পুঁজিবাজারে তফসিলি ব্যাংকগুলোর বিনিয়োগের বিষয়ে দীর্ঘদিনের কঠোর অবস্থান থেকে সরে আসছে আর্থিক খাতের নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ ব্যাংক। এর অংশ হিসেবে পুঁজিবাজারে ব্যাংকের বিনিয়োগ গণনার (Exposure to Capital Market) পদ্ধতিতে পরিবর্তন আনতে সম্মত হয়েছে তারা। আগামী দিনে বাংলাদেশ ব্যাংক শেয়ারের বাজারমূল্যের (Market Price) পরিবর্তে ক্রয় মূল্যে (Cost Price) এক্সপোজার করতে চায়। এ বিষয়ে অনুমতি চেয়ে অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সচিবের কাছে চিঠি পাঠিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক।
গতকাল রোববার (১৭ জুলাই) আলোচিত চিঠিটি পাঠানো হয়েছে। চিঠিতে
বাংলাদেশ ব্যাংক ও অর্থমন্ত্রণালয় সূত্রে এই তথ্য জানা গেছে।
তথ্য অনুসারে, মন্ত্রণালয় বাংলাদেশ ব্যাংকের চিঠিটি পর্যালোচনা করে দেখছে। যদিও তারা মনে করছেন, বিষয়টি তাদের এখতিয়াভুক্ত নয়। এটি আইন সংশ্লিষ্ট বিষয়। কস্ট প্রাইসে এক্সপোজার গণনার সুযোগ দিতে হলে আইন সংশোধন করতে হবে। আর বাংলাদেশ ব্যাংক এই ধরনের প্রস্তাব করলে সরকার ব্যাংক কোম্পানি আইন সংশোধন করার উদ্যোগ নেবে সরকার।
উল্লেখ, ব্যাংক কোম্পানি আইন অনুসারে, একটি ব্যাংক তার রেগুলেটরি মূলধনের সর্বোচ্চ ২৫% পুঁজিবাজারে বিনিয়ো করতে পারে। বর্তমানে এই গণনা করা হয় শেয়ারের বাজারমূল্যের (Market Price) ভিত্তিতে। এর ফলে বাজার একটু চাঙা হলেই সংশ্লিষ্ট ব্যাংকের এক্সপোার নির্দিষ্ট সীমা অতিক্রম করে। ফলে যে কোনো দামে শেয়ার বিক্রি করে বিনিয়োগ সমন্বয় করতে হয় বলে বাজারে শেয়ার বিক্রির চাপ বেড়ে যায়। বাজার শুরু হয় দর পতন। এ অবস্থা এড়াতে দীর্ঘদিন ধরে পুঁজিবাজার সংশ্লিষ্টরা বাজারমূল্যের পরিবর্তে ক্রয়-মূল্যে এক্সপোজার গণনার দাবি জানিয়ে আসছিলেন। কিন্তু বাংলাদেশ ব্যাংকের অনড় অবস্থানের কারণে তা হয়ে উঠেনি। এবার এ বিষয়ে খোদ বাংলাদেশ ব্যাংকই প্রস্তাব দিয়েছে।
ধরা যাক, একটি ব্যাংকের রেগুলেটরি মূলধন ১০০ কোটি টাকা। আইন মেনে ব্যাংকটি তার বিনিয়োগ সীমার সর্বোচ্চ অর্থাৎ ২৫০ কোটি টাকা বিনিয়োগ করেছে শেয়ার বাজারে। কিছুদিন পর ব্যাংকটির কেনা শেয়ার ও মিউচুয়াল ফান্ডের ইউনিটের সম্মিলিত মূল্য বেড়ে হয়েছে ৩৫০ কোটি টাকা। বর্তমান আইনে, ব্যাংকটির এক্সপোজার ধরা হবে ৩৫০ কোটি টাকা। যদিও বাড়তি ১০০ কোটি টাকা ব্যাংকটির প্রকৃত বিনিয়োগ নয়, সম্ভাব্য মুনাফা। এর সাথে ঝুঁকির কোনো সম্পর্ক নেই। তবু আইনের বাধ্যবাধকতার কারণে ব্যাংকটিকে ১০০ কোটি টাকার শেয়ার বিক্রি করে ওই এক্সপোজার ২৫০ কোটি টাকার মধ্যে নিয়ে আসতে হবে। হঠাৎ করে বাজারে বাড়তি ১০০ কোটি টাকার শেয়ার বিক্রি করার চাপ তৈরি হলে এর প্রভাবে শেয়ারের দাম ও সূচক কমে যেতে পারে। আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়তে পারে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে। অন্যদিকে শেয়ারের দাম কম থাকলেও আইনের বাধ্যবাধকতা ও বাংলাদেশ ব্যাংকের চাপের কারণে লোকসানে হলেও ওই ব্যাংকটিকে শেয়ার বিক্রি করতেই হবে। এই চাপের কারণে একদিকে ব্যাংকগুলো পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ করতে উৎসাহী হয় না, অন্যদিকে বাজার বার বার অস্থিতিশীল হয়ে উঠে।