শেয়াবাজারে ফ্লোর প্রাইসের অনেক ভালো দিক থাকলেও এর মন্দ দিকও রয়েছে। অনেকের জন্য ফ্লোর প্রাইস গলার কাঁটা ও এক আতঙ্কজনক অধ্যায় রচনা করেছে। এখন সেই আতঙ্ক-হাহাকার একাকার হয়ে মিশে গেছে। যেন বিষয়টি দেখার কেউ নেই বা বাজারের কোনো অভিভাবক নেই। ফ্লোর প্রাইসে প্রতিদিনই কারা বসায় এমন আতঙ্ক ছড়ানো সেল অফার?
নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাজারের পতন ঠেকাতে প্রথম দফায় ১৯ মার্চ ২০২০ মহামারি করোনা ভাইরাসের প্রকোপ শুরু হলে প্রতিটি কোম্পানির শেয়ারের সর্বনিম্ন দর বেঁধে দিয়ে ফ্লোর প্রাইস নির্ধারণ করে দেয়। এরপর দ্বিতীয় দফায় গত ২৮ জুলাই ২০২২ পুনরায় পতন ঠেকাতে ফ্লোর প্রাইস নির্ধারণ করে দেয়।
কিন্তু এই ফ্লোর প্রাইস পতন ঠেকাতে পারলেও আতঙ্ক ঠেকাতে পারেনি। একশ্রেণির বড় বিনিয়োগকারীরা প্রতিদিনই লেনদেনের শুরুতেই লাখ লাখ শেয়ার সেল অফার বসিয়ে ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীদের মনে আতঙ্ক ছড়িয়ে দিয়েছে যে, আদৌ তারা আর শেয়ার ব্যবসা করতে পারবে কিনা? দিনের শুরুতেই করা এমন আতঙ্ক ছড়ানো সেল অফার রাখে তা কী নিয়ন্ত্রক সংস্থা খতিয়ে দেখবেন?
আজ লেনদেনের শুরু আগে প্রি ওপেনিং সেশনেই বেশ কিছু কোম্পানির শেয়ার সেল অফার আসতে থাকে। লেনদেনের শুরুতেই তা বিশাল সেল অফারে পরিণত হয় যা লেনদেনের শেষ পর্যন্ত বহাল ছিল। বিশাল সেল অফার বসানো উল্লেখযোগ্য কোম্পানিগুলো হলো: রিং-শাইন টেক্সটাইল, ফরচুন সুজ, এমএল ডায়িং, লংকাবাংলা ফাইন্যান্স, এবং প্রভাতি ইন্সুরেন্স ইত্যাদি।
আজ বুধবার ২৮ সেপ্টেম্বর লেনদেনের শেষ পর্যন্ত রিং-শাইন টেক্সটাইলের ৫১ লাখ ৪৭ হাজার, ফরচুন সুজের ৩২ লাখ ৪৭ হাজার, এমএল ডায়িংয়ের ২৭ লাখ ৯৯ হাজার, লংকাবাংলা ফাইন্যান্সের ১১ লাখ ৫৬ হাজার, এবং প্রভাতি ইন্সুরেন্সের ৩ লাখ ৫২ হাজার শেয়ারের বিশাল সেল অফার ছিল, কিন্তু কোনো ক্রেতা ছিল না। এমনি ভাবে প্রায় পৌনে দুইশত কোম্পানির এই একই অবস্থা বিরাজ করছিল।
ফ্লোর প্রাইসের নিয়মটি চালু করার পর দুই-তিনদিন সার্কিট ব্রেকারের সর্বনিম্ন দরে শেয়ার খুব একটা দেখা যায়নি। বাজারও চাঙ্গাভাবে এগোয়। কিন্তু তারপরই শুরু হতে থাকে সার্কিট ব্রেকারের সর্বনিম্ন দরে শেয়ার বিক্রির প্রতিযোগিতা। সেই প্রতিযোগিতা প্রতিদিনই গভীর থেকে গভীরতর হতে থাকে। এখন সেই প্রতিযোগিতা আশঙ্কাজনক অবস্থায় পৌঁছেছে। লেনদেনের শুরুতেই চলছে লাখ লাখ শেয়ারের কাঁপন ধরানো সেল।
এমন অস্বাভাবিক আচরণ শুরু হয়েছে চলতি সপ্তাহের শুরু থেকে। লেনদেন শুরু হওয়ার সাথে সাথে ডজন ডজন কোম্পানির লাখ লাখ শেয়ারের বিক্রেতা। কয়েক হাজার শেয়ার সেল হয়েই কোম্পানিগুলো ক্রেতাশুন্য। বিপরীতে লাখ লাখ বিক্রেতার চোখ রাঙ্গানি। লেনদেনের প্রারম্ভে ছড়ানো এই আতঙ্ক দিনভর অস্থিরতায় রুপ নেয়।
সার্কিট ব্রেকারের সর্বনিম্ন দরে শেয়ার সেলের অস্বাভাবিকতা দেখে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের সঙ্গে বাজার সংশ্লিষ্টরাও বিস্মিত হয়ে পড়ছে। অস্থিরতার আবর্তে ঘুরপাক খেঁয়ে ছোট ছোট বিনিয়োগকারীরা তলানি দরে শেয়ার ছেড়ে দেওয়ার পথ খুঁজতে থাকে। কেউ কেউ ভাবে আরও কম দরে শেয়ার কেনা যাবে। আবার কেউ কেউ বিক্রি করে ফোর্স সেলের যন্ত্রণা থেকে রক্ষা পেতে। এভাবে পরিস্থিতি ভয়াবহ অবস্থার দিকে যাচ্ছে বলে আশঙ্কা করছেন বাজার সংশ্লিষ্টরা।
বাজার সংশ্লিষ্টরা বলছেন, লেনদেনের শুরুতে কারা এভাবে লাখ লাখ শেয়ার সার্কিট ব্রেকারের সর্বনিম্ন দরে বসিয়ে রাখে। শেয়ারবাজারে কাঁপন ধরানো এসব অস্বাভাবিক সেল দেখার কী কেউ নেই? অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছে, শেয়ারবাজার সংশ্লিষ্ট কর্তাব্যক্তিরাও এতে আনন্দ অনুভব করছেন। তাদের কারোরই যেন কোন মাথাব্যথা নেই। যে কারণে লেনদেনের শুরুতেই লাখ লাখ শেয়ার সেলের হোলি খেলা বেড়ে চলেছে। এতে করে শেয়ারবাজারে অশনি সংকেতের বিনিয়োগকারীরা মহাদাপটে তাদের অসৎ ইচ্ছা-অনিচ্ছার প্রতিফলন ঘটালেও সাধারণ বিনিয়োগকারীরা ভেতরে ভেতরে শেষ হয়ে যাচ্ছে।