দেশের প্রধান পুঁজিবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) গতকাল মঙ্গলবার লেনদেনের শুরু থেকেই ক্রেতারা সক্রিয় ছিলেন। কিন্তু সময় গড়ানোর সঙ্গে ক্রেতাদের সেই আধিপত্য ধরে রাখা যায়নি। ফলে কোনোরকমে সূচকের পতন রক্ষা পেয়েছে। দিন শেষে প্রধান সূচক ডিএসইএক্স বেড়েছে শূন্য দশমিক ৪৩ পয়েন্ট। তবে সার্বিকভাবে ক্রেতাদের সক্রিয়তায় টাকার অঙ্কে লেনদেনের পরিমাণ বেড়েছে।
দিনভর বিনিয়োগকারীদের সক্রিয়তায় দিন শেষে হাতবদল হয়েছে এক হাজার ৭১২ কোটি ৮৭ লাখ ৯৭ হাজার টাকার। আগের দিনে লেনদেন হয়েছিল এক হাজার ৬৮৬ কোটি টাকা। গত ডিসেম্বরে লেনদেন তলানিতে নেমে আসার পর চলতি বছর এ নিয়ে টানা ১২ কার্যদিবস হাজার কোটি টাকার বেশি লেনদেন হয়েছে পুঁজিবাজারে।
এ লেনদেনে সবচেয়ে বেশি ভূমিকা রাখে বিবিধ খাত। মোট লেনদেনের ১২ দশমিক ৭৬ শতাংশই এ খাতের। এছাড়া বস্ত্র খাতে ১২ দশমিক ২৩ শতাংশ, প্রকৌশল খাতে ১০ দশমিক ৪৯ শতাংশ, ওষুধ ও রসায়ন খাতে ৯ দশমিক ৬৭ শতাংশ, জীবন বিমা খাতে সাত দশমিক ৭১ শতাংশ, জ্বালানি বিদ্যুৎ খাতে সাত দশমিক ৭০ শতাংশ লেনদেন হয়েছে। অন্যান্য খাতের লেনদেন সাত শতাংশের নিচে ছিল।
গতকাল ডিএসইতে লেনদেন হওয়া ১৮৪ কোম্পানির শেয়ারদর বেড়েছে, কমেছে ১৪৬টির কোম্পানির ও অপরিবর্তিত ছিল ৪৮টির। তবে শুরুতে বিভিন্ন সিকিউরিটিজের দর বৃদ্ধির ফলে সূচকের উত্থান ও লেনদেনের গতি ছিল। কিন্তু শেষের দুই ঘণ্টায় সেই গতিতে ছন্দপতন হয়। দুপুর ১২ টাকা ৫২ মিনিট পর্যন্ত সূচক আগের দিনের চেয়ে ৪২ পয়েন্ট বেড়ে অবস্থান করছিল সাত হাজার ৯৭ পয়েন্টে। তবে দিন শেষে বাড়তি সূচকের প্রায় পুরোটাই কমে আসে। আগের দিনের তুলনায় শুধু শূন্য দশমিক ৪৩ পয়েন্ট যোগ হয়ে সূচক সাত হাজার ৫৫ পয়েন্টে স্থির হয়। অপর দুই সূচকের মধ্যে শরিয়াহ্ভিত্তিতে পরিচালিত কোম্পানি নিয়ে গঠিত সূচক ডিএসইএস এক পয়েন্ট বেড়েছে। অপরদিকে বিশেষ কোম্পানিগুলো নিয়ে গঠিত ব্ল–-চিপ বা ডিএস৩০ সূচক আট পয়েন্ট হ্রাস পেয়েছে।
সূচকের অবস্থান ধরে রাখতে পেরেছে বস্ত্র, প্রকৌশল, ওষুধ ও রসায়ন খাতের শেয়ারের দর বৃদ্ধির কারণে। বস্ত্র খাতে এদিন ৭১ শতাংশ বা ৪২টি কোম্পানির শেয়ারদর বেড়েছে। বিপরীতে কমেছে ৯টির। বাকি কোম্পানিগুলোর দর ছিল অপরিবর্তিত।
প্রকৌশল খাতে ৬৯ শতাংশ বা ২৯টি কোম্পানির শেয়ারদর বেড়েছে। কমেছে ২৩ শতাংশ বা ১০টি কোম্পানির। বাকিগুলোর দর ছিল অপরিবর্তিত। ওষুধ ও রসায়ন খাতে ৭৪ শতাংশ বা ২৩টি কোম্পানির শেয়ারদর বেড়েছে। অন্যান্য খাতের মধ্যে ব্যাংক খাতের ৫৩ শতাংশ কোম্পানির, আর্থিক খাতের ৪৫ শতাংশ আর মিউচুয়াল ফান্ড খাতের ৩৯ শতাংশের দর বেড়েছে।
মঙ্গলবার দিনের সর্বোচ্চ বা ৯ শতাংশের বেশি শেয়ারদর বেড়েছে সাতটি কোম্পানির। এর মধ্যে একমাত্র দেশ গার্মেন্টের শেয়ারদর বেড়েছে ১০ শতাংশ। কোম্পানিটির ১৭১ টাকার শেয়ার পৌঁছেছে ১৮৮ টাকা ১০ পয়সায়। চার কোটি ছয় লাখ টাকার দুই লাখ ২৩ হাজার ২১১টি শেয়ার হাতবদল হয়েছে।
নতুন তালিকাভুক্ত ইউনিয়ন ইন্স্যুরেন্সের দর বেড়েছে ৯ দশমিক ৯১ শতাংশ। তবে শুধু ৩৮১টি শেয়ার হাতবদল হয়েছে। সদ্য তালিকাভুক্ত হওয়া বিমা খাতের এ কোম্পানিটি গত বৃহস্পতিবার থেকে লেনদেন শুরু করে।
প্রাইম লাইফ ইন্স্যুরেন্সের দর ৯ দশমিক ৮৫ শতাংশ, শেফার্ড ইন্ডাস্ট্রিজের দর ৯ দশমিক ৬৬ শতাংশ, এসএস স্টিলের ৯ দশমিক ৬২ শতাংশ, ফারইস্ট লাইফ ইন্স্যুরেন্সের দর ৯ দশমিক ৪৭ শতাংশ, শমরিতা হসপিটালের দর বেড়েছে ৯ দশমিক ৪১ শতাংশ।
এদিন সাত শতাংশের বেশি শেয়ারদর বেড়েছে ছয়টি কোম্পানির। এর মধ্যে অগ্নি সিস্টেমসের দর সাত দশমিক ৮৬ শতাংশ, মতিন স্পিনিংয়ের শেয়ারদর সাত দশমিক ৬৬ শতাংশ আর ফার্মা এইডের দর বেড়েছে সাত দশমিক ৪৯ শতাংশ।