শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত হয়ে ৪২৮ কোটি টাকা উত্তোলন করে চলতি বছরের প্রথম দিকে লেনদেন শুরু করে ব্যাংকিং খাতের ইউনিয়ন ব্যাংক লিমিটেড। তালিকাভুক্তির পর এ ব্যাংকটি থেকে বিনিয়োগকারীরা নামেমাত্র ডিভিডেন্ড (৫% ক্যাশ) পেয়েছে। এছাড়া বর্তমানে ব্যাংকটির শেয়ার দর ফেসভ্যালুর নিচে (৯.৩০ টাকা) অবস্থান করছে। নতুন তালিকাভুক্ত কোন কোম্পানির এরকম বেহাল অবস্থায় বিনিয়োগকারীরা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন।
সেই একই গ্রুপের আরেকটি ব্যাংক গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংককে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্তির অনুমোদন দিয়েছে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)। ব্যাংকটির আইপিও সাবস্ক্রিপশন আগামী ১৬ অক্টোবর থেকে ২০ অক্টোবর পর্যন্ত চলবে। পুঁজিবাজার থেকে ব্যাংকটি ৪২৫ কোটি টাকা উত্তোলন করবে।
পর্যালোচনায় দেখা গেছে, এমনিতেই ইউনিয়ন ব্যাংক দুর্বল কোম্পানি হিসেবে তালিকাভুক্ত হয়েছে। তার চেয়েও অর্থাৎ ইউনিয়ন ব্যাংক থেকে বেশি খারাপ অবস্থায় রয়েছে গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংক লিমিটেড।
৩১ ডিসেম্বর ২০২০ অর্থবছরের আর্থিক প্রতিবেদন পর্যালোচনা করে দেখা যায়, ইউনিয়ন ব্যাংকের বছরে ইনভেস্টমেন্ট ইনকাম হয়েছে ১ হাজার ৯৭৪ কোটি ১ লাখ ২৬ হাজার ৯১৭ টাকা। অন্যদিকে গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংকের ইনভেস্টমেন্ট ইনকাম হয়েছে ১ হাজার ২০৪ কোটি ৮৭ লাখ ৪০ হাজার ১৬৫ টাকা। অর্থাৎ ইউনিয়ন ব্যাংক থেকে গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংকের ইনভেস্টমেন্ট ইনকাম কম হয়েছে ৭৬৯ কোটি ১৩ লাখ ৮৬ হাজার ৭৫২ টাকা অর্থাৎ ৩৯ শতাংশ কম।
নেট ইনভেস্টমেন্ট ইনকাম ইউনিয়ন ব্যাংকের যেখানে ৪৪২ কোটি ৩২ লাখ ৬১ হাজার ৫২৭ টাকা হয়েছে সেখানে গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংকের নেট ইনভেস্টমেন্ট ইনকাম হয়েছে ২৯৫ কোটি ৯২ লাখ ৫৮ হাজার ১০৪ টাকা। অর্থাৎ নেট ইনভেস্টমেন্ট ইনকামের দিক দিয়ে ইউনিয়ন ব্যাংক থেকে গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংক অনেক পিছিয়ে রয়েছে।
এদিকে ৩১ ডিসেম্বর ২০২০ অনুযায়ী, ইউনিয়ন ব্যাংকের শেয়ার প্রতি সম্পদ মূল্য (এনএভিপিএস) দাঁড়িয়েছে ১৬.৩৮ টাকা। সেখানে গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংকের শেয়ার প্রতি সম্পদ মূল্য (এনএভিপিএস) ১৩.৬৫ টাকা। ১৬.৩৮ টাকা এনএভি’র ইউনিয়ন ব্যাংকের শেয়ার দর ৯.৩০ টাকা, ডিভিডেন্ড দিয়েছে মাত্র ৫%। সেখানে ১৩.৬৫ টাকা এনএভি’র গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংকের কি অবস্থা হবে সেটাই দেখার অপেক্ষায় রয়েছেন বিনিয়োগকারীরা।
বাজার সংশ্লিষ্টরা বলছেন, একই গ্রুপের দুটি ব্যাংক খুব অল্প সময়ের ব্যবধানে পুঁজিবাজার থেকে বিপুল পরিমাণ টাকা বের করে নিয়ে যাচ্ছে। ইউনিয়ন ব্যাংক বাজার থেকে ৪২৮ কোটি টাকা নিয়েছে। অন্যদিকে গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংক একই বছরে ৪২৫ কোটি টাকা উত্তোলনের প্রক্রিয়ায় রয়েছে। কিন্তু তার বিনিময়ে বাজারে তারল্য সংকট তৈরি ছাড়া বিনিয়োগকারীরা তেমন কিছুই পাচ্ছে না। অন্যদিকে ১০ টাকার ওপরে শেয়ার কিনে কয়েকদিন পরে ফেসভ্যালুর নিচে নামায় ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছেন বিনিয়োগকারীরা। নিয়ন্ত্রক সংস্থাও এক্ষেত্রে প্রশ্নবিদ্ধ আচরণ করছে বলে মনে করছেন তারা।