বর্তমান পুঁজিবাজার পুরোপুরি জুয়াড়িদের দখলে চলে গেছে। তাদের ইচ্ছেমতো শেয়ার দর বাড়াচ্ছে আবার কমাচ্ছে। এর মধ্যে যেসব বিনিয়োগকারী আটকে পড়ে গেছেন তারা পুঁজি হারাচ্ছেন। অন্যদিকে সামগ্রিক পুঁজিবাজারও ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।
তথ্যানুসন্ধানে যায়, তালিকাভুক্ত ৭ কোম্পানির শেয়ার দর সম্প্রতি অস্বাভাবিকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। কোম্পানিগুলো হলো: ওরিয়ন ইনফিউশন, ওরিয়ন ফার্মা, কোহিনূর কেমিক্যালস, বাংলাদেশ শিপিং করপোরেশন, জেএমআই হসপিটাল রিক্যুইজিট, শাহজিবাজার পাওয়ার কোম্পানি লিমিটেড এবং বসুুন্ধরা পেপার মিলস লিমিটেড।
প্রাপ্ত তথ্যে মতে , কোম্পানিগুলোর শেয়ার নিয়ে কারসাজি চক্র সক্রিয় থাকায় দর কয়েক কার্যদিবস ধরে বাড়তেই থাকে। কিন্তু আজ ২৫ সেপ্টেম্বর রোববার শেয়ার দরগুলোর অস্বাভাবিক পতনে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে আতঙ্ক তৈরি হয়েছে। কারণ একদিকে যেমন অনেক বিনিয়োগকারী উচ্চ দরে শেয়ার কিনে আটকে গেছেন। অন্যদিকে কোম্পানির শেয়ারে অত্যধিক সেল প্রেসার হওয়ায় সামগ্রিক পুঁজিবাজারে নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে। এতে করে কোম্পানিগুলোর শেয়ার কেনা বিনিয়োগকারীরা যেমন ক্ষতির মুখে পড়েছেন। অন্যদিকে সামগ্রিক বাজার খারাপ হওয়ায় অন্যান্য কোম্পানির শেয়ারেও নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে। এতে অন্যান্য বিনিয়োগকারীরাও ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছেন। তাই উল্লেখিত কোম্পানিগুলোর শেয়ার দর অস্বাভাবিক বৃদ্ধিতে যারা জড়িত রয়েছে তাদের তদন্ত করে খুঁজে বের করার জোর দাবি জানিয়েছেন বিনিয়োগকারীরা।
তথ্যানুসন্ধানে জানা যায়, ওরিয়ন ইনফিউশনের শেয়ার দর ৮৭ টাকা থেকে বৃদ্ধি পেতে থাকে। এক পর্যায় কোম্পানিটির শেয়ার দর ৬০০ টাকায় উন্নীত হয়। গত দুই কার্যদিবসে শেয়ার দর কমে ৫৬৪ টাকায় অবস্থান করছে।
ওরিয়ন ফার্মার শেয়ার দর ৭৮ টাকা থেকে বৃদ্ধি পেতে থাকে। গতকাল পর্যন্ত কোম্পানিটির শেয়ার দর ১৪৯.৬০ টাকায় উন্নীত হয়। আজ এর শেয়ার দর একদিনেই ৯.৬৯ শতাংশ বা ১৪.৫০ টাকা কমে গিয়ে ১৩৫.১০ টাকায় অবস্থান করছে। কোম্পানিটির শেয়ার দর অস্বাভাবিক পতনে পুঁজিবাজারের সূচক ৪.৯২ পয়েন্ট কমেছে।
কোহিনূর কেমিক্যালসের শেয়ার দর ৩৭৬ টাকা থেকে বৃদ্ধি পেতে থাকে। এক পর্যায় কোম্পানিটির শেয়ার দর ৭৩৫ টাকায় উন্নীত হয়। গত তিন কার্যদিবসে শেয়ার দর কমে ৫৯৯ টাকায় অবস্থান করছে। অর্থাৎ তিনদিনেই কোম্পানিটির শেয়ার দর ২০০ টাকার বেশি কমেছে।
জেএমআই হসপিটালের শেয়ার দর ৭৪ টাকা থেকে বৃদ্ধি পেতে থাকে। এক পর্যায় কোম্পানিটির শেয়ার দর ১৩২.৬০ টাকায় উন্নীত হয়। গত দুই কার্যদিবসে শেয়ার দর কমে ১২০.৭০ টাকায় অবস্থান করছে।
শাহজিবাজার পাওয়ার কোম্পানির শেয়ার দর ৬৮ টাকা থেকে বৃদ্ধি পেয়ে ১০০ টাকায় উন্নীত হয়। আজ একদিনেই কোম্পানিটির শেয়ার দর ৭.৬৪ শতাংশ বা ৭.৭০ কমে ৯৩.১০ টাকায় অবস্থান করছে।
বসুন্ধরা পেপার মিলসের শেয়ার দর ৫৩ টাকা থেকে বৃদ্ধি পেয়ে ৮৯.৯০ টাকায় উন্নীত হয়। আজ একদিনেই কোম্পানিটির শেয়ার দর ৭.১২ শতাংশ বা ৬.৪০ কমে ৮৩.৫০ টাকায় অবস্থান করছে।
বাংলাদেশ শিপিং করপোরেশনের শেয়ার দর ১০৮ টাকা থেকে বৃদ্ধি পেয়ে ১৬৮.৯০ টাকায় উন্নীত হয়। আজ একদিনেই কোম্পানিটির শেয়ার দর ৬.৪৫ শতাংশ বা ১০.৯০ কমে ১৫৮ টাকায় অবস্থান করছে।
উল্লেখিত কোম্পানিগুলো বাদে আরও কিছু কোম্পানির শেয়ার দর নিয়ে সম্প্রতি কারসাজি চক্র বেশ সক্রিয় ভূমিকা পালন করছে।
এ ব্যাপারে বাংলাদেশ বিনিয়োগকারী ঐক্য পরিষদের সভাপতি এ.কে.এম মিজান-উর-রশিদ চৌধুরী ডেইলি শেয়ারবাজার ডটকমকে জানান, পুঁজিবাজার এখন পুরোপুরি জুয়াড়িদের দখলে চলে গেছে। তারা তাদের ইচ্ছেমতো শেয়ার দর বাড়াবে আবার সেল প্রেসার সৃষ্টি করে অস্থিতিশীল পরিবেশ তৈরি করবে। ওরিয়ন গ্রুপের শেয়ার নিয়ে যারা কারসাজি করছে তারা মালিকপক্ষ নিজেই বলে আমাদের কাছে খবর এসেছে। এছাড়া আরও কিছু পরিচিত গ্রুপ তারা বছরের বিভিন্ন সময় বিভিন্ন শেয়ার নিয়ে কারসাজি করে থাকে যেটা এখন মার্কেটে ওপেন সিক্রেট। বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) এক্ষেত্রে নিরব ভূমিকা পালন করছে। এতে এই বাজার একটি নির্দিষ্ট গ্রুপের কাছে জিম্মি হয়ে রয়েছে বলে তিনি জানান।