য রয়েছে বাংলাদেশ ফাইন্যান্স ক্যাপিটালের একটি বিশেষজ্ঞ প্যানেল। প্যাকেজটির স্থায়ীত্ব হবে ৩ থেকে ১০ বছর।
বরুন প্রসাদ: আমি শুরুতেই বলেছি- পুঁজিবাজারে যারা বিনিয়োগ করেন তাদের অধিকাংশই অনভিজ্ঞ; এমনকী অভিজ্ঞ বলে দাবি করা ব্যক্তিরাও ততটা বোঝেন না বলেই ক্ষতির সম্মুখীন হতে হয় সাধারণ বিনিয়োগকারীকে। এমন সমস্যার সমাধান করতেই সত্যিকার গবেষকদের সমন্বয়ে এই প্রডাক্টটির পরিকল্পনা করা হয়েছে। বাংলাদেশ ফাইন্যান্স ক্যাপিটাল তার গ্রুপের একদল অ্যানালিস্ট, যারা আর্থিক ব্যবস্থা সম্পর্কে সম্যক ধারণা রাখেন এমন ব্যাংকার, ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা কমিটির সদস্যসহ বিশেষজ্ঞরা এসব পোর্টফলিও ম্যানেজ করবে এবং ছোট সঞ্চয়কারীরাও এ সুবিধা পাবে। ইতোমধ্যে পুঁজিবাজার নিয়ে এই গবেষণা পরীক্ষিত এবং এর ফল বেশ ইতিবাচক বলেই প্রডাক্টির ব্যাপারে আমরা দৃঢ় প্রতিজ্ঞ। ছোট ছোট বিনিয়োগের ব্যাপারে ক্যাপিটালগুলো বেশী গুরুত্ব দেয় না; বিধায় একটি বাল্ক পরিমান টাকার সমন্বয়ে এই প্যানেলকে কাজে লাগাতেই তাদের পরিকল্পনা কাজ করবে। বাংলাদেশ ফাইন্যান্স ক্যাপিটালের একটা ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা কাঠামো আছে, একটা ডাইভার্সিফাইড টিম আছে- যাদের মধ্যে উদ্যোক্তা, ইনভেস্টমেন্ট কমিটির উদ্যোক্তা, সিনিয়র চার্টার্ড একাউন্টেন্ট, সিএফএ হোল্ডার এবং ক্যাপিটাল মার্কেটে দীর্ঘদিন ধরে কাজ করছেন; এমন ব্যক্তিত্ব আছেন বিধায় সবার সমন্বয়ে একটা কাঠামোগত পদ্ধতিতে এই পোর্টফলিও সেবাটা দেয়া হবে।
আর কী কী সুবিধা পেতে পারেন বিনিয়োগকারীরা?
বরুন প্রসাদ: বড় বিনিয়োগকারীরাও কমপক্ষে ৩ লাখ টাকা বিনিয়োগ করতে পারবেন ব্লু-সিপ এ; এই বিনিয়োগের অভিজ্ঞ পোর্টফলিও ব্যবস্থাপকেরা ব্যবস্থাপনার দায়িত্বে থাকবেন। সাধারণত মূল্যস্ফিতিকে সমন্বয় করে যে সঞ্চয় হয় তার পরিমাণ অপেক্ষাকৃত কম হয়; কিন্তু ব্লু-সিপ এ বিনিয়োগের মাধ্যমে সঞ্চয়টা একটা মহীরুহ হয় এবং বড় আকারে মুনাফা তৈরি করে। এছাড়া জাতীয় বাজেট অনুসারে ব্যক্তি বিনিয়োগ ১৫% করের ব্যবস্থা উঠে যাওয়ায় এক্ষেত্রে পুরো ব্যক্তি বিনিয়োগটাই কর অব্যাহতি পাবে; পাশাপাশি লভ্যাংশটাও করমুক্ত থাকবে। ‘‘সিস্টেমেটিক ইনভেস্টমেন্ট প্লান-সিপ’’ মূলত জনপ্রিয় প্রডাক্ট; আমাদের পাশ^বর্তী দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশে এখনও এটা খুব বেশী জনপ্রিয় হয়নি কিন্তু এটার মাধ্যমে মুনাফার একটা ভালো গড় বের করা সম্ভব এবং ঝুঁকিটা সবচেয়ে বেশী কমিয়ে আনা সম্ভব।