দেশের পুঁজিবাজারে গত সপ্তাহজুড়ে মিশ্র প্রবণতা দেখা গেছে। এতে প্রধান পুঁজিবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) সার্বিক ও ব্লু-চিপ সূচক সামান্য কমেছে। বেড়েছে শরিয়াহ সূচক। লেনদেন কিছুটা বাড়লেও কমেছে বাজার মূলধন। এ সময় এক্সচেঞ্জটিতে সবচেয়ে বেশি ইতিবাচক রিটার্ন এসেছে সাধারণ বীমা, পেপার ও সিমেন্ট খাতে। দেশের আরেক পুঁজিবাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে (সিএসই) সূচক কমলেও বেড়েছে লেনদেন।
বাজার বিশ্লেষকরা বলছেন, চলতি ২০২১-২২ হিসাব বছরের দ্বিতীয় প্রান্তিকে (অক্টোবর-ডিসেম্বর) অনেক কোম্পানি ভালো আয় ও মুনাফা করেছে। এতে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে ওই সব প্রতিষ্ঠানের শেয়ার কেনার আগ্রহ তৈরি হয়েছে। তেমনি বিনিয়োগকারীদের একটি অংশ শেয়ার বিক্রি করে মুনাফা তুলে নিচ্ছেন। বিশেষ করে করোনা পরিস্থিতি ক্রমেই খারাপ হওয়ায় বিনিয়োগকারীদের মধ্যে এক ধরনের উদ্বেগ তৈরি হয়েছে। যার প্রভাব পড়েছে দেশের পুঁজিবাজারে।
বাজার বিশ্লেষণে দেখা যায়, গত সপ্তাহের পাঁচ কার্যদিবসে ডিএসইতে মোট ৬ হাজার ৪২৮ কোটি টাকার বেশি লেনদেন হয়েছে। যেখানে আগের সপ্তাহে লেনদেন ছিল ৬ হাজার ১৪৯ কোটি টাকা। এক সপ্তাহের ব্যবধানে এক্সচেঞ্জটিতে লেনদেন বেড়েছে ২৭৯ কোটি টাকা বা ৪ দশমিক ৫৫ শতাংশ। এ সময়ে টাকার অংকে ডিএসইর গড় লেনদেনও বেড়েছে। গত সপ্তাহের পাঁচ কার্যদিবসে ডিএসইতে গড়ে ১ হাজার ২৮৫ কোটি টাকার লেনদেন হয়েছে। যেখানে আগের সপ্তাহে গড় লেনদেন ছিল ১ হাজার ২২৯ কোটি টাকা। সপ্তাহের ব্যবধানে গড় লেনদেন বেড়েছে প্রায় ৫৬ কোটি টাকা।
গত সপ্তাহে এক্সচেঞ্জটির খাতভিত্তিক লেনদেনে শীর্ষে ছিল বিবিধ খাত। ডিএসইর মোট লেনদেনের ১৩ দশমিক ৮ শতাংশ ছিল খাতটির দখলে। ১৩ দশমিক ৬ শতাংশ নিয়ে দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে প্রকৌশল খাত। বস্ত্র খাত ১২ শতাংশ নিয়ে তালিকায় তৃতীয় অবস্থানে রয়েছে। পরের অবস্থানে থাকা ওষুধ ও রসায়ন খাতের দখলে ছিল মোট লেনদেনের ১০ দশমিক ৫ শতাংশ। পঞ্চম স্থানে রয়েছে ব্যাংক খাত। খাতটির লেনদেন ছিল ৭ দশমিক ৩ শতাংশ। এছাড়া এ তালিকায় থাকা বাকি খাতগুলোর অন্যতম হলো যথাক্রমে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি, খাদ্য ও আনুষঙ্গিক এবং সাধারণ বীমা খাত।
খাতভিত্তিক ইতিবাচক রিটার্নে গত সপ্তাহে সবার শীর্ষে ছিল সাধারণ বীমা খাত। মোট রিটার্নের ২ দশমিক ৫ শতাংশই ছিল এ খাতের দখলে। প্রায় একই পয়েন্ট নিয়ে তালিকায় দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে পেপার খাত। তৃতীয় অবস্থানে থাকা সিমেন্ট খাতে রিটার্ন এসেছে ২ দশমিক ১ শতাংশ। এছাড়া আইটি, টেলিকম, ব্যাংক, ফার্মাসিউটিক্যালস খাতে গত সপ্তাহে উল্লেখযোগ্য রিটার্ন এসেছে।
অন্যদিকে গত সপ্তাহে ডিএসইতে সবচেয়ে বেশি নেতিবাচক রিটার্ন এসেছে আর্থিক প্রতিষ্ঠান খাতে, ৫ দশমিক ১ শতাংশ। দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে সিরামিক খাত, ৪ দশমিক ৬ শতাংশ। এছাড়া চামড়া খাতে ৪ দশমিক ২ শতাংশ, ভ্রমণ খাতে ১ দশমিক ৮ শতাংশ ও জীবন বীমা খাতে ১ দশমিক ৭ শতাংশ করে ঋণাত্মক রিটার্ন এসেছে।
গত সপ্তাহে ডিএসইর প্রধান সূচক ডিএসইএক্স আগের সপ্তাহের তুলনায় কমেছে ৪ পয়েন্ট। সপ্তাহ শেষে সূচকটি ৭ হাজার ২৩ দশমিক ৫২ পয়েন্টে অবস্থান করছে। আগের সপ্তাহ শেষে যা ছিল ৭ হাজার ২৭ দশমিক ৫৫ পয়েন্টে। সূচকের পতনে সবচেয়ে বেশি অবদান রেখেছে বিকন ফার্মা, বেক্সিমকো লিমিটেড, ন্যাশনাল লাইফ ইন্স্যুরেন্স ও ফরচুন সুজের শেয়ার।
ডিএসইর অন্য সূচকের মধ্যে নির্বাচিত কোম্পানির সূচক ডিএস-৩০ সপ্তাহের ব্যবধানে ১০ পয়েন্ট বা দশমিক ৩৮ শতাংশ কমে ২ হাজার ৫৯২ দশমিক ৩৪ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে। আগের সপ্তাহ শেষে যা ছিল ২ হাজার ৬০২ দশমিক ৩৪ পয়েন্টে। শরিয়াহ সূচক ডিএসইএস ৪ দশমিক ২৭ পয়েন্ট বা দশমিক ২৮ শতাংশ বেড়ে ১ হাজার ৫০৪ দশমিক ২৫ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে। আগের সপ্তাহ শেষে যা ছিল ১ হাজার ৪৯৯ দশমিক ৯৭ পয়েন্টে।
সূচকের পাশাপাশি গত সপ্তাহে ডিএসইর বাজার মূলধনও সামান্য কমেছে। সপ্তাহের শুরুতে এক্সচেঞ্জটির বাজার মূলধন ছিল ৫ লাখ ৬২ হাজার ৯০২ কোটি টাকা। সপ্তাহ শেষে যা কমে দাঁড়িয়েছে ৫ লাখ ৬২ হাজার ১৮২ কোটি টাকায়। সপ্তাহের ব্যবধানে বাজার মূলধন কমেছে ৭২০ কোটি টাকা বা দশমিক ১৩ শতাংশ। গত সপ্তাহে ডিএসইতে ৩৯২ কোম্পানি, মিউচুয়াল ফান্ড ও করপোরেট বন্ডের লেনদেন হয়েছে। এর মধ্যে দর বেড়েছে ১৮৪টির, কমেছে ১৬৬টির, অপরিবর্তিত ছিল ৩৮টির। আর লেনদেন হয়নি ৪টির শেয়ার।
গত সপ্তাহে ডিএসইতে সমাপনী দরের ভিত্তিতে দরপতনে শীর্ষে থাকা কোম্পানিগুলো হলো যথাক্রমে শমরিতা হসপিটাল, হামিদ ফ্যাব্রিকস, ইনভেস্টমেন্ট করপোরেশন অব বাংলাদেশ (আইসিবি), ইস্টার্ন লুব্রিক্যান্টস, মালেক স্পিনিং মিলস, ন্যাশনাল লাইফ ইন্স্যুরেন্স, সিমটেক্স ইন্ডাস্ট্রিজ, দেশ গার্মেন্টস, অ্যাকটিভ ফাইন কেমিক্যালস ও সাফকো স্পিনিংস মিলস।
অন্যদিকে সিএসইতে গত সপ্তাহের পাঁচ কার্যদিবসে ২৩৪ কোটি টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছে। যেখানে আগের সপ্তাহে লেনদেন ছিল ১৭৮ কোটি টাকার। গত সপ্তাহে সিএসইর সার্বিক সূচক সিএএসপিআই দশমিক শূন্য ৫ শতাংশ কমে ২০ হাজার ৫৭৬ দশমিক ২৮ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে। আগের সপ্তাহ শেষে যা ছিল ২০ হাজার ৫৮৬ দশমিক ৬২ পয়েন্টে। আলোচ্য সময়ে সিএসইতে মোট ৩৪৯টি কোম্পানি, মিউচুয়াল ফান্ড ও করপোরেট বন্ডের লেনদেন হয়েছে। এর মধ্যে দর বেড়েছে ১৬২টির। কমেছে ১৫৪টির। আর অপরিবর্তিত ছিল ৩৩টির শেয়ারদর।