পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানি সিঅ্যান্ডএ টেক্সটাইলের মালিকদের বড় অঙ্কের জরিমানা করা হয়েছে। কোম্পানিটির মালিকানার সঙ্গে যুক্ত দুই ব্যক্তি ও এক প্রতিষ্ঠানকে ১৪ কোটি টাকা জরিমানা করেছে পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)। যাঁদের জরিমানা করা হয়েছে তাঁরা হলেন কোম্পানিটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক রুখসানা মোর্শেদ, পরিচালক শারমিন আকতার ও প্রাতিষ্ঠানিক পরিচালক বাংলাদেশ সু ইন্ডাস্ট্রিজ। এঁদের অপরাধ, তাঁরা আইন লঙ্ঘন করে কোনো ঘোষণা ছাড়া তাঁদের হাতে থাকা বিপুল শেয়ার বিক্রি করে দিয়ে ১২ কোটি টাকার বেশি মুনাফা করেছেন।
আইন ভেঙে শেয়ার বিক্রি করে ১২ কোটি টাকা মুনাফা করায় সিঅ্যান্ডএ টেক্সটাইলের তিন মালিককে ১৪ কোটি টাকা জরিমানা করেছে বিএসইসি। এতটুকু জেনে বিএসইসিকে সাধুবাদ দিতে পারেন কেউ। এবার আসুন তাহলে কোম্পানিটি সম্পর্কে কিছু তথ্য জেনে আসা যাক। ২০১৫ সালে পুঁজিবাজারে আসা এ কোম্পানি বর্তমানে বন্ধ। কোম্পানিটি প্রাথমিক গণপ্রস্তাব বা আইপিওতে মিথ্যা তথ্য দিয়ে বাজারে এসেছিল। ওই সময় তা নিয়ে সংবাদমাধ্যমে প্রতিবেদনও হয়েছিল। কিন্তু সেসবে ‘রা’ করেনি বিএসইসির তৎকালীন কমিশন। যে কমিশনের নেতৃত্বে ছিলেন এম খায়রুল হোসেন, যাঁর বিরুদ্ধে সবচেয়ে বড় অভিযোগ তিনি মানহীন কোম্পানি বাজারে আসার সুযোগ করে দিয়ে পুঁজিবাজারকে ডুবিয়েছেন। তারই প্রকৃষ্ট উদাহরণ এই সিঅ্যান্ডএ টেক্সটাইল। তালিকাভুক্তির কয়েক বছর না যেতেই বিনিয়োগকারীদের লভ্যাংশ দেওয়া বন্ধ করে কোম্পানিটি। আইপিওর টাকা তুলে নেওয়ার পর মালিকেরা তাঁদের হাতে থাকা শেয়ার বিক্রি করেও বাজার থেকে তুলে নেন বিপুল অর্থ। এরপর কারখানা বন্ধ করে মূল মালিকেরা পালিয়েছেন দেশ ছেড়ে। দেশ ছেড়ে যাওয়া এর মালিকদেরই এখন বড় অঙ্কের জরিমানা করল বিএসইসি। তাই স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন উঠেছে, আদৌ কি জরিমানার এ টাকা আদায় হবে?
প্রশ্নের এখানেই শেষ না। অনিয়মের বাকি আছে আরও। বিএসইসি বলছে, কোম্পানির উল্লিখিত তিন মালিক কাছাকাছি সময়ে তাঁদের হাতে থাকা শেয়ার বিক্রি করেছেন। আর তাঁদের শেয়ার বিক্রির পরপরই কোম্পানির কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যায়। বিএসইসির এ তথ্য থেকে এটা স্পষ্ট, মালিকেরা টাকা হাতিয়ে নিতেই কোম্পানিটিকে পুঁজিবাজারে এনেছিলেন।
২০১১ সালে দায়িত্ব নেওয়ার পর ওই বছরের নভেম্বরে খায়রুল হোসেন কমিশন একটি আলোচিত আইন করেছিল। সেটি হলো, তালিকাভুক্ত কোম্পানির উদ্যোক্তা-পরিচালকদের সম্মিলিতভাবে সব সময় ওই কোম্পানির ৩০ শতাংশ শেয়ার ধারণ বাধ্যতামূলক। এ ছাড়া প্রত্যেক পরিচালকের আলাদা আলাদাভাবে ওই কোম্পানির ন্যূনতম ২ শতাংশ শেয়ার ধারণ করা বাধ্যতামূলক করা হয়। এ আইনটি ‘২% ও ৩০%’ নামে পুঁজিবাজারে বহুল পরিচিত। ২০১১ সালে এ আইন করার পর সিঅ্যান্ডএ টেক্সটাইলের মালিকেরা ২০১৫ সালের পর তাঁদের হাতে থাকা শেয়ার ‘বেচিল’ কেমনে—এটাই বড় প্রশ্ন এখন। তার মানে, আইন করেও খায়রুল কমিশন ফাঁক তৈরি করে রেখেছিল কোম্পানির উদ্যোক্তাদের সুবিধা দিতে। খায়রুলের সেই পাপের বোঝা কমাতে বিএসইসির নতুন কমিশন এসে সিঅ্যান্ডএ টেক্সটাইলের মালিকদের বড় অঙ্কের জরিমানা করল ঠিকই। কিন্তু ততক্ষণে তাঁরা বিদেশে আরামের জীবনের বাসিন্দা। ঠকলেন কেবল সাধারণ বিনিয়োগকারীরা।