পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত সুহৃদ ইন্ডাষ্ট্রিজের শেয়ার কারসাজিতে কোম্পানির চেয়ারম্যান ইঞ্জিনিয়ার মাহমুদুল হাসানের নেতৃত্বে অংশগ্রহণ করেন বাংলাদেশ ব্যাংকের ৫ কর্মকর্তা। পরষ্পর যোগসাজশে বিভিন্ন সময়ে কোম্পানির ব্যবসা বৃদ্ধি ও ডিভিডেন্ড ঘোষণার নিউজ প্রচার করে শেয়ার দর মাত্রাতিরিক্ত বৃদ্ধি করা হয়। বেনামে বিভিন্ন অ্যাকাউন্টে কম দরে শেয়ার কিনে পরবর্তীতে নিউজ ব্যবহার করে উচ্চ দরে শেয়ার বিক্রি করে বিপুল পরিমাণ অর্থ পুঁজিবাজার থেকে বের করে নেন কোম্পানির চেয়ারম্যান ইঞ্জিনিয়ার মাহমুদুল হাসান।তবে এর সঙ্গে জড়িত বাংলাদেশ ব্যাংকের একজন ডিজিএমের নেতৃত্বে ৫ কর্মকর্তারা উল্টো সুহৃদের চেয়ারম্যানের কাছ থেকে প্রতারণার শিকার হয়েছেন।
সুহৃদ ইন্ডাষ্ট্রিজের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা শেয়ার কারসাজির বিস্তারিত ঘটনা বর্ননা করেছেন। নাম প্রকাশ না করার শর্তে তিনি জানান, বাংলাদেশ ব্যাংকের একজন ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজার (ডিজিএম) প্রায়ই সুহৃদের অফিসে এসে চেয়ারম্যানের সঙ্গে মিটিং করতেন। কোম্পানির চেয়ারম্যান ও বাংলাদেশ ব্যাংকের ওই কর্মকর্তার সঙ্গে শেয়ার দর বৃদ্ধি করিয়ে মার্কেট থেকে বিপুল পরিমাণ অর্থ বের করার পরিকল্পনা করেন।মূলত গেমটা ২০১৮ সালের সেপ্টেম্বর থেকে শুরু হয়। এনআরবি ব্যাংকের সঙ্গে লোন সেটেলমেন্টের মাধ্যমে কোম্পানির ইপিএস বৃদ্ধি পাবে এমন খবর ছড়িয়ে শেয়ার দর বৃদ্ধি করা হয়।
এরপর ডিভিডেন্ড ঘোষণা, ব্যবসার পরিধি বৃদ্ধি সংক্রান্ত বিভিন্ন সময়ে নিউজ দিয়ে শেয়ার দর বৃদ্ধি করা হয়। বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তারা এবং সুহৃদ ইন্ডাষ্ট্রিজের চেয়ারম্যান বেনামে বিভিন্ন অ্যাকাউন্টে বিপুল পরিমাণ শেয়ার কিনে নেন। সুহৃদের চেয়ারম্যান তাদের আশ্বস্ত করেছিলেন যে কোম্পানিটির শেয়ার দর ১০০ টাকায় নিয়ে যাবে। সেই লোভে বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তারা শেয়ার কিনতে থাকেন।
এদিকে শেয়ার দর বৃদ্ধি পেয়ে ৪০ টাকায় যখন উন্নীত হয় তখন সুহৃদের চেয়ারম্যান তাদের না জানিয়ে বেনামের অ্যাকাউন্ট থেকে শেয়ার বিক্রি করে বিপুল পরিমাণ অর্থ বের করে নেন। পরবর্তীতে বিষয়টি জানাজানি হলে গেলে তাদের নিজেদের মধ্যে অন্তর্দ্বন্দ্ব শুরু হয়। এরপর থেকেই কোম্পানির শেয়ার দরে টানা পতন হতে থাকে।
মূলত সুহৃদের চেয়ারম্যান বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তাদের যোগসাজশে শেয়ার দর কারসাজি করে নিজের ব্যক্তিগত ফায়দা হাসিল করেছে বলে জানান কোম্পানির প্রত্যক্ষদর্শী ওই ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা।এদিকে সুহৃদ ইন্ডাষ্ট্রিজের শেয়ার কারসাজির ফাঁদে পড়ে অনেক বিনিয়োগকারী লোকসানের মধ্যে পড়েছেন।
কোম্পানির বর্তমান শেয়ার দর ২১.৭০ টাকায় লেনদেন হচ্ছে। বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) বিষয়টি নিয়ে তদন্ত করলে আসল তথ্য বেরিয়ে আসবে বলে মনে করেন বাজার সংশ্লিষ্টরা।