পুঁজিবাজারে বড় পতনে নিষ্ক্রিয় বিনিয়োগকারীর সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। সক্রিয় বিনিয়োগকারীরা শেয়ার বিক্রি করে দিয়ে নিষ্ক্রিয় হয়ে যাচ্ছেন। এ কারণে বাজারে পতন ত্বরান্বিত হচ্ছে। বিভিন্ন ব্রোকারেজ হাউস ও মার্চেন্ট ব্যাংকের শীর্ষ নির্বাহীদের সঙ্গে কথা বলেও এ তথ্যের সত্যতা পাওয়া গেছে।
পুঁজিবাজারে স্বয়ংক্রিয় পদ্ধতিতে শেয়ার ও বিও (বেনিফিশিয়ারি ওনার্স) হিসাব সংরক্ষণ করে সেন্ট্রাল ডিপজিটরি বাংলাদেশ লিমিটেড বা সিডিবিএল। সিডিবিএলের তথ্য অনুযায়ী, ১৫ থেকে ২৩ ডিসেম্বর পর্যন্ত মাত্র ছয় কার্যদিবসে প্রায় ৪৫ হাজার বিনিয়োগকারী তাঁদের বিও হিসাবে থাকা শেয়ার বিক্রি করে দিয়েছেন। তাতে পুঁজিবাজারে শেয়ারশূন্য বিও হিসাবের সংখ্যা বেড়ে গেছে।
সিডিবিএলের তথ্য অনুযায়ী, ১৫ ডিসেম্বর লেনদেন শেষে পুঁজিবাজারে শেয়ারশূন্য বিও হিসাবের সংখ্যা ছিল ৪ লাখ ২৪ হাজার ১৩৩। গত বৃহস্পতিবার শেয়ারশূন্য বিও হিসাবের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৪ লাখ ৬৯ হাজার ২৭৩। সেই হিসাবে মাত্র ছয় কার্যদিবসে শেয়ারশূন্য বিও হিসাবের
সংখ্যা বেড়েছে ৪৫ হাজার ১৪০। অর্থাৎ ছয় কার্যদিবসে ৪৫ হাজার বিও হিসাবে থাকা শেয়ার বিক্রি করে দেওয়া হয়েছে বাজারে। ফলে এসব হিসাব শেয়ারশূন্য হয়ে
এদিকে ১৫ থেকে ২৩ ডিসেম্বর পর্যন্ত ছয় কার্যদিবসে দেশের প্রধান পুঁজিবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) প্রধান সূচক ডিএসইএক্স ২৩৪ পয়েন্ট কমেছে। এর মধ্যে তিন দিন ধরে টানা কমছে ডিএসইর সূচকটি। গতকাল এক দিনেই ডিএসইএক্স সূচকটি ৭২ পয়েন্ট বা ১ শতাংশ কমে দাঁড়িয়েছে ৬ হাজার ৬৩০ পয়েন্টে। বাজারের এ পতনে বিনিয়োগকারীরা কিছুটা আতঙ্কিত হয়ে পড়েছেন। তাই অনেকে হাতে থাকা শেয়ার বিক্রি করে দিচ্ছেন।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে শীর্ষস্থানীয় এক ব্রোকারেজ হাউসের প্রধান নির্বাহী বলেন, গত এক মাসে শেয়ারের বিপরীতে বিনিয়োগকারীদের দেওয়া তাঁদের প্রতিষ্ঠানের ৫০ কোটি টাকার বেশি ঋণ ফেরত এসেছে। ঋণ নিয়ে বিনিয়োগ করা বিনিয়োগকারীদের একটি অংশ শেয়ার বিক্রি করে দিয়ে ঋণ ফেরত দিয়েছে। যাঁরা ঋণের টাকা ফেরত দিয়েছেন, তাঁরা শেয়ার বিক্রি করে দিয়ে বাজার থেকে টাকা তুলে নিয়ে গেছেন কি না জানতে চাইলে ওই নির্বাহী জানান, বেশির ভাগ বিনিয়োগকারীর হিসাবেই টাকা পড়ে আছে।
সিডিবিএলের আরেক তথ্যে দেখা যায়, ১৫ ডিসেম্বর লেনদেন শেষে শেয়ার আছে এমন বিও হিসাবের সংখ্যা ছিল ১৪ লাখ ৯১ হাজার ৩৮৫। ২৩ ডিসেম্বর দিন শেষে সেই সংখ্যা কমে দাঁড়িয়েছে ১৪ লাখ ৪৭ হাজার ৩২। অর্থাৎ শেয়ারশূন্য বিও হিসাবের সংখ্যা বাড়ার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে কমেছে শেয়ার আছে এমন বিও হিসাবের সংখ্যা। দিন শেষে বিও হিসাবে শেয়ার না থাকা মানে ওই বিও হিসাব বা বিনিয়োগকারীর বাজারে নিষ্ক্রিয় হয়ে যাওয়া। হয় তাঁরা বাজার থেকে একেবারে বিনিয়োগ তুলে নিয়েছেন, নয়তো সাময়িকভাবে বিও হিসাব খালি করে চুপচাপ বসে আছেন। যাঁরা বাজার ছেড়েছেন, তাঁরা আদৌ বাজারে ফিরবেন কি না, তা নিয়ে আছে শঙ্কা। আর যাঁরা চুপচাপ বসে আছেন, তাঁরা আবারও সুযোগ বুঝে সক্রিয় হবেন। এখন অপেক্ষার পালা এসব বিনিয়োগকারীর সক্রিয় হয়ে ওঠার।