ব্যবসা সম্প্রসারণের উদ্দেশ্যে ২০১৬ সালে পুঁজিবাজার থেকে প্রাথমিক গণপ্রস্তাবের মাধ্যমে ৪০৯ কোটি টাকার মূলধন সংগ্রহ করেছিল ওষুধ খাতের কোম্পানি দ্য একমি ল্যাবরেটরিজ লিমিটেড। এ বছরের জানুয়ারি শেষে আইপিওর মাধ্যমে সংগৃহীত এ অর্থের পুরোটাই ব্যয় করা হয়েছে। কোম্পানি থেকে এ তথ্য জানা যায় ।
একমি আইপিও তহবিল ব্যয় প্রত্যয়নকারী নিরীক্ষা প্রতিষ্ঠান পিনাকী অ্যান্ড কোম্পানির প্রতিবেদন অনুসারে, গত বছরের ডিসেম্বর শেষে আইপিওর প্রায় শতভাগ অর্থ ব্যয় করা হয়েছে। শুধু অ্যাকটিভ ফার্মাসিউটিক্যাল ইনগ্রেডিয়েন্ট (এপিআই) প্রকল্পে ১ লাখ ৭ হাজার ৩৩০ টাকা ব্যয় করা বাকি ছিল। যা এ বছরের জানুয়ারিতে ব্যয় করেছে কোম্পানিটি। আইপিওর অর্থ থেকে কোম্পানিটি স্টেরয়েড ও হরমোন ইউনিটে ১৬৬ কোটি ৫ লাখ, পেনিসিলিন ইউনিটে ৪০ কোটি ও এপিআই ইউনিটে ৬০ কোটি ৬১ লাখ টাকা ব্যয় করেছে। অবশ্য এপিআই প্রকল্পে আইপিওর বাইরে কোম্পানির নিজস্ব উৎস থেকেও বিনিয়োগ করা হয়েছে। ইউনিটটি স্থাপনের কাজ এখনো চলমান রয়েছে। এ বছরের জুনের মধ্যে প্রকল্পটির কাজ শেষ হওয়ার লক্ষ্যমাত্রা থাকলেও এটি সম্পন্ন হতে আরো সময় লাগতে পারে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে একমি ল্যাবরেটরিজের কোম্পানি সচিব মো. আরশাদুল কবির বণিক বার্তাকে বলেন, আইপিও মাধ্যমে সংগৃহীত পুরো অর্থ গত জানুয়ারি মাসে ব্যয় করা শেষ হয়েছে।
প্রথমে আইপিওর মাধ্যমে উত্তোলিত ৪০৯ কোটি ৬০ লাখ টাকায় একমি ল্যাবরেটরিজের স্টেরয়েড ও হরমোন ইউনিট, অনকোলজি ইউনিট এবং আয়ুর্বেদিক, মডার্ন হারবাল ও নিউট্রাসিউটিক্যাল ইউনিট স্থাপনে ব্যয় করার কথা ছিল। কিন্তু পরবর্তী সময়ে আইপিওর অর্থ ব্যয় পরিকল্পনা পরিবর্তন করে কোম্পানিটি অনকোলজির বদলে পেনিসিলিন ও আয়ুর্বেদিক, মডার্ন হারবাল ও নিউট্রাসিউটিক্যাল ইউনিটের বদলে এপিআই প্রকল্প বাস্তবায়নের সিদ্ধান্ত নেয়। পাশাপাশি ১৩৬ কোটি টাকার ব্যাংকঋণ পরিশোধের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। ধামরাইয়ের দুলিভিটায় স্থাপনকৃত পেনিসিলিন ইউনিটে ২০১৯ সালের জুনে এবং স্টেরয়েড ও হরমোন ইউনিটে একই বছরের জুলাইয়ে বাণিজ্যিক উৎপাদন শুরু হয়।
চলতি ২০২১-২২ হিসাব বছরের প্রথমার্ধে (জুলাই-ডিসেম্বর) ভালো ব্যবসা করেছে একমি ল্যাবরেটরিজ। আগের হিসাব বছরের একই সময়ের তুলনায় এ সময়ে কোম্পানিটির বিক্রি প্রবৃদ্ধি হয়েছে ১৬ শতাংশের বেশি। আর কর-পরবর্তী নিট মুনাফা বেড়েছে ৩৮ শতাংশ। আর্থিক প্রতিবেদন পর্যালোচনায় দেখা যায়, চলতি ২০২১-২২ হিসাব বছরের প্রথমার্ধে একমি ল্যাবরেটরিজের বিক্রি হয়েছে ১ হাজার ১৬১ কোটি টাকা। যেখানে আগের হিসাব বছরের একই সময়ে বিক্রি ছিল প্রায় ১ হাজার কোটি টাকা। এক বছরের ব্যবধানে কোম্পানিটির বিক্রি বেড়েছে ১৬১ কোটি ৫৫ লাখ টাকা বা ১৬ দশমিক ১৬ শতাংশ। প্রথমার্ধে কর-পরবর্তী নিট মুনাফা হয়েছে ১০৯ কোটি ৪২ লাখ টাকা। যেখানে আগের হিসাব বছরের একই সময়ে মুনাফা ছিল ৭৯ কোটি ১৬ লাখ টাকার বেশি। এক বছরের ব্যবধানে কোম্পানিটির নিট মুনাফা বেড়েছে ৩০ কোটি ২৬ লাখ টাকা বা ৩৮ দশমিক ২২ শতাংশ। এ সময়ে কোম্পানিটির শেয়ারপ্রতি আয় (ইপিএস) হয়েছে ৫ টাকা ১৭ পয়সা। আগের হিসাব বছরের একই সময় যা ছিল ৩ টাকা ৭৪ পয়সা।
অন্যদিকে চলতি হিসাব বছরের দ্বিতীয় প্রান্তিকে (অক্টোবর-ডিসেম্বর) কোম্পানিটির বিক্রি হয়েছে ৫৬৭ কোটি টাকা। যেখানে আগের হিসাব বছরের একই সময়ে বিক্রি ছিল ৫০২ কোটি টাকা। আলোচ্য প্রান্তিকে কর-পরবর্তী নিট মুনাফা হয়েছে ৫০ কোটি ৭১ লাখ টাকা। যেখানে আগের হিসাব বছরের একই সময়ে মুনাফা ছিল ৩৭ কোটি ৭০ লাখ টাকা। আলোচ্য প্রান্তিকে কোম্পানিটির ইপিএস হয়েছে ২ টাকা ৪০ পয়সা। আগের হিসাব বছরের একই সময় যা ছিল ১ টাকা ৭৮ পয়সা। ৩১ ডিসেম্বর ২০২১ শেষে কোম্পানিটির শেয়ারপ্রতি নিট সম্পদমূল্য (এনএভিপিএস) দাঁড়িয়েছে ৯৭ টাকা ৭১ পয়সায়।
৩০ জুন সমাপ্ত ২০২১ হিসাব বছরের জন্য ২৫ শতাংশ নগদ লভ্যাংশ দিয়েছে একমি ল্যাবরেটরিজ। সমাপ্ত হিসাব বছরে কোম্পানিটির কর-পরবর্তী নিট মুনাফা ছিল ১৫৬ কোটি ৯২ লাখ ৩০ হাজার টাকা। যেখানে আগের হিসাব বছরে কর-পরবর্তী নিট মুনাফা ছিল ১৪৫ কোটি ৫ লাখ টাকা। সেই হিসাবে আলোচ্য হিসাব বছরে কোম্পানিটির নিট মুনাফা বৃদ্ধি পায় ১১ কোটি ৮৭ লাখ টাকার বেশি বা ৮ দশমিক ১৯ শতাংশ।
সমাপ্ত হিসাব বছরে কোম্পানিটির ইপিএস হয়েছে ৭ টাকা ৪২ পয়সা, আগের হিসাব বছরে যা ছিল ৬ টাকা ৮৫ পয়সা। ৩০ জুন ২০২১ শেষে কোম্পানিটির এনএভিপিএস দাঁড়িয়েছে ৯৫ টাকা ৪ পয়সা। আগের হিসাব বছরের একই সময়ে শেষে যা ছিল ৯০ টাকা।
ডিএসইতে গত বৃহস্পতিবার একমি ল্যাবরেটরিজের শেয়ারের সর্বশেষ ও সমাপনী দর ছিল ৯৪ টাকা ৬০ পয়সা। গত এক বছরে শেয়ারটির সর্বনিম্ন ও সর্বোচ্চ দর ছিল যথাক্রমে ৬২ টাকা ৪০ পয়সা ও ১১৭ টাকা ৭০ পয়সা।