যেই টাকা আপনার ঘুম কেড়ে নিবে, যেই টাকার চিন্তা করে মাথার চুল টেনে ছিড়ে ফেলবেন, যেই টাকা অশান্তি এনে দেয় সেই টাকা থাকার চেয়ে না থাকাই ভালো। আপনি যদি পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ করতে চান এবং বিনিয়োগ করার পর যদি এমন ভাবেন যে টাকা চলে যাবে, তাহলে আপনাকে এই ভয় কাটাতেই হবে, নয়তোবা আপনি ভালো করতে পারবেন না।
পুঁজিবাজারে একজন বিনিয়োগকারীর প্রধান শত্রু ২টি। একটি হলো লোভ এবং অন্যটি হলো ভয়। এই শত্রুদের মোকাবেলা করতে না পারলে ভালো শেয়ার নির্বাচন করার পরও ভালো ফলাফল আপনি পাবেন না।
ধরুন, একটা শেয়ার ১০ টাকা দিয়ে কিনলেন, কিছুদিন পর কোনো বিশেষ কারণ ছাড়াই এর দাম কমে দাঁড়ালো ৮ টাকা, আপনি প্রতি শেয়ারে ২ টাকা লস করে বিক্রি করে দিলেন। এটা আপনার ভয়। আবার ধরুন, সেই শেয়ারটি না কমে বেড়ে গেল। দাম দাঁড়ালো ১২ টাকা। আপনি বিক্রি না করে লোভে পড়ে গেছেন। আপনার ধারণা এটা দাম ১৫ টাকা হবে। কিন্তু কিছুদিন পরে এর দাম দাঁড়ালো ১০ টাকা। এই যে লাভ হওয়ার পরও বিক্রি না করার কারণে সুযোগ হাতছাড়া করলেন, এটা আপনার লোভ। এই শেয়ারটির দাম যদি কমে ৮ টাকা নামে তাহলে আপনার আফসোসের শেষ থাকবে না।
তবে বেশীর ভাগ মানুষ লোভের চেয়ে ভয়ের কারণে বিনিয়োগ করে শেয়ারবাজার থেকে লস করে।
আসুন কিভাবে শেয়ারবাজারে বিনিয়োগ ভয় দূর করা যায়, তা একটু জানার চেষ্টা করি।
১। প্রথমেই পুঁজিবাজারকে একটা ব্যবসা হিসাবে গ্রহন করতে হবে: আমাদের মনে রাখতে হবে বিনিয়োগ ও সঞ্চয় এক জিনিষ নয়। আপনি যদি ব্যাংক, পোস্ট অফিস কিংবা সঞ্চয়পত্রে টাকা রাখেন তাহলে এটা কখনোই বিনিয়োগ বলা যাবে না। বিনিয়োগে রিস্ক থাকতেই হবে। যেমন সকল ব্যবসায় রিস্ক থাকে তেমনি শেয়ারবাজারেও রিস্ক আছে। তবে এখানে ঝুঁকিটা একটু বেশি। একই সাথে প্রফিটও বেশি। মনে রাখতে হবে, আমাদের ব্যাংক, পোস্ট অফিস কিংবা সঞ্চয়পত্র ১ বছরে যেই লাভ দিতে পারে তা আমাদের শেয়ারবাজার একদিনেই দিতে পারে।
না জেনে বুঝে কেউ কোনো দিন কোনো বিষয়ে দক্ষ হতে পারে না। আপনি যত বেশি পুঁজিবাজার সম্পর্কে জ্ঞান অর্জন করতে পারবেন, তত বেশি আত্মবিশ্বাসী হয়ে উঠবেন। এই আত্মবিশ্বাস আপনাকে একজন দক্ষ বিনিয়োগকারী হতে সাহায্য করবে।
৩। বিনিয়োগের লক্ষ্য নির্ধারণ করুন: কেন আপনি বিনিয়োগ করবেন, কত দিনের জন্য করবেন, বছরে কত পারসেন্ট লাভ আশা করছেন ইত্যাদি নানা বিষয় যদি আপনার পূর্ব পরিকল্পনা থাকে, তাহলে বিনিয়োগ ভয় থেকে নিজেকে দূরে রাখতে পারবেন।
আপনাকে একটু সময় নিয়ে নিজের লক্ষ্যগুলো ঠিক করতে হবে। এতে দেখবেন ভালো কিছু অর্জন করতে পারবেন।
৪। অল্প টাকা দিয়ে বিনিয়োগ শুরু করতে পারেন: যদি কোনো বিনিয়োগকারী তার নিজের জ্ঞানের উপর আত্মবিশ্বাস না থাকে এবং ভয় পায় তাহলে তার উচিত হবে অল্প টাকা দিয়ে শুরু করা। সময়ের পরিবর্তনে জ্ঞান অর্জনের পাশাপাশি অভিজ্ঞতা বাড়বে এবং বিনিয়োগ ভয় থেকে নিজেকে দূরে রাখা যাবে।
৫। অন্য বিনিয়োগকারীদের অভিজ্ঞতা জানার চেষ্টা করুন: বাজারে অন্য বিনিয়োগকারীদের কাছ থেকে তাদের অভিজ্ঞতা জানতে পারলে দুটি জিনিষ শিখতে পারবেন।
এক, কেন তারা লস করেছিল এবং কেন তারা লাভ করতে পেরেছিল। এখন আপনি যদি এই লস হওয়ার কারণগুলো এড়িয়ে যেতে পারেন এবং লাভ হওয়ার কারণগুলো নিজের বিনিয়োগে প্রয়োগ করতে পারেন তবে আপনি সফল হতে পারবেন।