ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) গতকাল মূল্য সূচকের মিশ্র প্রবণতায় লেনদেন শেষ হয়েছে। প্রধান মূল্যসূচক ডিএসইএক্স ১৬ পয়েন্ট ও ডিএস৩০ সূচক ১৮ পয়েন্ট বেড়েছে। বিপরীতে শূন্য দশমিক সাত পয়েন্ট কমেছে শরিয়াহ্ সূচক ডিএসইএস। এ নিয়ে তিন সপ্তাহের ১৫ কার্যদিবসের মধ্যে সূচক কমেছে কেবল দুই দিন, বেড়েছে বাকি ১৩ দিন। এছাড়া গতকাল টাকার অঙ্কে লেনদেনের পরিমাণ কিছুটা কমেছে।
পুঁজিবাজার সংশ্লিষ্টদের ভাষ্যমতে, খাতভিত্তিক বড় মূলধনি কোম্পানির শেয়ারে বিনিয়োগকারীদের আগ্রহ লক্ষ করা যাচ্ছে। এমন কোম্পানির শেয়ার ক্রয়ের কারণে ইতিবাচক ধারায় লেনদেন হচ্ছে পুঁজিবাজারে। একজন মার্চেন্ট ব্যাংকারের মতে, বেক্সিমকো, এসিআই, বেক্সিমকো ফার্মা, তিতাস গ্যাস ও ব্র্যাক ব্যাংকের মতো বড় মূলধনি কোম্পানির শেয়ারে দর বৃদ্ধি পুঁজিবাজারকে ঊর্ধ্বমুখী করতে সাহায্য করেছে।
গতকাল ডিএসইতে এক হাজার ৬০১ কোটি ২০ লাখ টাকার শেয়ার ও ইউনিট লেনদেন হয়েছে, যা আগের দিনের চেয়ে ১৩৪ কোটি ৩৭ লাখ টাকা কম। বুধবার লেনদেন হয়েছিল এক হাজার ৭৩৫ কোটি ৫৭ লাখ টাকার।
গতকালের লেনদেনেও শীর্ষে ছিল বিবিধ খাত। সবচেয়ে বেশি ভূমিকা রাখা খাতটির লেনদেন দাঁড়ায় ২১ দশমিক ৯৫ শতাংশ। এর পরেই ওষুধ খাতে লেনদেন হয়েছে ১২ দশমিক ৩৪ শতাংশ। এছাড়া প্রকৌশল খাতে ১০ দশমিক ৪৮ শতাংশ, বস্ত্র খাতে আট দশমিক ৯৭ শতাংশ এবং জ্বালানি ও বিদ্যুৎ খাতে আট দশমিক ৭৪ শতাংশ লেনদেন হয়েছে। বাকি খাতগুলোর লেনদেন পাঁচ শতাংশের নিচে ছিল।
এদিন বিবিধ খাতের বেক্সিমকো লিমিটেড ছাড়াও লেনদেনে ৫০ শতাংশের বেশি কোম্পানির শেয়ারদর বেড়েছে ওষুধ ও রসায়ন খাতের ৫৮ শতাংশ। প্রধান খাতগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি বেড়েছে সাধারণ বিমা খাতের শেয়ারদর। এই খাতের ৬৬ শতাংশ কোম্পানির দর বেড়েছে। ব্যাংক খাতের ৩৪ শতাংশ কোম্পানির শেয়ারদর কমেছে। একই হারে বেড়েছেও। আর্থিক খাতের শেয়ারদর বেড়েছে ৩১ শতাংশ। খাদ্য ও আনুষঙ্গিক খাতের ৬০ শতাংশ কোম্পানির শেয়ারদর বেড়েছে, কমেছে ৩৫ শতাংশের।
সপ্তাহের শেষ কর্মদিবসে সূচক বাড়লেও বেশিরভাগ শেয়ারের দর অবশ্য কমেছে। সব মিলিয়ে বেড়েছে ১৬২টি কোম্পানির দর, কমেছে ১৭৪টির এবং অপরিবর্তিত ছিল বাকি ৪২টির দর। দিন শেষে ১৬ পয়েন্ট বেড়ে ডিএসইএক্স সাত হাজার ১০৫ পয়েন্টে স্থির হয়।
বেক্সিমকো লিমিটেডে ভর করে বুধবার ও গতকাল সূচক বাড়ে পুঁজিবাজারে। ওয়ালটনের দরপতনের ধাক্কা সামলানোর ক্ষেত্রে এ কোম্পানিটির পাশাপাশি বেক্সিমকো ফার্মার ভূমিকাও ছিল। বেক্সিমকো গ্রুপের দুই কোম্পানির মধ্যে বেক্সিমকো লিমিটেড বাড়িয়েছে ১২ দশমিক ২৩ পয়েন্ট আর বেক্সিমকো ফার্মা বাড়িয়েছে তিন দশমিক ৩৬ পয়েন্ট। বেক্সিমকো লিমিটেড ও বেক্সিমকো ফার্মা ছাড়া তৃতীয় কোম্পানি হিসেবে সূচকে সবচেয়ে বেশি অবদান রেখেছে লিন্ডে বিডি। এই কোম্পানিটি যোগ করেছে দুই দশমিক ৪১ পয়েন্ট।
সূচক বৃদ্ধিতে ইতিবাচক অবদান রেখেছে স্কয়ার ফার্মা, কেয়া কসমেটিকস ও এসিআইও। সূচকে এই তিন কোম্পানির অবদান ছিল চার দশমিক ৪৫ পয়েন্ট। এর বাইরে ট্রাস্ট ব্যাংক শূন্য দশমিক ৮২ পয়েন্ট, উত্তরা ব্যাংক শূন্য দশমিক ৬৬ পয়েন্ট, বিকনফার্মা শূন্য দশমিক ৬১ পয়েন্ট ও সোনালী পেপার শূন্য দশমিক ৫৯ পয়েন্ট সূচক বাড়িয়েছে। সব মিলিয়ে এই ১০টি কোম্পানি সূচকে যোগ করেছে ২৪ দশমিক ৮১ পয়েন্ট।
অন্যদিকে সূচক সবচেয়ে বেশি কমিয়েছে ওয়ালটন। কোম্পানিটির অর্ধবার্ষিক আয় কমে যাওয়ার পর শেয়ারদর তিন দশমিক সাত শতাংশ কমায় সূচক কমে গেছে ২০ দশমিক ৩৭ পয়েন্ট। দ্বিতীয় অবস্থানে থাকা গ্রামীণফোন তিন দশমিক ৬৮ পয়েন্ট ও লাফার্জহোলসিম সিমেন্ট সূচক কমিয়েছে তিন দশমিক ৫৪ পয়েন্ট। তিতাস গ্যাস, ফরচুন শুজ, বাংলাদেশ সাবমেরিন কেবল, আইসিবি, ব্র্যাক ব্যাংক, জিপিএইচ ইস্পাত, সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংকও সূচক কমিয়েছে। সব মিলিয়ে এই ১০টি কোম্পানিই সূচক কমিয়েছে ৩৬ দশমিক ৪৫ পয়েন্ট।